শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প উঠছে একনেকে

| প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


আধুনিকায়ন হবে মাদরাসা শিক্ষা : বাড়বে গুণগত সুযোগ-সুবিধা
ফারুক হোসাইন ও হাসান সোহেল  : পাস হতে যাচ্ছে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প প্রস্তাব। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় যে কোনো দিন উত্থাপন হতে পারে প্রস্তাবটি। গতকালও (সোমবার) পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের পুরো অর্থই অনুদান হিসেবে পাচ্ছে সরকার। স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার ঘাটাচর ও মধ্যচরে ২০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আধুনিক শিক্ষার সাথে সমন্বয় রেখে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ হবে। মাদরাসা শিক্ষায় অধিক দক্ষ ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল সৃষ্টি হবে। তারা দেশে এবং বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে, যা দেশের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি, এসডিজি (সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) ও ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। সাধারণ শিক্ষায় ডিগ্রিধারীদের সাথে মাদরাসা শিক্ষায় ডিগ্রিধারীরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও সফলকাম হতে পারবে। প্রস্তাবের শুরুতেই এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সুদীর্ঘ আন্দোলনে আলেম, পীর মাশায়েখ ও মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের একক অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের অবদানের কথা তুলে ধরা হয়।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের উদ্দেশ্যে সম্পর্কে বলা হয়েছে, মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, আধুনিকীকরণ এবং দেশের সকল ফাজিল ও কামিল মাদরাসা শিক্ষা কার্যক্রম যথাযথ পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে একটি ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি স্থায়ী ক্যাম্পাস সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো স্থাপন। ফাজিল (স্নাতক) এবং কামিল (স্নাতকোত্তর) পর্যায়ের কারিকুলাম ও সিলেবাস উন্নয়ন। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। মাদরাসায় অধ্যয়নরত ও শিক্ষাদানরত শিক্ষার্থী এবং শিক্ষককে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ নিতে আসা মাদরাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক সুবিধা সৃষ্টি করা। প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এই অর্থের মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যয় হবে ১১৭ কোটি ৫১ লাখ ২১ হাজার টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯৭ কোটি ১৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯৮ কোটি ৯৭ লাখ ১৬ হাজার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৭৮ কোটি ১৯ লাখ ৯২ হাজার টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, সরবরাহ ও সেবা, বিদ্যমান স্থাপনার জন্য ক্ষতিপূরণে ৩৪ কোটি ১৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। সম্পদ সংগ্রহে ১৪ কোটি ২ লাখ ৭৭ হাজার, জমি অধিগ্রহণ ১২৪ কোটি ৫২ লাখ ৮৪ হাজার, জমি উন্নয়ন ১২ কোটি ৬১ লাখ ১৮ হাজার, পূর্ত কাজে ২৪৩ কোটি ৭৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এছাড়া প্রাইস কনটিনজেন্সি ৩৪ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার এবং ফিজিক্যাল কনটিনজেন্সি ৮ কোটি ৫৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। জমি অধিগ্রহণ, জমি উন্নয়ন ও স্থাপনা ক্ষতিপূরণের ব্যয় ছাড়াও এর মধ্যে সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ৫ কোটি ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণে ৬৭ কোটি ৩৯ লাখ ১৩ হাজার, মিলনায়তন নির্মাণে ১৮ কোটি ১৫ লাখ ২৫ হাজার, স্টাফ কোয়ার্টার ৭ কোটি ৯৩ লাখ ৩৭ হাজার, অপর একটি স্টাফ কোয়ার্টার ৭ কোটি ৩০ লাখ ৫৩ হাজার, গেস্ট হাউজ ৩ কোটি ৯২ লাখ ৯৯ হাজার, মেডিকেল সেন্টার ও লাইব্রেরি ৪ কোটি ২৫ লাখ ৩০ হাজার, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া ২ কোটি ৪১ লাখ ৯৫ হাজার, কেন্দ্রীয় মসজিক ৫ কোটি ৩০ লাখ ৫৮ হাজার, যানবাহন সেড ১ কোটি ৭৩ লাখ ৪০ হাজার, অভ্যন্তরীণ আরসিসি ৩ কোটি ৯০ লাখ, ডীপ টিউবওয়েল ২ কোটি ৫৬ লাখ ১২ হাজার, ইলেকট্রিক্যাল সাব-স্টেশন নির্মাণ ও বহির্বিদ্যুতায়ন ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৮২ হাজার, সেলার এনার্জি সিস্টেম ৩৪ লাখ ৮২ হাজার, মাস্টার ড্রেন, রিটেইনিং ওয়াল, গাইড ওয়াল ও প্রটেকশন ওয়াল ৩ কোটি ৯০ লাখ, প্রশিক্ষণ এবং স্টাডি ট্যুর ৪ কোটি, স্টেশনারিজ ২৫ লাখ, কনটিনজেন্সি ফর পিআইইউ ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। ইসলামী  আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’র দিক নির্দেশনা নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রকল্পটি সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহŸায়ক করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সদস্য সচিব ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন)। এছাড়া কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেনÑ ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইংয়ের প্রতিনিধি, পরিকল্পনা কমিশনের শিক্ষা, প্রোগ্রামিং, এনইসি-একনেক ও সমন্বয় উইংয়ের প্রতিনিধি, আইএমইডি শিক্ষা সেক্টরের প্রতিনিধি, অর্থবিভাগের প্রতিনিধি, ইউজিসি’র পরিচালক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, ইউজিসি’র উপ-পরিচালক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সিনিয়র সহকারী প্রধান।
এই প্রকল্পের অধীনে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যায়ের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরি করা হবে। ক্যাম্পাসের অবকাঠামোর মধ্যে প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য ডরমিটরি, মহিলা ও পুরুষ ডরমিটরি, ভিসির বাসভবন, অডিটরিয়াম, মসজিদ, শহীদ মিনার, গেস্ট হাউজ, আনসার ব্যারাক ইত্যাদি ভৌত সুবিধা গড়ে তোলা হবে।
এর আগে গত বছর ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য ৫৮৯ কোটি ১৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকার প্রাক্কলিত ব্যয় প্রস্তাব করা হয়। এই প্রস্তাবের উপর একই বছর ২৫ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভ্যন্তরীণ প্রকল্প যাচাই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিপিপি অনুমোদনের জন্য ২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) পাঠানো হয়। ইউজিসি ডিপিপি পুনগর্ঠন করার নিদের্শনা প্রদান করে। ডিপিপি পুনর্গঠন করে অনুমোদনের জন্য ১০ আগস্ট পুনরায় ইউজিসিতে প্রেরণ করা হয় এবং ২১ সেপ্টেম্বর ডিপিপি’র উপর একটি প্রেজেন্টেশন সভাও হয়। ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প গৃহীত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস হবে তুরাগ নদীর ওপারে ২০ এক জায়গার ওপর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন