হেপাটাইটিস মানে লিভারের প্রদাহ। এটি বিভিন্ন ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হতে পারে। হেপাটাইটিসের প্রধান টাইপ হলো অ, ই, এবং ঈ। অ টাইপ হেপাটাইটিস এর উপসর্গ স্টোমাক এর ভাইরাসের অনুরূপ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১ মাসের মধ্যে সেরে যায়। হেপাটাইটিস ই ও ঈ এর কারণে একজন মানুস হঠাৎ করে অসুস্থ হতে পারে। হেপাটাইটিস ই ও ঈ এর কারণে লিভার ক্যান্সার বা গুরুতর ক্রনিক ইনফেকশনে লিভার সিরোসিসও হতে পারে। হেপাটাইটিস ই এবং ঈ প্রধানতঃ সংক্রামিত বøাড, বীর্য বা শরীরের অন্যান্য পদার্থের মাধ্যমে ছড়ায়। ঝুঁকি এড়াতে হেপাটাইটিস অ ও ই এর ভ্যাকসিন রয়েছে। তাই ভ্যাকসিন এর মাধ্যমে হেপাটাইটিস বিস্তার রোধ করা সম্ভব।
হেপাটাইটিস অ আক্রান্ত ব্যক্তির মল দ্বারা দূষিত খাবার ও পানীয় অন্যের শরীরে প্রবেশের মাধ্যমেই এটা ছড়ায়। এছাড়াও হেপাটাইটিস আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ মেলামেশার মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারেন, উদাহারণ স্বরূপ- ডায়াপার পরিবর্তন বা যৌন যোগাযোগর মাধ্যমে। অস্বাস্থ্যকর পয়ঃ নিষ্কাষন ব্যাবস্থা বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়। হেপাটাইটিস অ দূষিত তাজা ফল, সবজি এবং সালাদের মাধ্যমে এর প্রদুর্ভাব দেখা যায়। খোশা ছাড়ানোর আগে বা খাদ্য গ্রহণের পূর্বে খাবার ভালভাবে ধুয়ে নিন। দূষিত পানি পান করেও আপনি হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। ট্যাপের পানি পান করার পূর্বে অবশ্যই সিদ্ধ করে নিতে হবে। ঘরের বাহিরে বোতলজাত পানি পান এবং বরফ এড়িয়ে চলা, যদি তা বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরী না করা হয়। হেপাটাইটিস অ দেহের বাহিরে একমাস টিকে থাকতে পারে। সবসময় ভাল স্বাস্থ্যবিধি- টয়লেট ব্যবহার, ডায়াপার পরিবর্তন এর পর এবং খাদ্য নাড়া চাড়া বা খাবার গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই সাবান পানি বা জীবানু নাশক দিয়ে হাত ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে, যাতে করে হেপাটাইটিস অ বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে। সংক্রামিত রক্ত এবং শরীরের তরল হেপাটাইটিস সংক্রামনে সাহায্য করে। জন্মের সময় মা থেকে, যৌন সঙ্গীর মাধ্যমে কিংবা খোলা কোন ক্ষতের মাধ্যমেও এটি ছড়ায়। বিউটি পার্লার বা সেলুন এর মাধ্যমে হেপাটাইটিস ই ও ঈ সংক্রামিত হওয়ার কিছু ঝুঁকি থাকে। ২% থেকে ৫% ক্ষেত্রে সাজ-সজ্জার আইটেম যেথানে সম্ভব্য রক্তের মাধ্যমে এর রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। ঝুঁকি এড়াতে আপনার ব্যক্তিগত নেইল কাটার, কিউটিকল ক্লিপলার, রেজার ও অন্যান্য বক্তিগত জিনিসপত্র ব্যবহারে মাধ্যমে এর ঝুঁকি কমাতে পারেন। হেপাটাইটিস ই আক্রান্ত কোন সঙ্গীর সাথে যৌন মিলনের মাধ্যমে আক্রান্ত হবার প্রধান কারণ। হেপাটাইটিস ই ভাইরাস সংক্রামিত ব্যক্তির রক্ত, যোনি তরল বা বীর্যের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। ভ্যাকসিন হচ্ছে আক্রান্ত হওয়া এড়ানোর সবচেয় নিরাপদ উপায়। এছাড়াও কনডম ব্যবহারেও ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করবে। হেপাটাইটিস ই ও ঈ আক্রান্ত কারো ব্যক্তিগত জিনিস ব্যবহারের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে। এগুলোর মধ্যে টুথব্রাশ, রেজার, নেইল কাটার, সূঁচ বা অন্য কোন ভাবে সংক্রামিত রক্তের সংস্পর্শে মাধ্যমে মিশে আক্রান্ত হয়। আপনার নিজস্ব ব্যবহারের জন্য এ সকল সামগ্রী রাখুন, অন্য কারো সাথে শেয়ার থেকে বিরত থাকুন।
ডাঃ ফাওয়াজ হোসেন (শুভ)
ইন্টারভেনশনাল গ্যান্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট
কনসালটেন্ট, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি এন্ড হেপাটোলজি ডিপার্টমেন্ট,
ইউনাইটেড হাসপাতাল, ঢাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন