দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ একটি প্রভাবশালী চক্র আমাদের চোখের সামনে ধান ফসলের জমিতে ড্রেজার লাগিয়ে অবৈধ ভাবে বালি তুলছে। অনেক কাকুতি-মিনতি করলেও তারা কারো কথাই শুনছেনা, বাধা মানছে না। চোখের সামনে দেখতে দেখতে মরা ব্রহ্মপুত্র নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আমার ফসলী জমি। অনেক দুঃখ কষ্ট নিয়ে এ কথাগুলো বললেন আশি উর্ধ কৃষক সবদর আলী।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের আড়ালিয়া মরা ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে এ ঘটনা। ওই এলাকা থেকে প্রভাবশালী একটি চক্র ইজারার নাম করে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এতে বিলীন হয়ে পড়ছে নদী পাড়ের ব্যক্তি মালিকাধীন অনেক কৃষি জমি। এলাকাবাসী এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের কাছে বার বার লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, অবৈধ ভাবে ৪/৫ টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অনবরত বালু উত্তোলন করে বিশাল স্তুপ দিচ্ছে। বালির বিষয়ে কেউ কোন প্রশ্ন করলে ইজারাদারের ভাড়াটে লোকেরা ভয়ভীতি দেখায়। অভিযোগে জানা যায়, প্রভাবশালী চক্রটি গত ৭/৮ বছরে ওই কৃষি জমির বালি বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অবৈধ এ বালু উত্তোলনের কারণে আড়ালিয়া ও নদীর ওপারের লেবুতলার গাঙ্গুকান্দি এলাকার অনেক কৃষকের বাড়িঘর ও ফসলী জমি ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। বালি দস্যুরা নদীর অন্য অংশ থেকে বালি উত্তোলন না করে, প্রতি বৎসর একই স্থান থেকে বালি উত্তোলন করায় ওই এলাকায় গভীর খাদের সৃষ্টি হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ফসলী জমি ভাঙ্গনে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে আড়ালিয়া গ্রামের সবদর আলী ও মফিজ উদ্দিন নামে দুই কৃষক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। এতে তিনি সরকারী দল সমর্থিত কাজল মৃধার নেতৃত্বে বিপ্লব মৃধা, আদম আলী, কাজল মিয়া, মোমতাজ উদ্দিন, ইদু নেতৃত্বে এ চক্রটি ১০ বছর যাবত বালি উত্তোলন করার অভিযোগ করেন।
রহস্যজনক কারনে প্রশাসন এ ব্যপারে কোনরকম পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে বালু দস্যুরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এ ব্যপারে মফিজ উদ্দিন জানান, অভিযোগ দিয়ে এখন নিজেরাই বিপদে পড়েছি। বালু দস্যুদের অব্যাহত হুমকিতে কৃষিকাজ ফেলে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এ ব্যপারে টোক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শরীফ মোহাম্মদ ওয়াহিদ বালি দস্যু ও সন্ত্রাসী কাজল মৃধার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এক প্রত্যায়ন পত্র দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাকী এন্টারপ্রাইজ নামে এক প্রতিষ্ঠানকে ব্রম্মপুত্র নদের টোক থেকে আড়ালিয়া অংশের মরা নদীটি (বালিতে ভরাট) নৌ ও পানি প্রবাহ সচল রাখার জন্য বালি উত্তোলনের জন্য ইজারা প্রদান করেন।
টোক ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা বাবুল মিয়া জানান, ঠিকাদার লাকী এন্টারপ্রাইজ নদীর শুধু নির্দিষ্ট একটি স্থান থেকে বালি উত্তোলন করছে। কিন্ত তারা যেখান থেকে বালি তুলছে তা নদী পারের স্থানীয় গ্রামবাসীর কৃষিক্ষেত। তিনি আরো জানান, বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি তদন্তের জন্য পাঠালে তিনি দেখতে পান, বালি উত্তোলনের ফলে কাপাসিয়া অংশের জোত জমির অনেক জায়গা ভেঙ্গে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বালি উত্তোলন বন্ধ না হলে নদীর তীরবর্তি জমি ব্যাপক ভাবে ভাঙ্গন দেখা দেবে।
সাবেক ইজারাদার শ্রমিক নেতা নোমান জানান, নদীর এ অংশ গাজীপুর জেলা প্রশাসক লিজ প্রদান করে থাকেন। পরে কাপাসিয়া সহকারী কমিশনার মি সুনিদৃষ্ট দাগ খতিয়ান উল্লেখ পূর্বক শর্ত সাপেক্ষে ইজারা প্রদান করে থাকেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও যুবলীগ নেতা আবুল কাশেম জানান, শর্তমতে লিজের দাগ খতিয়ানের সাথে বর্তমানে উত্তেলিত বালির জায়গার কোন মিল নেই। ফলে এ জায়গা থেকে বালি উত্তোলন বেÑআইনি।
ইজারাদার মনির হোসেন জানান, তিনি এ জায়গা থেকে বালি উত্তোলন করেন না। স্থানীয় কিছু কুচক্রি আমার নাম ভাঙ্গিয়ে বালি উত্তোলন করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন