সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ইসলামিক স্টেট নির্মূলের আগেই ইরাকে গেরিলা যুদ্ধের আশঙ্কা

দি গার্ডিয়ান | প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইসলামিক স্টেট (আইএস) ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল। বেশ খানিকটা এগিয়েও গিয়েছিল সে স্বপ্ন পূরণের পথে। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন এখন বিলীন। কারণ তারা নির্মূলপ্রায়। তবে আইএস নামক দুঃস্বপ্ন থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়ার পাওয়ার আগেই ইরাকে নতুন গেরিলা যুদ্ধের আশংকা দেখা দিয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আইএস সন্ত্রাসী গ্রুপ তাদের শেষ শক্তঘাঁটি সিরিয়ার রাক্কা থেকে উৎখাত হওয়ার মাত্র দিন কয়েক আগে ও ইরাকে তাদের শেষ শক্তঘাঁটি মসুল থেকে বিতাড়িত হওয়ার দু’মাস পর আইএস বিরোধী পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন জোটের যখন পরস্পরকে অভিনন্দিত করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সে সময় তার বদলে আইএসকে বিতাড়িত করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালনকারী দু’টি স্থল বাহিনী পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। ওয়াশিংটন কর্তৃক অস্ত্রসজ্জিত, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও সমর্থিত এ দু’ বাহিনীর কারণে ইরাকের তেল শহর কিরকুকে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ইরাকি কুর্দিদের স্বাধীনতার পক্ষে গণভোট অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৬ অক্টোবরের পূর্ববর্তী ২৪ ঘটটায় ইরাক ও ইরানের কাছ থেকে আসা কঠোর সামরিক জবাব এক নয়া যুদ্ধের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে যা ইরাকের ঐক্য ধ্বংস করতে পারে। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার জন্য কুর্দিদের গণেেভাটের আয়োজনের বিরোধিতা করেছে প্রতিটি পশ্চিমা দেশই। বলা হচ্ছে, কুর্দিস্তানের অংশ বিশেষ তুরস্ক বা ইরান দখল করে রাখলে তা আইএসের খিলাফতের স্বপ্ন সম্পূর্ণ বিলীন হওয়ার আগেই গেরিলা যুদ্ধের দুঃস্বপ্ন সৃষ্টি করবে।
ইরাকে নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতার পথে কুর্দিদের পা ফেলা ইতোমধ্যেই ইরাকের অধিকার বঞ্চিত সুন্নিদের মাঝে আলোচনাকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। আইএস ২০১৪ সালে ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে। আইএসের যোদ্ধাদের সবাই ছিল সুন্নি। এখন সে খিলাফত নির্মূলপ্রায়।
সুন্নিদের যুক্তি হচ্ছে, কুর্দিদের সাথে মিলে তারা ইরাকি জনসংখ্যার ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ। কুর্দিরা যদি ইরাক থেকে আলাদা হয়ে যায় তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়াদের পাশে তারা ক্ষুদ্র গোষ্ঠিতে পরিণত হেেব যা তাদেরকে গোষ্ঠিগত নিপীড়নের ক্ষেত্রে আরো দুর্বল করে তুলবে। সে ক্ষেত্রে ইরাকে তাদের ভবিষ্য নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।
বাগদাদ সরকারের উপর ইরানের প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। জান গেছে, ইরানি বিপ্লবী গার্ডের নেতা জেনারেল কাসেম সোলায়মানি তিন দিন ধরে বাগদাদে রয়েছেন।
কুর্দিস্তান বিষয়ক সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপের যুক্তরাজ্য চেয়ারম্যান জ্যাক লোপ্রেস্টি বলেন, কিরকুকে বিরোধের পরিণতি বিপর্যয়কর হতে পারে। তিনি বলেন, ইরানের অনুগত মিলিশিয়ারা যদি আমেরিকার অস্ত্র আমাদের গুুত্বপূর্ণ মিত্র পেশমের্গার বিরুদ্ধে ব্যবহার করে তবে তা কুর্দি -আরব সম্পর্কের জন্য বিপর্যয়কর হবে। এটা ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ার জন্য হবে সম্পূর্ণরূপে দায়িত্ব পরিত্যাগ যাদের বাগদাদ-আরবিল সমস্যার শান্তিূপূর্ণ সমাধানে কোনো আগ্রহ নেই। তিনি বলেন, ইরাকের অভ্যন্তরীণ বিরোধকে ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া ইরানের নিজ স্বার্থে ব্যবহার করতে দেয়া পাশ্চাত্য চুপ করে বসে দেখতে পারে না। হতে পারে যে দু’পক্ষেই ভুল হিসাব-নিকাশ হয়েছে। কেউ কেউ কুর্দি গণভোটকে তাৎক্ষণিক ভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা নয় বলে ব্যাখ্যা করেছেন, বরং বাগদাদের সাথে দর-কষাকষির আরেক উপকরণ হিসেবেই এ গণভোটকে দেখছেন। তবে কুর্দি জাতীয়তাবাদ তাদের নেতৃত্বকে ইচ্ছার বাইরে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
কিরকুকের মত বিরোধপূর্ণ এলাকার আনুষ্ঠানিক অন্তর্ভুক্তির কারণে এ বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব নয় বলে ধারণা। কিরকুক কুর্দি ও আরবদের কাছে এক আবেগপূর্ণ বিষয় যার তেল সম্পদ ও কৌশলগত অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ।
কুর্দিরা তুরস্কের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে অতি আশাবাদী হয়ে উঠতে পারে । তারা খাবতে পারে যে কুর্দি তেলের উপর আংকারার ণির্ভরশীলতা এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৃষ্ট ব্যাপকভিত্তিক বাণিজ্য সম্পর্ক র্্েরডিন্ট রজব তৈয়ব এরদোগানকে নমনীয় করার জন্য যথেষ্ট।
কুর্দিরা বাগদাদের উপর ইরান ও তাদের অনুগত পপুলার মোবলাইজেশন ইউনিটের প্রভাব সম্পর্কে অবমূল্যায়ন করে থাকতে পারে।
এ বিষয়ে পশ্চিমা ক‚টনীতি খুব সামান্য ও এক্ষেত্রে অনেক দেরী হয়ে গেছে। আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইরাকি সেনাবাহিনীর শোচনীয় ব্যর্থতা দেখে বারাক ওবামার প্রশাসন আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই ও তাদের পরাজিত করার জন্য কুর্দি পেশমের্গাকে লাখ লাখ ডলার দেয়। তারা তাদের সক্ষমতার পরিচয় দেয় ও যুক্তরাষ্ট্রের বড় বন্ধু হয়ে ওঠে। কিন্তু মার্কিনী ও ব্রিটিশরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে যে স্বাধীনতার জন্য কুর্দিদের গণভোটের আয়োজন অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে ও তা আগাম পদক্ষেপ হবে। তবে তারা এটাও দেখতে পায় যে কুর্দি নেতাদের এ থেকে নিবৃত্ত করার মত ক্ষমতাও তাদের নেই।
শোনা যায় যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন অমিমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার দরজা খোলার জন্য ২৫ সেপ্টেম্বর আরবিলে গণভোট অনুষ্ঠানের দু’দিন আগে অর্থাৎ ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। যুক্তরাজ্য তার সাথে ছিল। যদি বাগদাদ এতে সদিচ্ছা প্রদর্শন না করত টিলারসন তখন বলতেন যে আমরা গণভোটের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করি।
কুর্দিরা বলছে, এর আগেও তারা এ ধরনের কথা শুনেছে এবং গণভোটের কোনো তারিখ প্রস্তাব করা হয়নি। কুর্দিদের পরিপ্রেক্ষিত হচ্ছে বাগদাদের ক্ষমতাসীন শিয়া শাসক শ্রেণি সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন এবং কিরকুকের তেল রাজস্বের প্রায় পুরোটাই চায়।
যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরাকের অভ্যন্তরে তার দু’মিত্রের মধ্যে যুদ্ধ ঠেকাতে চায় তাহলে তাকে পিছনে যেতে হবে ও ২৩ সেপ্টেম্বরের চিঠির অঙ্গীকার রক্ষা করতে হবে। তা না হলে তাকে তার চোখের সামনে আইএস বিরোধী জোটে ভাঙন দেখতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন