শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

এককালের গুরুত্বহীন গোয়াদর আজ শতশত কোটি ডলার প্রকল্পের মুকুটমণি

এএফপি : | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পাকিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকার দারিদ্র পীড়িত স্থান গোয়াদর। এক সময়ের একেবারে গুরুত্বহীন এ স্থানটি আজ চীনের একুশ শতকের বহুশত কোটি ডলার ব্যয়ের রেশম পথ নির্মাণ প্রকল্পের মুকুটমণি হয়ে উঠেছে। ‘বাতাসের তোরণ’ নামে পরিচিত আরব সাগরের এক অনুর্বর উপদ্বীপ গোয়াদর হরমুজ প্রণালির কাছে তার কৌশলগত অবস্থানের কারণে পাকিস্তানের পরবর্তী অর্থনৈতিক কেন্দ্র নির্বাচিত হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছে।
গোয়াদর শহর এখন চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (সিপিইসি) উল্লম্ফনের বড়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ৫৪ বিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্পটি ২০১৩ সালে শুরু হয় । পশ্চিম চীনকে পাকিস্তানের ভিতর দিয়ে ভারত মহাসাগরের সাথে যুক্ত করাই সিপিইসি-র লক্ষ্য। চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগের অন্যতম বৃহৎ উচ্চাভিলাষী প্রকল্প সিপিইসিতে রয়েছে ৬৫টি দেশের সাথে স্থল ও নৌপথের একটি নেটওয়ার্ক নির্মাণ। চীনা অর্থায়নকৃত এ উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে বন্দর, রেলপথ, সড়ক ও শিল্প পার্কের এক বিশাল নেটওয়ার্ক নির্মাণের মধ্য দিয়ে চীনকে আফ্রিকা, এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশের সাথে যুক্ত করা। তবে দুর্বল প্রতিষ্ঠান, সীমাহীন দুর্নীতি ও করিডোরের জন্য নির্ধারিত অঞ্চলে বিদ্রোহী কবলিত এলাকার বিষফোঁড়া সম্বলিত একটি দেশ পাকিস্তানের জন্য এ প্রকল্পে অংশগ্রহণ এক বিরাট চ্যালেঞ্জই বটে।
গোয়াদর বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান দোস্তাইন খান জামালদিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ বন্দর প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে পাকিস্তানের সংযোগ রচনায় সাহায্য করবে। গোটা দেশই গোয়াাদর থেকে উপকৃত হবে। তবে প্রথম উপকারভোগী হবে গোয়াদরের লোকেরা। সম্পদসমৃদ্ধ বালুচিস্তান হচ্ছে পাকিস্তানের অন্যতম দরিদ্র ও সহিংসতা কবলিত প্রদেশ। বালুচিস্তানের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধালাভ অত্যন্ত সংবেদনশীল ব্যাপার। সেখানে গত কয়েক দশক ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র আন্দোলন চলছে। সিপিইসি-র শুরু থেকে সন্ত্রাসীরা বারবার নির্মাণ এলাকাগুলো ও চীনা শ্রমিকদের উপর হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের গভীর সমুদ্রবন্দর, একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল ও ৩১ মাইল প্রশস্ত ডক নির্মাণ এ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।
জামালদিনি বলেন, গোয়াদর বন্দর চীনের নয়। চীন আমাদের শক্তিশালী অংশীদার। আমরা তাদের বলিষ্ঠতার প্রশংসা করি। যখন কেউ এ বন্দরের পরিকল্পনাকে গ্রহণযোগ্য মনে করেনি, স্থানটিও পরিদর্শন করতে আসেনি তখন তারা এসেছে। বহুদিন থেকেই গোয়াদরের প্রতি চীনের নজর ছিল। ২০০৭ সালের আগে বন্দরটির একটি উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য চীন অর্থায়ন করে। পরে একটি সিঙ্গাপুরী প্রতিষ্ঠান তা দেখভালের দায়িত্ব নেয়। কিন্তু পরে নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা ২০১৩ সালে পুনরায় তা চীনের কাছে হস্তান্তর করে।
উচ্চাভিলাষী এ করিডোর পরিকল্পনা এ অঞ্চলে জনপ্রিয় হওয়া থেকে অনেক দূরে রয়েছে। বিরোধিত কাশ্মীর অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাওয়া এ প্রকল্পের ব্যাপারে ভারত প্রকাশ্য বিরোধিতা করছে। এ মাসে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস সিপিইসির ব্যাপারে উদ্বেগ ব্যক্ত করেন। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তিনি ও জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও হাউস আর্মড সার্ভিসেস প্যানেলে বক্তব্য রাখেন। এ সময় ম্যাটিস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রকল্পের বিরোধিতা করে। কারণ বিশে^ এখন বহু বেল্ট, বহু রোড প্রকল্প চলমান যে কারণে কোনো দেশের একক ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড-এর কথা বলা উচিত নয়। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে যাওয়া এ রকম একটি প্রকল্পের বিরোধী, কারণ তা বিরোধপূর্ণ এলাকার মধ্য দিয়ে গেছে।
বিষয়টি পাকিস্তানে প্রচন্ড নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। পাকিস্তান দাবি করেছে, ওয়াশিংটন পাকিস্তানের ঘোর শত্রু ভারতের পক্ষ নিয়ে এ প্রকল্পের ব্যাপারে চীনকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছে। সিপিইসি প্রকল্প ও জনশক্তির নিরাপত্তার জন্য গঠিত বাহিনী ব্রিগেড ৪৪০-এর প্রধান ব্রিগেডিয়ার কামাল আজফারের মতে, কূটনৈতিক উদ্বেগের বাইরে গোয়াদরে নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সিপিইসি প্রকল্প বিরোধী বিদ্রোহীদের ভারত সমর্থন দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, শত্ররা এ প্রকল্পকে বানচাল বা থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।
গোয়াদর এলাকায় পানি ও বিদ্যুতের অভাব রয়েছে। তবে সিপিইসির অন্তর্ভুক্ত বাঁধ নির্মাণ ও পানি লবণমুক্তকরণ কারখানা চালু হলে এ সমস্যা দূর হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছে। কর্মকর্তার আরো উদ্বিগ্ন যে উপদ্বীপটি অচিরেই রিয়েল এস্টেট ব্যবসার শিকার হব্।ে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে বন্দর এলাকার জমির মূল্য প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
স্থানীয় একটি হাসপাতাল পরিচালনাকারী মোহাম্মদ সিদ্দিক বলেন, ভবিষ্যত সমৃদ্ধির সম্ভাবনা সত্তে¡ও দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে। তার হাসপাতালে সর্বাধুনিক সুিবধা থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার কারণে সীমিত অস্ত্রোপচার করতে হয়। গোয়াদর শহরে সিপিইসি প্রণোদিত অর্থনৈতিক কার্যক্রম এখনো সীমিত। সম্প্রতি বন্দরে একটিমাত্র ফ্রেইটার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে মাসে ৩ থেকে ৪টি ফ্রেইটার আসে। বন্দর অভিমুখী এক্সপ্রেসওয়ের কাজ এখনো অসমাপ্ত রয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত প্রায় ৩শ’ চীনা চায়না টাউন নামে আখ্যায়িত বন্দরের একটি অস্থায়ী আবাসে থাকে। নিরাপত্তা এসকর্ট ছাড়া তাদের বাইরে দেখা যায় না।
গোয়াদরের বর্তমান লোক সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। ২০৫০ সাল নাগাদ তা ১০ গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। গোয়াদর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ বালুচ বলেন, প্রকল্পের সুবিধার জন্য ৫০ হাজার জেলেকে পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসন করো হবে। তিনি বলেন, চাকরি ক্ষেত্রে প্রথম অগ্রাধিকার পাবে গোয়াদরিয়রা, দ্বিতীয অগ্রাধিকার বালুচদের, তারপর পাকিস্তানের অন্যান্য অংশের লোকেরা।
তবে আবদুল্লাহ ওসমান নামের এক সমাজকর্মী বলেন, বাইরের যে কোনো লোকের চেয়ে বালুচদের সর্বাধিক সুবিধা পাওয়া উচিত। স্থানীয় বালুচরা যদি এ বন্দর প্রকল্প থেকে লাভবান না হয় তা হবে দুর্ভাগ্যজনক। তাতে তাদের কয়েক দশক দীর্ঘ বঞ্চনা আরা বাড়বে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Biplob Basu ২৭ অক্টোবর, ২০১৭, ৪:২৪ এএম says : 0
somoyer bebodhane onek kisu e hoy
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন