বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ক্যারিয়ার

সময়ের সম্ভাবনাময় পেশা অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট

প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নুরুল ইসলাম

আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি ছোঁয়ায় দেশে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। পরিসংখানে দেখা গেছে, দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৯৫ শতাংশই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা গড়ে ন্যূনতম একটি অ্যাপ ব্যবহার করেন। প্রতিদিন দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় করেন অ্যাপস ব্যবহারে। এ ছাড়াও বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা তাঁদের স্মার্টফোন ব্যবহারের ৮৬ শতাংশ সময় ব্যয় করেন অ্যাপসে। তাই দৈনন্দিন চাহিদানির্ভর অ্যাপ ডেভেলপ করতে পারলে এখানেই এক উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। আপওয়ার্ক থেকে পাওয়া তথ্য মতে, একজন ওয়েব ডিজাইনার কিংবা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার যেখানে ঘণ্টা প্রতি গড়ে ১০ থেকে ১২ ডলার কাজ করেন, সেখানে একজন অ্যাপ ডেভেলপারের ঘণ্টা প্রতি গড় আয় ২৫ থেকে ৫০ ডলার। সুতরাং একথা ভাবার কোন সুযোগ নেই যে, শুধু মাত্র বড় বড় প্রতিষ্ঠানের জন্যই যে কেবল অ্যাপ তৈরি করা হয়। ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলোতে প্রতিদিনই অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রচুর কাজ পাওয়া যায়।

প্রাথমিক কাজ
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে হলে জাভা বা অবজেক্টিভ সি, সি++ এবং অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ও অ্যানালিসিস জানতে হবে। তবে প্রথমে তাকে বেছে নিতে হবে প্ল্যাটফর্ম। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে অ্যানন্ড্রয়েড ও আইওএস। অ্যান্ড্রয়েডের প্রোগ্রামিং ভাষা জাভা। যেকোনো প্রোগ্রামিং ভাষা শেখার পর আরো কিছু বিষয় জানতে হবে; যেমন- ভেরিয়েবল, অপারেটর, স্টেটমেন্ট, কন্ডিশন, ইটারেটর, মেমোরি ম্যানেজমেন্ট, অ্যারে ও ফাইল অপারেশন। সবচেয়ে বড় কথা হলো আপনার তৈরি অ্যাপ্লিকেশনটির নকশা। সফটওয়্যারের নকশা প্যাটার্ন প্রত্যেক প্রোগ্রামারের রপ্ত করা উচিত। অ্যানড্রয়েড ও আইওএস- এ দুটিতেই এমসিভি পদ্ধতিতে কাজ করতে হয়। ইভেন্ট হ্যান্ডলিং ছাড়াও আরো কিছু ব্যাপার আছে, যা অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং, অ্যানালিসিস, ডিজাইন, ডেভেলপমেন্টের কৌশল রপ্ত না করলে বুঝতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে।

শিখবেন কোথায়
কোন প্ল্যাটফর্মের অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট শিখতে চান, সেটি আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরপর গুগল থেকে জেনে নিতে হবে এই প্ল্যাটফর্মে অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের উপায়। ইন্টারনেট থেকেই অনেক কিছু শেখা সম্ভব। তবে হাতে-কলমে এবং দ্রুত শিখতে ভালো মানের পেশাদার প্রতিষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশে বর্তমানে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান অ্যাপস ডেভেলপমেন্টের ওপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তবে ভর্তি হওয়ার আগেই তাদের সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। দেশের সফটওয়্যার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বেসিসের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বেসিস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিআইটিএম) ও এমসিসি লিমিটেড এ ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ছোট ছোট কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের কাছে থেকে প্রাথমিক ধারণা নেয়া যেতে পারে।

দেশি কর্মক্ষেত্র
মোবাইল অ্যাপসের জনপ্রিয়তা এবং ব্যবহারিক বৃদ্ধির কারণে ইএটিএল প্রস্তুত করছে দেশীয় মোবাইল অ্যাপস বাজার। বাংলাদেশের মোবাইল অ্যাপস নির্মাতাদের আন্তর্জাতিক বাজারের সম্পৃক্ত করতেই এ উদ্যোগ বলে জানা গেছে। ইএটিএল অ্যাপসের ওয়েবসাইট (িি.িবধঃষধঢ়ঢ়ং.পড়স) থেকে আগ্রহীরা সহজে এসব অ্যাপ ডাউনলোড ও আপলোড করার সুযোগ পাচ্ছেন। ফ্রিল্যান্সার মোবাইল অ্যাপস নির্মাতাদের জন্য এ সাইটটি মার্কেটপ্লেস হিসেবে কাজ করছে। অভিজ্ঞরা তাদের তৈরি মোবাইল অ্যাপস এ সাইটের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারছেন। এ ছাড়া সিম্ফনি, গ্রামীণফোনসহ বেশ কিছু মোবাইল ফোন অপারেটর ও ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস কম্পানির অ্যাপস স্টোর রয়েছে।

কিছু সমস্যা
দেশিয় অ্যাপস ডেভেলপারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অ্যাপ তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত অবস্থা এখনো খুবই দুর্বল। প্রথম সমস্যা ইন্টারনেটের গতি। কম গতির কারণে বড় এসডিতে ফাইলগুলো নামাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়। এ ছাড়া অনলাইনে এ-সংক্রান্ত যেসব রিসোর্স রয়েছে, সেগুলোও সহজলভ্য নয়। দ্বিতীয় কারণ মূলধনের অভাব। মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্টে ক্যারিয়ার গড়তে একজন ডেভেলপারকে ভালো কনফিগারেশনের কম্পিউটার কিনতে হয়। আর সেটি যদি অ্যাপলভিত্তিক অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট হয়, তাহলে তাঁর খরচ বেড়ে আকাশচুম্বী হয়ে যায়। বাংলাদেশের বাইরে একজন ছাত্র অ্যাপলের ডিভাইসে ৫০ শতাংশ ছাড় পায় আর বাংলাদেশে অ্যাপলের কোনো ডিভাইস ঢুকলে জিনিসটির দাম কমার পরিবর্তে অনেক বেড়ে যায়।

আয় রোজগার
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের মতে, বর্তমানে মোবাইল অ্যাপসের বাজার প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলারের। ২০২০ সাল নাগাদ তা হবে প্রায় ৫৪ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারের। এদিকে মোবাইল গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ টু গাইডেন্সের মতে, অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের এই যে বিশাল বাজার, তার ৬৬ শতাংশ কাজই আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫ শতাংশ ছোট খুচরা ব্যবসায়ী, ৭৭ শতাংশ বড় ব্যবসায়ী, ৭৫ শতাংশ ব্র্যান্ড, ৫৯ শতাংশ স্টোর এবং ৭৮ শতাংশ ফাস্ট ফুড শপ অ্যাপ ব্যবহার করে। ই-কমার্সে অ্যাপের ব্যবহার দেশের মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করার পাশাপাশি অনেক বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। গত বছর ইবে অ্যাপের মাধ্যমে ২০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। তা ছাড়া অ্যাপের মাধ্যমে অ্যামাজনের বার্ষিক আয় পাঁচ বিলিয়নেরও বেশি। তাই বিলিয়ন ডলারের এই অ্যাপ-বাজারে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিক প্রচারণা কৌশল ও ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন অনুযায়ী ইউনিক অ্যাপ তৈরি করলে এই বাজার ধরতে তেমন বেগ পেতে হবে না। সুতরাং দেরি না করে আগ্রহীরা এখনই কাজে নেমে পরতে পারেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন