সৃষ্টির সেবায় স্রষ্টার সেবাসেবার অর্থ কারো প্রয়োজনে এগিয়ে যাওয়া ও সাহায্য করা। আর সৃষ্টি দ্বারা মহান আল্লাহ তা’আলার সকল সৃষ্টিকে বোঝানো হয়েছে। অতএব সৃষ্টির সেবা অর্থ সৃষ্টির প্রয়োজনে দয়া ও সাহায্য নিয়ে সহযোগিতা করা এবং এমন কাজ করা, যা তাদের উপকারে আসে। সৃষ্টির সেবা জগতের মধ্যে অন্যতম উত্তম বা পূণ্যময় কাজ। মানুষ মানুষের সেবা বা সৃষ্টির সেবার মাধ্যমে ¯্রষ্টার প্রিয় হতে পারে। যে সৃষ্টির সেবা করবে, আল্লাহ নিজেই তার করুণা দ্বারা বান্দাকে আচ্ছাদন করে রাখবেন। এজন্য সৃষ্টির সেবা বান্দার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং মহৎ কাজ। আর সৃষ্টির প্রতি দয়া বা অনুগ্রহের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহ প্রাপ্ত হয়। অন্যের প্রতি দয়া করা ছাড়া দয়া পাওয়া যায় না। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘হজরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহ সে ব্যক্তির প্রতি অনুগ্রহ করেন না, যে মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে না’ -(বোখারী -৬০১৩, মুসলীম -৬৫, আবু দাউদ -৫২১৮, আহমদ -১০৬৭৩, মিশকাতুল মাসাবীহ -৪৯৪৭)।
অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসীনে কেরামগণ বলেন, কারো সামর্থ্য থাকা সত্তে¡ও যদি কেউ দয়া ও অনুগ্রহ না করে, তবে সে আল্লাহ তা’আলার পূর্ণ রহমত ও বিশেষ অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত হবে। কিন্তু সাধারণ রহমত যা সকল সৃষ্টির প্রতি অনবরত বর্ষিত হয়, তা বন্ধ হবে না। আবার কেউ কেউ বলেন, যে সৃষ্টি জীবের প্রতি দয়া করে না, সে আল্লাহর সাধারণ রহমতের অংশীদার হলেও বিশেষ রহমত থেকে বঞ্চিত হবে। তাই, আমাদের উচিৎ সৃষ্টির কল্যাণে এগিয়ে আসা। তবেই ¯্রষ্টা আমাদেরকে তাঁর বিশেষ কল্যাণ দ্বারা আবৃত করে রাখবেন।
সৃষ্টির সেবার গুরুত্ব অপরিসীম। বান্দাহ তার অন্য ভাইয়ের সাহায্যে এগিয়ে আসলে আল্লাহ তার সাহায্য ইহ ও পরকালে করে থাকেন। বান্দাহ তার ভাইয়ের কষ্ট, বিপদ মুহুর্তে সহযোগিতা করলে আল্লাহ তার কষ্ট বিপদে সহযোগিতা করেন। হাদীসে তার বর্ণনা হয়েছে এভাবে, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পার্থিব জগতে কোনো মুমিনের দুনিয়ার বিপদসমূহ থেকে একটি বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তা’আলা তার কিয়ামত দিবসের কষ্ঠসমূহ হতে একটি কষ্ঠ দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন অভাবীর একটি অভাব সহজ করে দেবে, আল্লাহ তা’আলা ইহ ও পরকালে তার সকল অভাব সহজ করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে (তার দোষ-ত্রæটি বা দেহকে) ঢেকে রাখবে, আল্লাহ তা’আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তাকে (তার দোষ-ত্রæটি বা দেহকে) ঢেকে রাখবেন। আর আল্লাহ বান্দার সাহায্যে ততক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ বান্দাহ্ তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে’ -( মুসলীম)। তাই কোন ব্যক্তি অন্য কোন মানুষের সেবায় এগিয়ে আসলে আল্লাহ তা’আলা তাকে সহযোগিতা করবেন। অন্ততপক্ষে নিজের কথা বিবেচনা করে মানবতার কল্যাণে এগিয়ে আসা আমাদের একান্ত দায়িত্ব কর্তব্য।
শুধু মানব জাতি নয়, আল্লাহর সৃষ্টির যে কোন সৃষ্টির প্রতি দয়া, মায়া দরদ দেখালে আল্লাহ তা’আলার কাছে তার প্রতিদান মিলবে। মিলবে জান্নাত। সৃষ্টির সেবার মাধ্যমে জান্নাত লাভ সহজতর হয়ে উঠে। এজন্য আমাদেরকে সৃষ্টির সেবায় মনোনিবেশ করা উচিৎ। আল্লাহর সৃষ্টি একটি কুকুরকে পানি পান করানোর জন্য এক ব্যক্তি আল্লাহর ক্ষমা প্রাপ্ত হয়। যা যে কোন বান্দার জন্য পরম সৌভাগ্যের। হাদীসের ভাষ্যমতে, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, একদা এক ব্যক্তি পথ চলতে চলতে তার ভীষণ পিপাসা লাগলো। সে একটি কূপ দেখতে পেয়ে তাতে নামলো এবং পানি পান করে উঠে আসলো। তখন সে দেখলো যে, একটি কুকুর পিপাসার্ত হয়ে হাপাচ্ছে এবং ভিজা মটি চাটছে। লোকটি মনে মনে বললো, আমি যেমন পিপাসার্ত হয়েছিলাম, কুকুরটিরও তদ্রæপ পিপাসা লেগেছে। সে পূণরায় কূপে নামলো এবং তার মোজা ভর্তি করে পানি তুলে তা নিজের দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে উপরে আসলো এবং কুকুরটিকে তা পান করালো। আল্লাহ তার এই কাজ কবুল করলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন। সাহাবীহণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাহ! পশুর জন্যও কি আমাদেরকে সওয়াব দেয়া হবে? তিনি বললেন, প্রতিটি প্রাণধারী সৃষ্টির সেবার জন্য সওয়াব রয়েছে’- (বোখারী, মুসলীম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, আহমদ, ইবনে হিব্বান)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন