শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কাল ইসির সঙ্গে সংলাপ সংসদ বিলুপ্ত-সেনা মোতায়েনসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দেবে বিএনপি

| প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম


পঞ্চায়েত হাবিব : নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাথে আগামীকাল সংলাপে বসবে বিএনপি। এ সংলাপে দলটি জাতীয় সংসদের আগামী একাদশ নির্বাচনের সময় বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করা, সীমানা সংশোধন, বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন, সকল রাজনৈতিক দলের জন্য লেভেলে প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে এমন প্রস্তাবও দেবে বিএনপি। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন, মাঠপর্যায়ে কর্মরত জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের প্রত্যাহার করে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দেবে বিএনপি। ইতোমধ্যে সংলাপের প্রস্তাবনা চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। আগামীকাল নির্বাচন কমিশনের এ সংলাপে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেবে বলে জানা গেছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী ১৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে বসবে। গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইসির সঙ্গে সংলাপের কৌশল ও প্রতিনিধিদলের তালিকা ঠিক করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইনকিলাবকে বলেন, আমরা বড় টিম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে যাব এবং সেখানে গিয়ে আমরা লিখিতভাবে আমাদের সব প্রস্তাব তাদের সামনে তুলব। আমরা বর্তমান সংসদ বিলুপ্তির কথা সুস্পষ্টভাবে বলব। সেনাবাহিনী নিয়োগের কথা আমরা সুস্পষ্টভাবে বলব। নির্বাচনকালীন যখন তফসিল ঘোষণা হবে, তখন প্রশাসনকে যে ব্যবস্থাগুলো নিতে হবে সে বিষয়েও বলব। আরপিওর কোথায় সমস্যা আছে, সেটি বলব। ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম চালু করা উচিত এবং পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম থাকা উচিত-এসব নিয়ে বিস্তারিত আমাদের প্রস্তাবনায় থাকবে। ইসির কাছে তুলে ধরা আমাদের এ প্রস্তাব যুগান্তকারী হবে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে থাকা এবং সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা না দেয়া এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেবে আওয়ামী লীগ। ইসির সঙ্গে সংলাপ সামনে রেখে দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতা দুই দফা বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে ইসির সঙ্গে সংলাপে যেসব প্রস্তাব দেয়া হবে, সেগুলোর খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। ২০০৮ সালে সীমানা নিয়ে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় পেয়েছে। তা ভেঙে গেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আওয়ামী লীগ। এদিকে সীমানা পুনর্নিধারণের লক্ষ্যে স¤প্রতি নির্বাচন কমিশন একটি আইনের খসড়া করেছে। এতে জনসংখ্যা, ভোটারসংখ্যা ও মোট আয়তনের সমন্বয়ের মাধ্যমে সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণের পরিকল্পনার কথা বলেছে ইসি। ইসি সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে সীমানা পুননির্ধারণ করার ফলে ১৩৩টি আসন ব্যাপক ভাঙাগড়ায় পড়ে যায়। ৯টি জেলার একটি করে আসন কমে যায়। এদিকে বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোটের অন্য দলগুলো সীমানা পুননির্ধারণের পক্ষে। বিএনপি মনে করে, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে করা সীমানা পুননির্ধারণের ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার পক্ষে। গত ১৮ জুন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিএনপি সংলাপে অংশ নিচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন দলের মুখপাত্র ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন কমিশনের নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন করা এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সহায়ক সরকারের বিষয়ে তাদেরকে প্রস্তাব করা হতে পারে। গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, আমরা আগামী ১৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে যাচ্ছি। বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশগ্রহণ করবে। তবে সংলাপে কোন বিষয়ের উপর প্রস্তাব করা হবে সে বিষয়ে অবশ্য রিজভী কিছু বলেননি।
জানা গেছে, আগামী রোববার নির্বাচন কমিশনে এ সংলাপে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেবে। নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) স্বাধীন ভ‚মিকায় দেখতে চায় বিএনপি। তাদের অভিমত, দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন যদি কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি না করে পুরোপুরি সংবিধান ও আইনের অধীন থাকে, তা হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় হলেও তারা এটি ইসির সামনে তুলে ধরবেন। বিএনপির প্রস্তাবগুলো হচ্ছেÑ নির্বাচনের সাতদিন আগে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন, নির্বাচনে সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, ভোটার অনুপাতে সংসদীয় সীমানা পুনর্বিন্যাস, ইভিএম বাতিল করা, নির্বাচনে অবৈধ অর্থ, কালো টাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার বন্ধ করা, নির্বাচনপ্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ এবং নির্বাচন কমিশনের সাথে আসন্ন সংলাপে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন, নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচন কমিশনকে নিজস্ব সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং সকল পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তা অর্থাৎ রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আপিল কর্তৃপ, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তা, রেজিস্ট্রেশন অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসার, রিভাইজিং অথরিটি, নির্বাচন কাজে নিয়োজিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রতি প্রকাশ্য আনুগত্য পোষণকারী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে প্রত্যাহার এবং প্রত্যাহারকৃত কর্মকর্তাদের যে কোনো ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও তাদের মাঠপর্যায়ের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী বিগত ২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্নপর্যায়ের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে গণপ্রতনিধিত্ব আদেশ ও অন্যান্য নির্বাচনী বিধিবিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন, তাদের তালিকা প্রণয়ন করতে হবে এবং তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে হবে। প্রেষণে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত প্রকাশ্য রাজনৈতিক মতাবলম্বী নির্বাচনী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে কমিশনের নিজস্ব সচিবালয় গঠন, কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণ, কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা, দলীয় মনোভাবাপন্ন নির্বাচনী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের অপসারণ, নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার পর থেকে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ পর্যন্ত সরকারের স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং নতুন ভোটার তালিকায় নিবন্ধীকরণযোগ্য সব নাগরিক যেমনÑ রাজনৈতিক নেতাকর্মী, কারাবন্দী, নানা মামলায় যুক্ত ব্যক্তি ও নেতাকর্মীদের ভোটার করার বিষয়ে প্রস্তাব থাকবে বিএনপির। এর বাইরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাতদিন আগে আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং বিদেশি রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োজিত পর্যবেক্ষকদের নাম ও তালিকা প্রকাশ করার প্রস্তাবও থাকতে পারে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন