শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

তরকারির বদলে ঔষুধ!

পিঁয়াজের পদোন্নতি

স্টালিন সরকার | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পিঁয়াজ মশলা জাতীয় পণ্য। আদিযুগ থেকেই তরকারী রান্নায় স্বাদ বৃদ্ধির জন্যই এ পণ্যটি ব্যবহার হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, পিঁয়াজ রুপ চর্চা এবং ঔষুধ হিসেবেও ব্যবহার হয়। হঠাৎ করে পিঁয়াজের দাম যে ভাবে বাড়ছে তাতে পণ্যটি ইতোমধ্যেই সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আগে যারা এক কেজি পিঁয়াজ কিনতেন এখন তারা আধা কেজি বা আড়াইশো গ্রাম পিঁয়াজ ক্রয় করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রখ্যাত অধ্যাপক পিঁয়াজ নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করলেন এই যে, আগামীতে হয়তো ডিমের হালির মতোই মশলা জাতীয় এই পণ্যটিও ‘হালি দরে’ বিক্রী হবে।
তখন মানুষ এক হলি দুই হালি পিঁয়াজ কিনবেন। তবে ঔষুধ হিসেবে ব্যবহারের জন্য পিঁয়াজের চাহিদা থাকবে। এতে পিঁয়াজ নামের পণ্যটির পদোন্নতি ঘটবে বটে; মানুষ তরকারিতে পিঁয়াজের বিকল্প পণ্য ব্যবহারে বাধ্য হবে। স্পট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স ক্লাব। ৫ নভেম্বর সন্ধ্যা। একজন খ্যাতিমান অধ্যাপক অতিথির জন্য চায়ের সঙ্গে ছোলামুড়ি ও আলুর চপের অর্ডার দিলেন। ছোলামুড়িতে সামান্য পিঁয়াজ কুচি দেয়া হলেও আলুর চপে পিঁয়াজ নেই। প্লেটের দিকে তাকিয়ে মানুষ গড়ার কারিগর অধ্যাপক দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লেন।
মনের অজান্তেই বলে উঠলেন, ‘দেখছো পিঁয়াজের অবস্থা! এখনো মানুষ এক কেজি আধা কেজি করে পিঁয়াজ কিনছে। সামনে হয়তো ডিমের মতো পিঁয়াজও হালি (চারটি এক হালি) হিসেবে কিনতে হবে। এই যে পিঁয়াজের মূল্য মরিচের দাম আকাশ ছোঁয়া; সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে; অথচ কোথাও ‘রা’ নেই। আগে নিত্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়লে মিডিয়ায় হৈচৈ হতো, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিদের টনক নড়তো। এখন আর সেটা নেই; সবকিছুই সয়ে গেছে। ভোক্তা নিরুপায় হয়ে দুইশ টাকা কেজি দরে ছিম কিনছে; ৯০ টাকা কেজি দরে পিঁয়াজ কিনছে ঠিকই; কিন্তু মানুষের অন্তরের ভিতরে যে ‘যন্ত্রণার আগুন জ্বলছে’ তা প্রকাশ করতে পারছে না। নামজাদা ওই অধ্যাপক রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেন, দেশ নিয়ে ভাবেন; দেশের মানুষে দুঃখ কষ্টে নীরবে চোখের পানি ফেলেন। আক্ষেপ করে বললেন, দেশের সব দলই দাবী করেন তাদের রাজনীতি মানুষের জন্য। সত্যিই কী তাই! পিঁয়াজসহ দ্রব্যমূল্য যে লাগামছাড়া সে দায় কার?
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক পিঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য নিয়ে যখন এমন আক্ষেপ করেন তখন সাধারণ গার্মেন্টস শ্রমিক, রিক্সা চালক, স্বল্প বেতনের চাকুরে, নিম্নআয়ের মানুষের অবস্থা কেমন? গত মাসের প্রথম দিকেও পিঁয়াজের কেজি ৪০ টাকার মধ্যেই ছিল। কিন্তু সে পিঁয়াজের কেজি এখন ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। রাজধানী ঢাকার বাজারে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেল বতর্মানে দেশি পিঁয়াজের পাইকারি দাম কেজি প্রতি ৭৬ থেকে ৮৫ টাকা, ইন্ডিয়ান পিঁয়াজ ৫৬-৬০ টাকা। খুচরা বাজারে দেশি পিঁয়াজ কেজি প্রতি (ছোটবড়) ৮০-৯০ টাকায় এবং ইন্ডিয়ান পিঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এই পিঁয়াজ মূলত মশলা জাতীয় পণ্য। রান্নার স্বাদ বাড়াতে পিঁয়াজের ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু পণ্যটির দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে আগামীতে অধ্যাপকের কথায় ‘হয়তো ডিমের মতোই হালি’ দরে পিঁয়াজ বিক্রী হবে। মানুষ চাহিদা মতো এক হালি, দুই হালি পিঁয়াজ ক্রয় করতে বাধ্য হবে। এক সময় হয়তো মানুষ তরকারি রান্নায় পিঁয়াজের বিকল্প কিছু ব্যবহার করতে বাধ্য হবে। তখন হয়তো পিঁয়াজ রান্নার কাজে নয় শুধু ঔষুধ হিসেবেই ব্যবহারের জন্য মানুষ ক্রয় করবে। কারণ অনেক আগেই পিঁয়াজের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তবে এখনো ঔষুধ হিসেবে ব্যবহারের দামের মধ্যেই রয়েছে। পিঁয়াজ প্রেমীরা হয়তো তখন সে কাজেই ব্যবহার করবে। তরকারি ছাড়াও পিঁয়াজের রয়েছে ব্যতিক্রমী কিছু ব্যবহার। তরকারির স্বাদই শুধু নয়; আমরা জানি পিঁয়াজে রয়েছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ। স্বস্থ্য সচেতন মানুষের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় পিঁয়াজ খুই উপকারী। আগুনে পুড়ে যাওয়া ব্যথা দূর করতে পিঁয়াজের রস খুবই উপকারী। শরীর যে অংশটি পুড়ে যায় সেখানে পিঁয়াজের রস লাগালে পোড়া স্থানের ব্যথা কমে যায় জ্বালা দূর হয়। মানুষের মাথার চুল পড়া কমাতে চুলে পিঁয়াজের রস মাখানোর বিকল্প কিছু নেই। চুলের যত্মে দারুণ একটি ঘরোয়া উপাদান হল পিঁয়াজ। মাথার চুলের গোড়াকে শক্ত করে পিঁয়াজের রস। তাই চুল পড়া কমে যায় দ্রুত। রূপচর্চা বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে চুল পড়া বন্ধ করা এবং ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পিঁয়াজের রসের উপকারিতা ও ব্যবহারের উপায় সম্পর্কে জানানো হয়। মূলত চুলের যত্মে ব্যবহৃত অনেক টনিকেই পেঁয়াজের রস ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি ক্লিনিকালই পরীক্ষিত যে চুল ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পেঁয়াজের রস দারুণ কার্যকর। পেঁয়াজের রস টাক মাথায় নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং জীবাণুমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
হঠাৎ হেঁচকি ওঠলে তা বন্ধ করতেও পিঁয়াজের রস ভীষণ উপকারী। এক টুকরো পিঁয়াজ কেটে, তার রস পানি মিশিয়ে পান করলে হঁচকি বন্ধ হয়ে যায়। ঠান্ডায় গলা ব্যথা হলে একটু গরম পানিতে পিঁয়াজের রস মিশিয়ে অল্প অল্প করে খেলে আরাম লাগে, গলা ব্যথা সেরে যায়। পিঁয়াজে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবেও কাজ করে থাকে পিঁয়াজ। তাই শরীরে ফোঁড়া বা ঘা পিঁয়াজের রস দিয়ে ধুলে তাড়াতাড়ি সেরে যায়। জ্বর জ্বর ভাব হলে পিঁয়াজের রস নাক দিয়ে টেনে নিলে জ্বর জ্বর ভাব চলে যাবে। শুধু কি তাই; নাটক সিনেমায় কাঁন্নার দৃশ্যে গিøসারিনের বদলে পিঁয়াজের রস চোখে দিলেই চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। এতো গুনোই বলে দেয়, অদূর ভবিষ্যতে তরকারির রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর জন্য সাধারণ মানুষ পিঁয়াজ কিনতে না পারলেও তাতে পণ্যটির কিছুই আসে যায় না। কারণ ঔষুধি গুণের কারণেই হালি দরে হলেও মানুষকে পিঁয়াজ কিনতেই হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
হিমেল ৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৪৭ পিএম says : 0
দ্রব্যমূল্যের দাম যে প্রতিনিয়ত এভাবে বেড়ে চলছে, তা কীর সরকার দেখেন না ?
Total Reply(0)
ইমতিয়াজ ৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৫১ পিএম says : 0
পেঁয়াজ আর লবন ছাড়া কী তরকারি খাওয়া সম্ভব ?
Total Reply(0)
রশিদ ৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৫৮ পিএম says : 0
অবস্তা দেখে তো সেরকমই মনে হচ্ছে
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১:০১ পিএম says : 0
অনতিবিলম্বে দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রনে সরকারকে প্রয়োজনী সকল পদক্ষেপ নিতে হবে।
Total Reply(0)
কামরুল ৭ নভেম্বর, ২০১৭, ৪:০৬ পিএম says : 0
পিঁয়াজের পদোন্নতি হলে সাধারণ মানুষকে স্বাদহীন খাবার খেয়ে মরতে হবে।
Total Reply(0)
রশিদ ৭ নভেম্বর, ২০১৭, ৪:০৭ পিএম says : 0
চাল, পেয়াজ এভাবে যদি সবার দাম বাড়তে থাকে তাহলে আমরা খাবো কী ?
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন