দেশের হাসপাতালগুলোতে প্রশিক্ষিত নার্সের সংকট থাকলেও নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মহীন, বেকার দিন কাটাচ্ছে হাজার হাজার নার্স। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ হাজার নার্স নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এরপর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখন রাজপথে আন্দোলনে নেমেছে চাকরি প্রত্যাশী নার্সরা। স্বাস্থ্যসেবা ও রোগ নিরাময়ে কার্যকর সরকারী উদ্যোগ নাগরিকদের অন্যতম মৌলিক অধিকার। দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে নাগরিক সমাজের অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। প্রথমত, দেশে আনুপাতিকহারে হাসপাতালে বেডের সংখ্যা খুবই কম, দ্বিতীয়ত, হাসপাতালে বেড অনুপাতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সংখ্যা অপ্রতুল, তৃতীয়ত, রোগী এবং ডাক্তারের অনুপাতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সের সংখ্যা অপ্রতুল। হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসাসেবা নিতে আসা একেকজন রোগীর সুচিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ, প্রয়োজনীয় প্যাথলজি- রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষার পাশাপাশি উপযুক্ত নার্সিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে রোগী অথবা আত্মীয়-স্বজনরা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সদের সেবা ওষুধ-পথ্য ও প্রয়োজনীয় থেরাপির মাধ্যমেই আরোগ্য লাভ দ্রুতায়িত করা সম্ভব।
আমাদের দেশে অনেক দক্ষ ও উচ্চ ডিগ্রিধারী ডাক্তার থাকলেও হাসপাতালগুলোতে শৃঙ্খলা এবং নার্সিং সেবার মান রক্ষিত না হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবায় পিছিয়ে আছে। নার্স সংকট দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের পথে একটি বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। স্বাস্থ্যসেবায় আন্তর্জাতিক মানদ- অর্জনের পথেও নার্স সংকট ও নার্সদের সেবার মান একটি বড় অন্তরায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকার যখন স্বাস্থ্যসেবা খাতের এই অন্তরায় সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন, খোদ প্রধানমন্ত্রী প্রথম দফায় ১০ হাজার নার্স নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর দু’বছর অতিক্রান্ত হলেও নার্স নিয়োগের কার্যকর উদ্যোগ না থাকা দুঃখজনক। হাসপাতালগুলোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সের অভাব রয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। নার্সিং পেশায় হাজার হাজার শিক্ষিত তরুণী-নারী স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরির আশায় বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করে এখন রাজপথে নেমেছে। দীর্ঘদিন ধরেই তারা সরকারের কাছে আবেদন-নিবেদন করে আসছে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে গত পাঁচদিন ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা বেকার নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। হাসপাতালগুলোতে নতুন নার্স নিয়োগ না হওয়ায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেকার নার্সরা দীর্ঘদিন ধরেই হতাশায় ভুগছে। ১০ হাজার নার্স নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পর তারা নতুন আশায় বুক বেঁধেছিল। দীর্ঘ দু’বছরেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হওয়ায় তাদের হতাশার শেষ নেই।
ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেকার নার্সদের চাকরির বন্দোবস্ত করার পাশাপাশি নার্স নিয়োগে বৈষম্যমূলক নীতি পরিহারেরও দাবি জানিয়েছে নার্সদের সংগঠনগুলো। জানুয়ারীর প্রথম দিকে বাংলাদেশ বেসিক গ্রাজুয়েট নার্সেস সোসাইটি (বিবিজিএনএস) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশ থেকে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদমর্যাদা সংক্রান্ত দুই দফা দাবি তুলে ধরা হয়। অন্যদিকে বেকার ডিপ্লোমা নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন ব্যাচ, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ ও পদোন্নতির দাবিতে এখন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে। নতুন বিধি ব্যবস্থার অধীনে নার্স নিয়োগ করা হলে চাকরিরত অনেক নার্সই বেকার হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সের সংকট এবং নার্সিং পেশার সামগ্রিক উৎকর্ষ সাধন ও মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। নার্সিং সেবার মানোন্নয়নের জন্য নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার বিষয়টি অগ্রাহ্য করা উচিত নয়। হাসপাতালে নার্স সংকট এবং নার্সিং পেশার মানোন্নয়নে তাদের প্রশিক্ষণ, মাঠ পর্যায়ের দক্ষতা মনিটরিং করা আবশ্যক। সেবার পেশায় নিয়োজিত হয়ে কিছুসংখ্যক নার্স দুর্নীতি ও অপেশাদার আচরণ করছে বলে অভিযোগ আছে। এদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সদের কাজের সুযোগ দেয়ার ত্বরিত উদ্যোগ নিতে হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সদের বেকারত্বের অভিশাপমুক্ত করে কাজের সুযোগ দেয়া হবে, এটাই সকলের প্রত্যাশিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন