আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে নিজেরাই পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে সরকারের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, বিএনপি ছাত্রদল-যুবদল পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে।
জনতার ঢল না নামায় একটি বড় সংবাদের প্রয়োজন ছিল, সেজন্য এ হামলার নাটক সাজিয়েছে তারা। মিডিয়া কাভারেজ পাওয়া। প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার গাড়ি অক্ষত আছে, তাহলে হামলাটা হলো কোথায়। সংবাদপত্রে দেখলাম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা। কিন্তু তিনি ও তার গাড়ি অক্ষত আছে। তাহলে হামলাটা হলো কোথায়? কিভাবে হলো? গতকাল রবিবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণ করতে যাওয়ার পথে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির এটা পুরাতন অভ্যাস নিজেরা মারামারি করে আর সরকারের উপর দোষ চাপায়। তাদের এই হামলা ছিল পরিকল্পিত। বড় নিউজ সৃষ্টির জন্য বিএনপিই সুপরিকল্পিত নিজেদের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, আমার কাছে খবর আছে ছাত্রদল ও যুবদলের মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ওপর দায় চাপানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সেতুমন্ত্রী জানান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার সফরকালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সব সুবিধা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। উনি সার্কিট হাউজ ব্যবহার করবেন, ভিআইপি রুমে অবস্থান করবেন। তার আপ্যায়ন ও অবস্থানের সময় যেন কোনও ত্রুটি না হয়।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে কক্সবাজারে যাত্রাপথে বিভিন্ন জেলার সার্কিট হাউজ ব্যবহার করার আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। পরে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে আমি ডিসিদের আরও কিছুটা বাড়তি নির্দেশনা দিয়েছি। আমি ডিসিদের জানিয়েছি, যদি সার্কিট হাউজে খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গীদের জায়গার সংকুলান না হয় তাহলে যেন সড়ক বিভাগের রেস্ট হাউজগুলো ব্যবহার করা হয়।
সড়কমন্ত্রী বলেন, রবিবার চকরিয়ায় সড়ক বিভাগের রেস্ট হাউজে নামাজ ও বিশ্রাম নেয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন খালেদা জিয়া। আমি সে অনুমতি দিয়েছি। অথচ এই চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে শেখ হাসিনাকে ভিআইপি রুম দেয়া হয়নি। তিনি আমাদের দলের সভানেত্রী। তাকে নিয়ে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাঠে দাঁড়িয়েছিলাম। একই ঘটনা ঘটেছিল বরিশালে। তারা অধম হলে আমরা কেন উত্তম হবো না।
কাদের বলেন, খালেদা জিয়া বিমানে না গিয়ে সড়ক পথে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ দিতে গেলেন। আর নিজেরা নিজেরা মারামারি করে সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। এটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে, তা দেশবাসী জানেন। যখন দেখছেন জনতার ঢল নামছে না তখন তারা ফেনীতে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। নিজেরা নিজেদের সঙ্গে মারামারি করেছে। এই হামলা ঘটিয়ে একটি বড় সংবাদ কাভারেজ পাওয়াই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ। এতো হামলা হলো কিন্তু তাদের কোনও নেতাই তো আহত হলেন না। আর সাংবাদিকদের গাড়িতে হামলা করার উদ্দেশই ছিল কাভারেজ পাওয়া।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যদি উখিয়া যেতেন তাহলে তিনি বিমানে যেতে পারতেন। তিনি সড়ক পথে কেন গেলেন? এর আগে দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরও গেছেন। কিন্তু তখন তো কোনও সমস্যা হয়নি? লন্ডন থেকে ফেরার পর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়া চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখেই দেশে চলে এসেছেন। সেই অসুস্থ নেত্রী এই দীর্ঘ পথ সড়কে কেন পাড়ি দিতে গেলেন? এর মাধ্যমে পরিষ্কার বোঝা যায় উনার উখিয়া যাওয়ার উপলক্ষ্য মানবিক কিন্তু উদ্দেশ্যটা রাজনৈতিক। গত সাড়ে আট বছরে সাড়ে আট মিনিটিও আন্দোলন করতে পারেনি বিএনপি। কিন্তু তিনি মনে করেছিলেন সড়ক পথে গেলে তাকে দেখতে লাখ লাখ মানুষের ঢল নামবে। ১৫০টি গাড়ির বহর নিয়ে তিনি গেলেন কিন্তু সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষও জড়ো হয়নি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার যাত্রাপথে বাধা দিলে ক্ষতি আমাদের আর লাভ হবে বিএনপির। আমরা কেন নিজেদের দলের সেই ক্ষতি করতে যাবো। আমরা শান্তিতে দেশ চালাচ্ছি। কেন আমরা অশান্তি ডেকে আনবো? তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সড়ক পথে চট্টগ্রামে যাবেন এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি গেছেন সড়ক পথে, আসবেনও নাকি সড়ক পথে। এই তিনদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট থাকবে। এটা তিনি বিবেচনা করেননি।
কাদের বলেন, ফেনী পর্যন্ত পাঁচ হাজার লোকও জড়ো হয়নি। ফেনী পর্যন্ত কোনও সমস্যা হয়নি। ফেনীতে প্রবেশের আগে হঠাৎ করে একদল মোটরসাইকেল আরোহী ইট-পাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর করেছে। মিডিয়ার গাড়িতে আক্রমণ করেছে। আমার প্রশ্ন আওয়ামী লীগের কর্মীরা কেন গণমাধ্যমের গাড়িতে হামলা করবে?
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কিছুদিন আগে দেখলাম নিজেদের দলের আইনজীবীরা হাতাহাতি করছেন। তারা একে অপরকে সরকারের দালাল বলে গালিগালাজ করেন। এটি নতুন কোনও ঘটনা নয়। সদস্য সংগ্রহের জন্য ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরিশালে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রকাশ্যে নয় একটি ঘরের মধ্যে অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলেন। সেখানেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল, মারামারি, হামলা হয়েছে। পরে ছয় ঘণ্টা সফর কমিয়ে তিনি ঢাকায় ফেরেন। সারা বাংলাদেশে নিজেদের কোন্দল ও মারামারি ছাড়া কবে কোন অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে তারা করতে পেরেছেন?
ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন প্রশ্ন তিনি কত ত্রাণ দেবেন? উনার কারণে তিনদিন সাধারণ মানুষের ত্রাণবাহী গাড়ি উখিয়া যেতে পারছে না। সরবরাহ পথ বন্ধ করে তিনি উখিয়া যাচ্ছেন। তার মতো দায়িত্বশীল নেতার কাছে এ আচরণ শোভন নয়। তিনদিন সড়ক বন্ধ করে দিলেন তিনি।
খালেদা জিয়ার গাড়ী বহরে হামলায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ জড়িত বলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি খবর নিয়েছি পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদল ও যুবদল এ হামলা করেছে। পরে তারা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ওপর দায় চাপাচ্ছে।
এদিকে, গতকাল বিকালে তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডে নিরাপদ সড়ক দিবসের আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাওয়ার কারণে সৃষ্ট যানজটে ত্রাণবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেয়ার নামে ঢাকা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম সড়ক ৭ দিনের জন্য অচল করে দিয়েছেন। এত গাড়ি, যানজটে মহাসড়ক অচল হয়ে গেছে।
কাদের বলেন, ত্রাণের গাড়ি কই? আপনি কত ত্রাণ দিবেন? অথচ আপনার কারণে শত শত ত্রাণের গাড়ি যেতে পারছে না। এটা কোন দায়িত্বশীলতার পরিচয়, সেটা আমি জানতে চাই।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির মহাসচিব বলেছেন-সরকার তার নেত্রীর জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত। অথচ ঢাকা-চট্টগ্রামের কোথাও ৫ হাজার লোকের সমাবেশও হয়নি। জনগণ না থাকলে জনপ্রিয়তা আসবে কোথা থেকে? তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নাকি অসুস্থ। অসুস্থতা নিয়ে সড়কে বের হয়ে যানজট তৈরি করে আপনি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেননি। কি দরকার ছিল আপনার ত্রাণ দিতে যাওয়ার?
কাদের বলেন, চকরিয়া সার্কিট হাউজে আমি বলে দিয়েছি তার থাকা-খাওয়ার সমস্যা হলে ব্যবস্থা করতে। আমরা কাউকে অসম্মান করতে চাই না। তার খোঁজ আমি রাখছি, কিছুক্ষণ পরেই তিনি কক্সবাজার পৌঁছে যাবেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন