শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

বিচারপতিরা না চাইলে তিনি কীভাবে বিচার করবেন প্রশ্ন অ্যার্টনি জেনারেলের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৭, ৭:২৪ পিএম

দেশে ফিরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দায়িত্ব গ্রহণ সুদূরপরাহত বলে ফের মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, আমি আগেও বলেছিলাম, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দায়িত্বগ্রহণ সূদুর পরাহত। আজকেও বলছি। কারণ, অন্য বিচারপতিরা যদি তাঁর সঙ্গে বসতে না চান, তাহলে তিনি কীভাবে বিচার করবেন? গতকাল রোববার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এর আগে গত ১৪ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে একই মন্তব্য করেছিলেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা।
অবকাশকালীন ছুটি শেষে গত ২ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট খোলার আগের দিন অসুস্থতার কথা জানিয়ে একমাসের ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এমন সংবাদ দেন আইন মন্ত্রণালয়। পরে বিদেশে যেতে আরও দশদিনের ছুটি বাড়িয়ে নিয়েছেন তিনি। গত ১৩ অক্টোবর রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ-৪৪৭ ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়া যান প্রধান বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। আর এক পর্যায়ে কাগজে লেখা একটি বিবৃতি সাংবাদিকদের দিয়ে দেন তিনি। বিবৃতিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি, কিন্তু ইদানীং একটি রায় নিয়ে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এটি সহজেই অনুমেয় যে, সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের আরো অবনতি হবে। এটি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।
প্রধান বিচারপতি দেশ ছাড়ার পরদিনই সুপ্রিম কোর্টের বিরল এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিচারপতির সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, অর্থ পাচার ও নৈতিক স্খলনসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।
সহকর্মীরা এর ব্যাখ্যা চাইলে গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা বিচারপতি সিনহা দিতে পারেননি। এ কারণে তারা অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত একই বেঞ্চে বসতে রাজি নন বলে জানানো হয় বিবৃতিতে।
এরপর গত ১৫ অক্টোবর আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে যে ১১টি অভিযোগ উঠেছে, দুদক তার অনুসন্ধান করবে। অনুসন্ধানে সত্যতা পাওয়া গেলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১ আগস্ট প্রকাশিত হয়। ওই দিনই পূর্ণাঙ্গ রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়। রায় প্রকাশের পর এ নিয়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সংক্ষুব্ধ হয়। বিশেষ করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থী আইনজীবীরা। তাঁরা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও তোলেন। বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা এ রায়কে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন। তারা সারা দেশে প্রধান বিচারপতির এস কে সিনহার আদালতে ফেরত চেয়ে মিছিল সমাবেশ করেন। প্রধান বিচারপতিকে জোর করে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে- বিএনপির এমন অভিযোগ করেন।
১৪ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বিচারিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে সংসদে ওই দিন প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আলোচনা হয়, যাতে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৮ জন সংসদ সদস্য অংশ নেন। এরপর রিভিউ করার জন্য অ্যার্টনি জেনারেল এর নেতৃত্বে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করে সরকার। গত শনিবার আইন মন্ত্রী অ্যার্টনি কার্যালয়ে গিয়ে রিভিউ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে এসে বৈঠকে বসেন আইনমন্ত্রী। দুপুর দুইটার পরে বৈঠক শেষে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা রায় পর্যালোচনা করেছি। পুরো রায়ই বাতিল চেয়ে রিভিউয়ের আবেদন জানাবো। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের রিভিউ আবেদন দাখিল করতে হবে। আমরা যুক্তিগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে এখানে বসেছিলাম। মোটামুটি যুক্তিগুলো চূড়ান্ত করেছি। এখন দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছি’। কবে রিভিউ আবেদন দাখিল করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ মাসের মধ্যেই। আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা রিভিউয়ের আবেদন করবো। তার মানে পুরো রায়কে প্রশ্ন করছি। রায়টা যে ঠিকমতো হয়নি, সেটার কথাই আমরা বলছি। এখানে কিছু এক্সপাঞ্জ করার কথা নিশ্চয়ই থাকবে। কিন্তু পুরোটাই চ্যালেঞ্জ করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন