শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ডাল উৎপাদনে পিছিয়ে দেশ উৎপাদন বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগানোর তাগিদ

প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : দেশে ডালের আবাদ ও উৎপাদন কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও এখনো তা চাহিদার দুই-তৃতীয়াংশেরও নিচে। ফলে প্রতি বছরই বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে ডাল আমদানি করতে হচ্ছে। বিশেষ করে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ছোলা ও মশুর ডালের সরবারহ অনেকটা আমদানি নির্ভর। অথচ মাঠ পর্যায়ে উন্নত ডাল বীজ সরবরাহের মাধ্যমে আবাদ সম্প্রসারণ করতে পারলে পুষ্টিকর এ খাদ্য ফসল আমদানির কোন প্রয়োজনই হবে না বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদগণ। দেশে এখনো প্রতি বছর ডালের আবাদকৃত জমির পরিমান ৭ লাখ হেক্টরের কিছু বেশি-কম। উৎপাদনও ৮ লাখ টনের নিচে। এখনো প্রতিবেশী নেপালসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ মশুর ও ছোলা ডাল আমদানি করতে হচ্ছে।
কৃষি বিজ্ঞানীদের ভাষায়- ‘গরিবের গোশত’ বলে খ্যাত ডাল জাতীয় খাদ্য ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। চলতি মওসুমে দেশে মশুর, মুগ, খেসারি, ছোলা, মটর, অড়হড় ও ফেলন আবাদের মাধ্যমে প্রায় ৮ লাখ টন ডাল জাতীয় ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর-ডিএই’র মতে ডাল আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে কৃষকগণ।
বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলেও ডালের আবাদ মোটামুটি সন্তোষজনক পর্যায়ে। সারা দেশে ২ লাখ ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে এবার খেসারি আবাদের লক্ষ্য নির্ধারিত থাকলেও বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলাতেই প্রায় দেড় লাখ হেক্টরে এর আবাদ হয়। দেশে চলতি মওসুমে প্রায় ১.৩৪ লাখ হেক্টরে মুগ ডাল আবাদের লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে। যার মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতেই লক্ষাধিক হেক্টরে এ ডাল জাতীয় ফসল আবাদ হচ্ছে। এছাড়াও দেশে চলতি মওসুমে যে প্রায় ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফেলন ডালের আবাদ হয়েছে, তার মধ্যে বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতেই আবাদের পরিমাণ প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর ।
ডাল আমাদের মত নিম্ন-মধ্যবিত্তের দেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী খাদ্য ফসল হিসেবে বিবেচিত। এ ফসলে পুষ্টিমান অত্যন্ত উন্নত। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, ডাল ফসলে পুষ্টির পরিমাণ ২০Ñ৩০% পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভাতের সাথে মিশিয়ে খেলে ডালের পুষ্টি আরো বৃদ্ধি পায় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি’র বিজ্ঞানীগণ। বারি’র বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন ডাল বীজে পুষ্টি মান যেমনি যথেষ্ট উন্নত, তেমনি এর উৎপাদনও সনাতন জাতের চেয়ে অনেক বেশি। বারি’র বিজ্ঞানীগণ ইতোমধ্যে খেসারির ৩টি উন্নতজাত উদ্ভাবন করেছেন। যার উৎপাদন হেক্টর প্রতি ১.৪ টন থেকে দু’টন পর্যন্ত। আর বারি উদ্ভাবিত খেসারি ডালে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর কোন পদার্থ নেই। পুষ্টির পরিমাণ ২৪Ñ২৬%। বারি ইতোমধ্যে মশুরি ডালেরও ৭টি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। এ সব মশুর ডালের উৎপাদনও হেক্টর প্রতি ১.৩০ টন পর্যন্ত। এছাড়াও বারি’র বিজ্ঞানীগণ ছোলা ডালের ৯টি, মাশকালাইর ৩টি, মুগ ডালের ৫টি ও ফেলন ডালের ২টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন।
ডালের আবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের কৃষি-অর্থনীতি সমৃদ্ধ করার অনেক সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীগণ। তবে এক্ষেত্রে আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত উন্নত জাতের ডাল বীজ ও এর উৎপাদন প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছে হস্তান্তরের কোন বিকল্প নেই। তবে এ লক্ষ্যে ডিএই, বিএডিসি ও বারি’র যৌথ উদ্যোগে গ্রহণেরও তাগিদ দিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদগণ। প্রয়োজনে ডাল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিবিড় ও আধা-নিবিড় কার্যক্রম গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনারও তাগিদ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে খেসারি ও দেশের উপকূলীয় চর এলাকায় মুগ ডাল আবাদ আরো সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। এসব এলাকায় উচ্চ ফলনশীল বীজ ও উন্নœত আবাদ প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পারলে এ দুটি ডাল ফসলের উৎপাদন অন্তত দেড়গুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব বলেও মনে করছেন কৃষি বিজ্ঞানীগণ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন