শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নির্বাচনী সহিংসতা - বরিশালে আ.লীগ দু’গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ : আহত ৬

প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : গতকাল ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বরিশাল, শেরপুর, কেরানীগঞ্জ, বরগুনায় ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বরিশালে আ.লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ১ জন নিহত হয়েছে।
বরিশাল ব্যুরো জানান, বরিশালের মেহেদিগঞ্জ উপজেলার ভাষানচর গ্রামে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে সমির চারু নামের একজন নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষের পর পুলিশ যথারীতি অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল (বুধবার) সকাল সাড়ে ৮টায় এ সংঘর্ষে লিপ্ত উভয়পক্ষই আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে জানা গেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। নিহত সমির চারু সদস্য প্রার্থী মো. সবুজের নির্বাচনী কর্মী এবং বড়ইয়া গ্রামের রাজ্জাক চারুর ছেলে।
এদিকে, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর নেতৃত্বে পরিচালিত হামলায় আহত হয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনীত হাতুরী প্রতীকের প্রার্থীর ৫ নির্বাচনী কর্মী।
মেহেদিগঞ্জের ভাষানচর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন নজরুল ইসলাম চুন্নু এবং বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন মজিবুর রহমান প্যাদা। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মো. ফরিদ চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল ইসলাম চুন্নুর অনুসারী এবং মুজিবুর রহমান প্যাদার অনুসারী সদস্য প্রার্থী হচ্ছেন মো. সবুজ। গতকাল সকালে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলা চালায়। এতে নিহত হয়েছেন সদস্য প্রার্থী সবুজের কর্মী সমির চারু। গুরুতর আহত গৃহবধূ পারভীন বেগমকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংঘর্ষের পরে সদস্য প্রার্থী সবুজের সমর্থকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সংঘর্ষের জন্য দায়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাবউদ্দিন ফকির ও সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল খানকে আটক করে। পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের কবল থেকে তাদের উদ্ধার করে।
অপরদিকে, উজিরপুরের হারতা ইউনিয়নে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী বিমল করাতি অভিযোগ করেন, বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তার বোনসহ নির্বাচনী কর্মীরা ইউনিয়নের কুচিয়ার পাড় এলাকায় গণসংযোগ করতে যান। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হরেন রায়ের নেতৃত্বে তার সমর্থকরা ওয়ার্কার্স পার্টির কর্মীদের উপর হামলা চালায়। এতে আহত হয়েছে প্রার্থীর বোন রাশমনি বালাসহ সুবাস রায়, অসীম হালদার, ভক্ত বিশ্বাস ও লিটন হালদার। তবে নৌকার প্রার্থী হরেন রায় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, তার মামাতো ভাই ভক্ত বিশ্বাস হাতুড়ি প্রতীকের পক্ষে ভোট চাওয়ায় তিনি তাকে শাসিয়েছেন মাত্র।
শেরপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবেড় ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হাসানুজ্জামান রিয়াদের পথসভায় হামলা চালিয়েছে নৌকা সমর্থিতরা। ওই ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এছাড়াও নৌকা সমর্থিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর ৬টি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে। ১৫ মার্চ মঙ্গলবার রাতে ওই ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় বুধবার উভয়পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী, ছাত্রলীগ নেতা হাসানুজ্জামান রিয়াদ তার মোটরসাইকেল প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণা শেষে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাঘবেড় বাজারের পথসভায় সমাপনী বক্তব্য রাখছিলেন। ওই সময় নৌকা সমর্থিতদের হুমকি-ধামকিতে কাউকে ভয় না পেয়ে নির্বাচনের দিন পাল্টা জবাব দিতে নিজের অবস্থানের শক্ত জানান দিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। এতে নৌকা সমর্থিত স্থানীয় এক মুরব্বী ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ করলে রিয়াদ সমর্থিত এককর্মী তার সাথে অশালীন আচরণ করে। ফলে কাছেই উপস্থিত নৌকা সমর্থিত কর্মীরা রিয়াদের সভায় লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। হামলায় প্রার্থী রিয়াদসহ উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়। এর মধ্যে গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় রিয়াদের ছোট ভাই আরিফ (২৫), কর্মী আনোয়ার (২২) ইয়াকুব (২৪) ও আরিফ হোসেন (১৮)কে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এছাড়াও হামলা চালাতে গিয়ে আহত নৌকা সমর্থিত কর্মী হাবিবুর রহমান লিটন (৩৬)কেও একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারণার সময় গতকাল বুধবার দুপুরে খেজুরবাগ এলাকায় শুভাঢ্যা ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হায়াৎ আলী ভা-ারির সমর্থক ও আ.লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ইকবাল হোসেনের সমর্থকদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইকবাল হোসেনের ছোট ভাই সোহেল, ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক ইমারত হোসেন ও বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী হায়াৎ আলী ভা-ারির ছেলে আসাদুজ্জামান সুমন, সমর্থক মন্টু, মোকশেদসহ কমপক্ষে ৬ জন গুরুতর আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালীন সময় ৩ রাউন্ড গুলি ও ২টি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী ইকবাল হোসেন বলেন, শুভাঢ্যা ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক ইমারত হোসেন ও তার ছোট ভাই সোহেল লোকজন নিয়ে খেজুরবাগ এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ করছিল। এ সময় হায়াৎ আলীর লোকজন তাদের উপর হামলা চালিয়ে তাদের আহত করে। এই ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। অপরদিকে, বিএনপির প্রার্থীয় হায়াৎ আলী বলেন, ইকবাল চেয়ারম্যানের লোকজন তার ছেলের উপর প্রথমে হামলা চালিয়েছে। এই নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এই ঘটনায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি।
বামনা (বরগুনা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বরগুনার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয় ৫ জন। বিদ্রোহী প্রার্থী সাইদুর রহমান সবুজের ৩ সমর্থক আহত হয়। এরা হলেন- আলতাফ মোল্লা, হাসিব ও তাওহিদ। হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের রুবেল তালুকদার ও শামীম নামের ২ কর্মী আহত হয়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করে উভয়পক্ষের সমর্থকরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন