শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

মা ও শিশুর যত্ন

| প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মা হওয়ার অনুভূতি অসাধারণ । দেহের ভেতর ছোট্র যে দেহ, তার জন্য মায়ের যতেœর তাই শেষ নেই। সময়মতো খাওয়া, ঘুমানো আর সারাক্ষণ তার সুস্থতা কামনা করা। অনাগত সন্তানের সুস্থতার জন্য চাই মায়ের সুস্থ শরীর। মাতৃত্ব নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মাতৃত্বকালীন নারীর শরীর-মনে প্রভূত পরিবর্তন সাধিত হয়। তাই গর্ভকালীন থেকে সন্তান জন্মের পর পর্যন্ত একজন নারীকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বেশ বেগ পেতে হয়। এ সময় নারীর মন থাকে স্পর্শকাতর; শরীর তার স্বাভাবিক রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে না। তাই এ সময় নারী বিষণœতাসহ নানা মানসিক জটিলতায় যেমন আক্রান্ত হয়, তেমনি কোমর ব্যথা, হাত ব্যথা, পা ফুলে যাওয়া, পা-ভারি লাগা,নড়াচড়া করতে খুব অসুবিধা হওয়া ইত্যাদি শারীরিক জটিলতায় ভুগতে পারেন। তাই নারীর শরীর মনকে চাঙ্গা রাখতে বেশি বেশি ধর্মীয় প্রার্থনা, শরীর চর্চা, ভালো বই পড়া, বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা খুবই জরুরী।
মায়েদের নিয়ে সা¤প্রতিক গবেষণাগুলো বলছে, গর্ভাবস্থায় একেবারে শুয়ে-বসে কাটানো নারীদের চেয়ে স্বাভাসিক কাজকর্মে মগ্ন থাকা নারীরা শারীরিক জটিলতা ও প্রসবকালীন সমস্যায় কম ভুগে থাকেন। অর্থাৎ বিশেষ কারণবশত অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসময় নারীদের স্বাভাবিক কাজকর্ম বহাল রাখাই ভালো। তবে ভারি কাজ, অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক শ্রম অবশ্যই পরিহার করতে হবে। সঙ্গে পুষ্টিকর খাবার ও পানীয় গ্রহণ করতে হবে। গর্ভধারনের ষষ্ঠ মাস থেকেই দেহের আকৃতিতে পরিবর্তন ও ওজন বাড়তে থাকে। এ সময়ে কোমর ব্যথাজনিত সমস্যাগুলো বেশি হয়। কারণ এ সময় শরীরের ওজন ৮-১২ কেজি বেড়ে যায়। মেরুদন্ড তার স্বাভাবিক বাঁকটি ধরে রাখতে পারে না। ফলে তীব্র কোমর ব্যথা বা সায়াটিকা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেচিং, ব্যায়াম, আসন ও ইলেকট্রোথেরাপি যেমন ইলেকট্রিক লার্ভ স্টিমুলেশন ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শেষ তিন মাসে শরীরে পানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় চাপজনিত কব্জি ব্যথা বা সিটি এসে আক্রান্ত হতে পারেন। হাতে বরফের সেক আলট্রাসাউন্ড থেরাপি ও বিশেষ স্পিন্ট ব্যথা নিরাময় করে। ব্যথা নিয়ন্ত্রণ স্বাভাবিক প্রসবে সহায়তা বা প্রসবের পরবর্তী শারীরিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে বিশেষায়িত ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। অস্ত্রোপচারের (সিজার) পরে মা নানা শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন । এক্ষেত্রে ও পেলভিক ফ্লোর ও অ্যাবডোমিনাল মাসলের ব্যায়ামগুলো কোমর ব্যথাজনিত জটিলতা ও পেটের আকার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। রেসপিরেটরি এক্সারসাইজ শরীর মনকে সতেজ করে আর দ্রæত ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। স্বাভাবিক প্রসবকে সহজতর করতেও ফিজিওথেরাপি বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিশেষ ধরনের ব্যায়াম ও আসন পেটের বাচ্চার অবস্থানকে সঠিক রাখতে সাহায্য করে। গ্রাম বা মহল্লার গর্ভবতী মহিলারা মিলে এই বিশেষ ধরনের আসন আর ব্যায়ামগুলো অনুশীলন করতে পারেন, যা গর্ভবতীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থানকে চাঙ্গা করবে ও কমিয়ে আনবে সিজারের সম্ভাবনা। মনে রাখবেন, প্রসব জটিলতা মা ও শিশুর জীবন বিপন্ন করতে পারে। প্রসব জটিলতা থেকেই বেশীর ভাগ প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হয়। তাই দীর্ঘ সময় প্রসব বেদনার পর বাচ্চা জন্ম নিলে, জন্মের পর বাচ্চা না কাঁদলে বা জন্মের আগে বাচ্চার মা ও পরে বাচ্চা তীব্র জন্ডিসে আক্রান্ত হলে অবশ্যই বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে। তাই প্রসূতি মায়ের ও শিশুর যতœ নেওয়া প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। সচেতনতা আর সুঅভ্যাস জাতিকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারবে।

ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিষ্ট,০১৭১৬২৭০১২০

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন