শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় আটক পাঁচ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ

প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সিআইডির তদন্ত টিম গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে দিনভর এ বৈঠক হয়। তারা ব্যাংকেই কয়েকজনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এছাড়া আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ৫ কর্মকর্তাকে। মামলার বাদী, সদ্য পদত্যাগকারী গভর্নর ড. আতিউর রহমানসহ বিদায়ী দুই ডেপুটি গভর্নরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ তথ্য জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করার পর মামলার তদন্তভার সিআইডিকে দেয়া হলে তারা তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেলেও তদন্তের স্বার্থে তা সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করা হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন সিআইডি কর্মকর্তারা। সিআইডির পাশাপাশি ছায়াতদন্ত করছে ডিবি ও র‌্যাব।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আটক হতে পারেন ওই মামলারই বাদী জোবায়ের বিন হুদা, যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিলিং শাখার প্রধান যুগ্ম পরিচালক (জেডি)। অর্থ চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২-১ দিনের মধ্যেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হবে। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরি যাওয়ার ৪০ দিন পর গতকালই মামলাটি করেছিলেন জোবায়ের বিন হুদা। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ছয় কর্মকর্তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
ব্যাংকের অসমর্থিত একটি সূত্র দাবি করেছে, মঙ্গলবার মতিঝিল এলাকা থেকে ডিলিং রুম ও আইটি বিভাগের ৪ কর্মকর্তাকে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল আরো এক কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। তবে সিআইডির দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেননি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘মামলার এজাহারে ব্যাংকের চুরির ঘটনাটি সিআইডি তদন্ত করছে। এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করেনি।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে যায় সিআইডির একটি দল। দলে ছিলেন সিআইডির অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক শাহ আলম, এসএস ক্রাইম রায়হান হোসেনসহ ৫ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তারা ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এ ঘটনায় সদ্য পদত্যাগ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান এবং অপসারিত দুই ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম ও নাজনীন সুলতানাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিআইডি।
সূত্র জানায়, এত বড় একটি ঘটনা জানাজানিতে কেন বিলম্ব করা হয়েছেÑবিষয়টি জানতে গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কয়েক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সিআইডির পাশাপাশি ঘটনাটির ছায়াতদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটি) এবং র‌্যাবের গোয়েন্দা টিম।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪ কর্মকর্তাকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তারা হলেন ডিলিং রুম শাখা ও আইটি কর্মকর্তা। একটি গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে তাদের নাম জানা যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় সিআইডি ইলেকট্রনিক এভিডেন্সকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এটা কোনো সাধারণ মামলা নয়। তাই তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যা যা করণীয় তাই করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ওই চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চার কর্মকর্তাকে আটক করে। এ ক্ষেত্রে সদ্য পদত্যাগ করা গভর্নর ড. আতিউর রহমান এবং অপসারণ করা দুই ডেপুটি গভর্নর আবুল কাসেম ও নাজনীন সুলতানাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদেরকে মঙ্গলবার আটক করা হয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাক অব দ্য ডিলিং রুম শাখায় এ ঘটনার সূত্রপাত হলেও এর সঙ্গে আইটি বা সিস্টেম নিয়ে যারা কাজ করেন তাদেরও কেউ কেউ জড়িত। কেউ কেউ বলছেন, এই কাজের সঙ্গে একজন ডেপুটি গভর্নরও জড়িত আছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন বলে ব্যাংকের লোকজন মনে করেন।
প্রযুক্তিগত এবং ইলেকট্রনিক এভিডেন্স খতিয়ে দেখে তারা এ বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই চার কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। সাধারণত গোয়েন্দারা কোনো আসামির কাছ থেকে সঠিক তথ্য বের করে আনতে যে ধরনের জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল প্রয়োগ করে থাকেন, সে ধরনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আটককৃতদের কাছ থেকে তথ্য উদ্ধার করা হবে।
এ প্রসঙ্গে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী বলেন, তদন্তের স্বার্থে যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে। সে যে পদমর্যাদার কর্মকর্তাই হোক। গতকাল আমরা সারা দিনই বাংলাদেশ ব্যাংকে ছিলাম। তদন্ত চলছে। এত বড় একটি ঘটনার সকল তথ্য প্রমাণ বের করতে সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক শাহ আলমের নেতৃত্বে সিআইডির একটি তদন্ত দল বাংলাদেশ ব্যাংকে তদন্ত শুরু করেছেন। তদন্ত শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের জানানো হতে পারে।
ব্যাংকের অপর একটি সূত্র জানায়, ওই কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিদেরও ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।
সূত্রটি আরো জানায়, ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। সিআইডির সঙ্গে সরকারের একাধিক সংস্থা তদন্ত করছে। সে ক্ষেত্রে এ ঘটনায় কারা কীভাবে জড়িত, তা শিগগির বেরিয়ে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Jamal ১৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০১ পিএম says : 0
এ টাকা জনগণের টাকা এই টাকার হিসাব একদিন এই সরকারকেই দিতে হবে , কোন নাটক চলবে না, এই টাকা কোথায় গিয়েছে কারা পাচার করেছে বাংলার জনগন তা বুঝে , অতএব কোনো নাটক চলবে না, আমাদের টাকা চাই ।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন