ইয়াবা ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অজুহাতে টেকনাফের নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় অর্ধাহারে অনাহারে জীবন কাটাচ্ছেন কয়েক হাজার জেলে পরিবার। মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার ফলে রোহিঙ্গারা দলে দলে এদেশে পালিয়ে আসার প্রেক্ষিতে অঘোষিত ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে জেলেদের মাছ শিকার। এরপর ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ২৩ অক্টোবর থেকে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও সাগরে মাছ শিকার শুরু হলেও টেকনাফের নাফ নদীতে মাছ শিকার অঘোষিত বন্ধ রাখা হয়েছে। অথচ ইয়াবা চোরাচালান এবং রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্দ হয়নি। একটানা মাছ শিকার বন্ধ থাকার ফলে নাফ নদ নির্ভর জেলে পরিবারগুলোতে নেমে আসে দূর্দশা। জীবন কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে। বিকল্প কোন আয়ের উৎস না থাকায় জেলে পরিবারের মধ্যে চলছে হাহাকার। অনেকেই দু’বেলা খাদ্য যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানা গেছে। মাছ শিকার বন্ধ থাকায় নাফ নদীর পাশ্ববর্তী বাজার গুলোতে মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া টেকনাফে মিঠাপানির মাছ তুলনামুলকভাবে অনেক কম। ফলে নাফ নদী ও সাগরের মাছের উপর পুরো উপজেলা নির্ভরশীল।
২৮ অক্টোবর শুক্রবার নাফ নদী নির্ভর জেলেরা তাঁদের দূর্দশার কথা জনিয়েছেন। এর মধ্যে হ্নীলার ওয়াব্রাংয়ের আক্কাছ উদ্দিন, নাটমুরা পাড়ার ধর্মেন্দ্র, জেলেপাড়ার মিলন বড়–য়া, লেদার জামাল উদ্দিন, নয়াপাড়া গ্রামের জেলে মোঃ ইসমাইল ও জাদীমুরা এলাকার জেলে নুরুল আমিন অন্যতম।
হ্নীলা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের জেলে মোঃ ইসমাইল (৪৭) বলেন ‘কর্ম জীবনের শুরু থেকে পেশা জেলে হিসেবে নদীতে মাছ শিকার করে আসছি। বছরের পর বছর ধরে নাফ নদীতে বিহিঙ্গি জাল পেতে জিবীকা নির্বাহ করে আসছি। কোন কালই এভাবে দীর্ঘদিন মাছ শিকার বন্ধ থাকেনি। রাখাইনে সহিংসতা শুরু হলে এর প্রভাব পড়ে আমাদের সীমান্তের অভ্যন্তরে জেলেদের উপর। মাছ শিকার করতে না পারায় পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে। সরকার থেকে জেলেদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দেওয়া হলেও এপর্যন্ত কোন সাহায্য জেলে পরিবারের ভাগ্যে জুটেনি’।
জাদীমুরা এলাকার জেলে নুরুল আমিন বলেন ‘নাফ নদের মাছ শিকার বন্ধের ফলে আয় রোজগার নেই। ফলে এক বেলা খেতে পারলেও আরেক বেলা খেতে খুব কষ্ট হচ্ছে। নদীতে টানা জাল ও কাঁকড়া শিকার করে সংসারের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো হতো। নাফ নদীতে মাছ শিকারে গেলে বিজিবি জওয়ানরা বাধা সৃষ্টি করছে এবং মাছ শিকার বন্ধে ‘উপরের নির্দেশ’ আছে বলে জেলেদের জানান বিজিবি জওয়ানরা’।
জাদীমুরার মাছ ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ বলেন ‘জেলেদের মাছ ক্রয় করে তা বাজারে বিক্রি করে সংসার চলতো। এখন মাছ শিকার বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে খুব মুশকিল। বিকল্প কোন কাজও করতে পারছিনা’।
এভাবে নাফ নদীর উপর নির্ভর টেকনাফ উপজেলার প্রায় ৮ হাজার জেলে ও তাদের পরিবার প্রায় আড়াই মাস ধরে অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। টেকনাফ উপজেলা মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে জেলেদের পুর্নবাসনের কথা বলা হলেও এপর্যন্ত কোন সাহায্য তারা পায়নি বলে বলে জানিয়েছেন জেলেরা। শিগগিরই নাফ নদীতে মাছ শিকার থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান জেলে পরিবারগুলো।
এব্যাপারে টেকনাফ সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন ‘মিয়ানমারের সহিংসতা, ইয়াবা পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকারী নির্দেশে দুই মাস যাবৎ নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে। আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত উক্ত নির্দেশ বলবৎ থাকবে। এছাড়া এই সময়ে তালিকাভুক্ত জেলেদেরকে ভিজিএফের আওতায় আনা হয়েছে এবং তা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দেওয়া হবে’।
টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল এস এম আরিফুল ইসলাম বলেন ‘৩১ অক্টোবর পর্যন্ত নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ রাখতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ রয়েছে। উক্ত তারিখের পর কোন নির্দেশনা না আসলে নাফ নদীতে জেলেদের মাছ শিকারে কোন বাধা থাকবেনা’।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন