শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

নির্বাচনী সংঘাত ও অস্ত্রের অনুপ্রবেশ বাড়ছে

প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দেশে প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদের মত স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশে গ্রামীণ জনপদে উত্তপ্ত অবস্থাক্রমে উত্তুঙ্গ হয়ে ওঠার খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যকার রক্তাক্ত সংঘাতের খবর প্রকাশিত হচ্ছে। প্রথম ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই ক্রমবর্ধমান নির্বাচনী সংঘাতে ভোটের দিনের প্রত্যাশিত স্বাভাবিক পরিবেশ নিয়ে ইতিমধ্যেই জনমনে উদ্বেগ ও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষত: ক্ষমতাসীনদলের সমর্থকদের দাপট ও পেশিশক্তির কাছে বিএনপি’র প্রার্থীরা অনেকটা অসহায়বোধ করলেও আওয়ামী লীগের এবং বিদ্রোহী প্রার্থীরা সমানতালে নির্বাচনী মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। কয়েকদিনের পত্রিকায় চোখ রাখলে দেখা যায়, নির্বাচনী সহিংসতায় প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। গতকালের পত্রিকায় বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে নির্বাচনী সহিংসতায় অন্তত একজন নিহত এবং শতাধিক আহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর আগেরদিন বগুড়ায় একজন নিহত এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে শত শত মানুষের আহত হওয়ার প্রকাশিত হয়। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, সংঘাত-সংর্ঘষের ঘটনাও ততই বেড়ে চলেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে নতুন নতুন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীসহ সন্ত্রাসীচক্র গড়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। প্রধানত: সরকারীদল ও তার বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছত্রছায়া ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রাপ্ত সন্ত্রাসীদের দাপটের কাছে সাধারণ ভোটার ও সমর্থকরা অনেকটা অসহায় ও জিম্মি হয়ে পড়ছে।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন অবাধে চোরাচালান হয়ে আসছে নানা ধরনের বিপুল পরিমাণ মাদক এবং আগ্নেয়াস্ত্র। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা বাংলাদেশের নিরীহ গরু ব্যবসায়ী এবং সীমান্ত এলাকার কৃষকদের উপর যত্রতত্র গুলি চালিয়ে হতাহত করলেও অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানে জড়িতরা সব সময়ই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে। ভারত সীমান্তে গড়ে ওঠা কারখানায় তৈরী ফেন্সিডিলসহ নানা ধরনের মাদক, অস্ত্র ও নিষিদ্ধ ওষুধের সরাসরি শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের যুবসমাজ। এখন স্থানীয় নির্বাচনকে ঘিরে গ্রামীণ জনপদে কাঁচা টাকা উড়ছে। এসব অর্থের একটি বড় অংশই সন্ত্রাসী ও মস্তানরা ব্যয় করছে নতুন অস্ত্র সংগ্রহ ও মাদকের পেছনে। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, চোরাচালানের সাথে জড়িতরা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয় প্রাপ্ত হওয়ায় কাউকেই পরোয়া করছে না। ওপারে বিএসএফ এবং এপারে বিজিবি ও পুলিশকে ম্যানেজ করেই অস্ত্র ও মাদকের রমরমা ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত থেকে অস্ত্র, মাদকের বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে সোনার বার, চোরাইপথে আসা ইয়াবা এবং মৌসুমী ফল ও ফসল। এসব অবৈধ লেনদেনে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সামাজিক অপরাধ বাড়ছে এবং দেশ শত শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
সারাবছরই শত শত কিলোমিটার সীমান্ত পথের অসংখ্য পয়েন্ট দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে মাদক এবং অস্ত্র। মাঝেমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে চোরাচালানী দলের কিছুসংখ্যক সদস্যসহ কিছু অস্ত্র ও মাদকের চোরাচালান ধরা পড়ার খবর পাওয়া গেলেও এসব অপকর্মের মূল হোতারা সব সময়ই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়। গত বুধবার ইনকিলাবে প্রকাশিত অন্য একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, কুমিল্লার ৩০টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের চোরাচালান বেড়ে যাওয়ায় এখন সন্ত্রাসী. ডাকাত, অপহরণকারী ও ছিনতাইকারীদের হাতে শোভা পাচ্ছে এসব অস্ত্র। গত আড়াই মাসে কুমিল্লার সীমান্ত এলাকা থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্তত ১৪ জনকে আটক করার তথ্য দিয়েছে পুলিশ। পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বেশিরভাগ অস্ত্রবাজ, অস্ত্র ব্যবসায়ী ও চোরাচালানীর নাম-ধাম থাকলেও এসব অপকর্ম বন্ধ হয় না। কুষ্টিয়া মেহেরপুর জেলার ৮৯ কিলোমিটার সীমান্তপথের প্রায় পুরোটাই কাঁটাতারের বেড়াসহ ২০টি বিএসএফ ক্যাম্প এবং ১০০ গজ পর পর সেন্ট্রি ক্যাম্প রয়েছে। সেই সাথে বাংলাদেশ সীমান্তে রয়েছে বিজিবিসহ পুলিশের টহল। এতসব নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভেতর দিয়ে প্রতিদিন প্রবেশ করছে নানা ধরনের অস্ত্র, বোমা, বোমা তৈরীর সরঞ্জাম এবং নানা প্রকার মাদক ও যৌন উত্তেজক ওষুধ, সিডিসহ নিষিদ্ধ সামগ্রী। বিএসএফ, বিজিবি ও পুলিশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের চোরাচালান অব্যাহত রাখা অসম্ভব বলে মনে করেন সীমান্তবর্তী সাধারণ মানুষ। একই কারণে অস্ত্র ও মাদক চোরাকারবারীরা পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরও মামলার দুর্বলতা বা দুর্বল চার্জশিটের কারণে ছাড়া পেয়ে যায়। ছাড়া পেয়ে তারা আবারো একই কাজে নেমে পড়ে। একদিকে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়, অন্যদিকে পুলিশ-বিজিবি’র যোগসাজশে দেশে মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্রের বিস্তার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক কারণে এদেরকে প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হলে নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের পর দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আরো বিপর্যয়ের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অতএব, নির্বাচনের আগেই প্রতিটি জনপদের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এবং অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে চিরুনী অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন