ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের অবদানের কথা স্বীকার করে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘‘৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির পেছনে অবদান রয়েছে আমার বন্ধু দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের।’’ গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প নিয়ে এসব কথা বলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী। সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের ৩৬-৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন মাদরাসাগুলোতে লেখাপড়া করে। এর মধ্যে ফাজিল ও কামিল যথাক্রমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের। এ বিশাল শিক্ষার্থীর সিলেবাস কীভাবে আসে, কোথা থেকে আসে, লেখাপড়ার মান কী ধরনের হওয়া উচিত তা দেখাশোনার জন্য কোন অথরিটি (কর্তৃপক্ষ) ছিল না। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থাকে। এর আগে ফাজিল ও কামিলের দেখা-শোনার দায়িত্ব ছিল কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের, যেটি সাধারণ শিক্ষার বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পাঠদান করে আসছে। বিষয়টি ভালো ছিল না, দেখতেও অসম্পূর্ণ দেখা যেত। যেহেতু এখানে (মাদরাসা শিক্ষায়) অসংখ্য ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করে তারা যেন আরো ভালো ভাবে লেখাপড়া করতে পারে সেজন্য ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রকল্প নেয়া হয়েছে।’
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন, আধুনিকায়ন এবং দেশের সব ফাজিল ও কামিল মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হবে ঢাকার কেরানীগঞ্জে। ‘ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন’ শীর্ষক এ প্রকল্প ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে নতুন স্থায়ী ক্যাম্পাসে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সূত্র মতে, মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন, আধুনিকায়ন এবং দেশের সকল ফাজিল ও কামিল মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় স্থাপিত দেশের প্রথম ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হতে যাচ্ছে ঢাকার কেরানীগঞ্জে। ‘ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় ২০ দশমিক ১৫ একর জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বর্তমানে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস রয়েছে রাজধানীর ধানমন্ডি ও বসিলাতে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই প্রকল্পটির অধীনে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১০তলা প্রশাসনিক ভবন ও ছয়তলা একাডেমিক ভবন ছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য থাকছে আবাসিক সুবিধা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত হবে আধুনিক ডরমেটরি। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একটি ডরমেটরি ও দু’টি স্টাফ কোয়ার্টার, শিক্ষার্থীদের দু’টি ডরমেটরি, একটি অডিটোরিয়াম, ভিসি’র বাংলো এবং রেজিষ্ট্রারের আবাসিক ভবন।
সূত্র জানায়, দেশে আরবি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতায় মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ কম থাকায় আধুনিক বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে উচ্চস্তরের মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা হবে। ফলে এখানে উচ্চশিক্ষা নিয়ে কোনো শিক্ষার্থী বেকার থাকবেন না। নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর দারিদ্র্য বিমোচনও হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান (শিক্ষা) খলিলুর রহমান খান বলেন, দেশের সকল অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের সুবিধা বিবেচনায় ঢাকার কাছের কেরানীগঞ্জে স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়া হচ্ছে। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় হবে ট্রেনিং ইনস্টিটিউটও, যেখানে শিক্ষার্থীদের তথ্য ও প্রযুক্তি শিক্ষা দেওয়া হবে। দেশে-বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে, যেন কোনো শিক্ষার্থী বেকার না থাকেন। ‘আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণও করবে বিশ্ববিদ্যালয়টি’।
একনেক-এর চুড়ান্ত অনুমোদন পেল বেকুঠিয়া সেতু : দেশের সব সমুদ্র বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে
নাছিম উল আলম : অনুদান চুক্তি স্বাক্ষরের বছরখানেক বাদে চট্টগ্রাম-বরিশাল-মোংলা-খুলনা মহাসড়কের পিরোজপুরের বেকুঠিয়াতে কঁচা নদীর ওপর ‘৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেত’ু নির্মাণ প্রকল্পটি গতকাল একনেক-এর অনুমোদন লাভ করল। প্রায় ৮২৫কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ এ সেতুটি নির্মাণে চীন সরকার প্রায় ৬৪৬কোটি টাকা অনুদান দিচ্ছে। এ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকারের ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৭০কোটি টাকা। গত বছর চীনা প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে সেতুটি নির্মাণে অনুদান সংক্রান্ত চূক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। চীন অনুদানে ১হাজার ৪৯৩মিটার দীর্ঘ এ মৈত্রী সেতুটি নির্মিত হলে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগ সহ দেশের সবগুলো সমুদ্র বন্দরের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। এমনকি এরফলে চট্টগ্রামের সাথে বরিশাল, খুলনা ও মোংলার সড়ক পথে দুরত্বও প্রায় অর্ধেক হৃাস পাবার পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর যানবাহনের চাপও কিছুটা কমবে।
সেতুটি নির্মাণে চীন সরকার ইতোমধ্যে পরমর্শক নিয়োগ সহ নকশা প্রনয়ন সম্পন্ন করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানও নিয়োগ করেছে। চীনা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান গত মার্চেই সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করার লক্ষে প্রয়াজনীয়৩০হেক্টর জমি জমি হস্তান্তরের অনুরোধ করলেও নানা প্রশাসনিক জটিলতায় এতদিনেও তা সম্পন্ন হয়নি। সেতুটির সংযোগ সড়ক সহ প্রকল্প এলাকায় ওয়ার্কসেড নির্মাণে ঐ জমির প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সরকারী তরফ থেকে জমি হস্তান্তরে বিলম্বের কারণে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু বছর খানেক পিছিয়ে যাচ্ছে। মূলত প্রকল্পটি একনেক-এর অনুমোদন লাভ না করায়ই এতদিন ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি বিলম্বিত হয়। সরকারী বিধান অনুযায়ী কোন প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করার আগে তা সরকারের চুড়ান্ত অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বেকুঠিয়া সেতু প্রকল্পটিও একনেক-এর চুড়ান্ত অনুমোদন লাভ না করায় পিরোজপুরের জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহন প্রস্তাবটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরনই করতে পারেনি।
অথচ চীন সরকার অনুদান অনুমোদনসহ প্রকল্পটির জন্য পরামর্শক নিয়োগ এবং চুড়ান্ত নকশা প্রনয়ন, অনুমোদন এবং ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়টি সম্পন্ন করলেও বাংলাদেশ সরকার ডিপিপি চুড়ান্ত অনুমোদন করতেই দু বছর পার করেছে। এমনকি প্রকল্পটির প্রশাসনিক ও জনবল সংক্রান্ত অনুমোদন লাভ করতে দীর্ঘ সময় পার হওয়ায় তা পরিকল্পনা কমিশনে পেস করতেও বিলম্ব ঘটে। তবে গত ১৫মে প্রকল্পটির ডিপিপি প্রী-একনেক’এর অনুমোদন লাভ করলেও তা একনেক-এর চুড়ান্ত অনুমোদনের লাভ করতে আরো পাঁচ মাস অতিক্রন্ত হল। নৌ বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজসহ পণ্য ও জ্বালানীবাহী নৌযানসমুহের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত রাখতে বেকুঠিয়া সেতুটি কঁচা নদীর সর্বোচ্চ জোয়ার থেকে ৬০ফুট উচ্চতায় নির্মিত হবে। ১হাজার ৪৯৩মিটার দীর্ঘ এ সেতুটির নদী অংশে মূল সেতুর দৈর্ঘ প্রায় ৯৯৮মিটার। চীনা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান গত মার্চে কাজ শুরু করে ৩০মাসের মধ্যে বেকুঠিয়াতে প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মান কাজ সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু পুরো বিষয়টি আমলাতান্ত্রিক ও আইনী জটিলতায় অনিশ্চয়তার দোলাচলে পড়েছিল দীর্ঘদিন। ফলে ২০২০-এর ডিসেম্বরের আগে বেকুঠিয়া সেতুটির নির্মান কাজ সম্পন্ন হবার কোন সম্ভবনা নেই। গতকাল প্রকল্পটি একনেক-এর চুড়ান্ত অনুমোদন লাভ করায় ভূমি অধিগ্রহণে আর কোন আইনী জটিলতা থাকলনা। তবে সব বিধিবিধান অনুসরন করে জমি হুকুম দখলসহ তা হ¯তাšতরে কম করে হলেও ছয়মাস সময় প্রয়োজন হবে। সে হিসেবে সব কিছু ঠিকমত চললেও জমি হস্তান্তর সম্পন্ন করে আগামী মার্চের আগে বেকুঠিয়া সেতুটির বাস্তব অবকাঠামোর কাজ শুরু হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল মহল। এতেকরে বেকুঠিয়া সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরুতেই একবছর বিলম্ব হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন