শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার কতটা গণতান্ত্রিক সেটা বিএনপির সামাবেশের অনুমতি দিয়ে আবারো প্রমাণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর জিরো পয়েন্টের নূর হোসেন চত্ত¡রে ‘শহীদ নূর হোসেন’ দিবসে আওয়ামী লীগের পক্ষে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
সমাবেশে বিএনপিকে অনুমতি দিয়ে তাদের প্রতি সরকার নমনীয় হচ্ছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা কোন নমনীয়তার ব্যাপার না। এটি ব্যাপার হচ্ছে যে বিএনপি সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। অনুমতি দেয়ার ব্যাপারে কোন বাধা তো কখনও ছিল না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তারা অনুমতি নিয়ে তাদের এ যাবত এমন একটি জনসভা হয়নি, যেখানে কোন বিশৃঙ্খলা হয়নি।
তিনি বলেন, এই বিশৃঙ্খলা গুলোকে ভয় পাই বলেই আমরা এই বিষয়টা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্থ ছিলাম। আমরা অনুমতি সব সময় দিতে চাই। তারা একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, তাদের অবশ্যই সভা সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার কতটা গণতান্ত্রিক এই অনুমতি দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেয়ার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে বিএনপি আসেনি বলে গণতন্ত্রের কি দোষ? তারা নির্বাচন বয়কট করলো। তারা ৫ জানুয়ারী নির্বাচন বয়কট করে গণতন্ত্র নেই বলে তারা যে বিষোদগার করে সরকারের বিরুদ্ধে, তাদের মনে রাখা উচিত এই বাংলাদেশে গণতন্ত্র না থাকলে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের সাকসেসফুল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হত না।
সরকারের সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী বলেন, এই যে আইপিইউ এবং সিপিএ সম্মেলন বাংলাদেশে সফল অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এটিই প্রমাণিত হলো যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে। আছে বলেই বিশ্বের অনান্য গণতান্ত্রিক দেশ বাংলাদেশকেই লোকেশন হিসেবে ঠিক করেছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য বিএনপিকে আহŸান জানানো হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপিকে আহŸান করলেও তারা নির্বাচনে আসবে, না করলেও নির্বাচনে আসবে। নির্বাচনে তারা আসবেই। তাদের নেতারাই বলেছে তারা নির্বাচনে আসবেন। কাজেই এখানে আহŸানের তো কোন প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, আমরা চাই প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক একটি নির্বাচন হোক। বিএনপি একটা বড় দল, তারা অংশ নিলে নির্বাচনটা প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক হবে। সেজন্য আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। তত্ত¡াবধায়ক তো পাগল আর শিশু ছাড়া আর কেউ বোঝে না এ কথা কি শেখ হাসিনার? এ কথা খালেদা জিয়ার। এখন কখনও সহায়ক, কখনও তত্ত¡াবধায়ক, আসলে তারা কি চায়, সেটাই আমরা জানতে চাই।
সংলাপের সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, সংলাপ কেন? সংলাপের দরকার তো নেই।
শহীদ নূর হোসেনের স্মৃতিচারণ করে কাদের বলেন, নূর হোসেনের রক্ত গণতন্ত্রের বন্ধু। রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে দেশ মাতৃকার ঋণ শোধ করেছেন। নূর হোসেনের স্বপ্নে গণতন্ত্র মুক্তি পেয়েছে। এখন আমাদের অঙ্গীকার হবে বহু রক্তমূল্যে অর্জিত এই গণতন্ত্রকে আমরা প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেব। এটাই আজকের দিনের অঙ্গীকার। ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ শ্লোগানকে বুকে-পিঠে লিখে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করেছেন।
তিনি বলেন, শহীদ নূর হোসেন জীবন দিয়ে দেশ মাতৃকার ঋণ শোধ করেছেন। তার আত্মত্যাগের মাধ্যমে গণতন্ত্র মুক্তি পেয়েছে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, একেএম এনামুল হক শামীম, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কার্যনির্বাহী সদস্য এসএম কামাল হোসেন, এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
তত্ত¡াবধায়ক সহায়ক সরকার মামাবাড়ীর আবদার
জামালপুর জেলা সংবাদদাতা : আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চলমান উন্নয়ন সম্পন্ন করতে শেখ হাসিনার সরকার আরেকবার দরকার। বিএনপি কি বলে, কখনো বলে তত্ত¡াবধায়ক কখনো বলে সহায়ক সরকার। মামার বাড়ীর আবদার। সংবিধানে যা আছে অন্যন্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো চলমান সরকারের অধিনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন দিয়ে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি গতকাল শুক্রবার দুপুরে জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়কে ৩টি সেতু উদ্বোধনে যাওয়ার পথে মেলান্দহে হাজরাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পথ সভায় এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আজ শহীদ নুর হোসেন দিবস। যে ছেলেটি বুকে গণতন্ত্র মুক্তি পাক পিঠে স্বৈরাচার নিপাত যাক শ্লোগান লিখে রক্ত দিয়েছিল। সেদিন নুর হোসেন ছিল ৩ জোটের রুপরেখার সৈনিক, ৩ জোটের সম্পদ বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার আগে নুর হোসেন দিবস পার করে। তখন ছিল নুর হোসেন সব রাজনৈতিক দলের সম্পদ এখন নুর হোসেন শুধু আওয়ামী লীগের। এটাই হচ্ছে তাদের ইতিহাস।
এ সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গির কবির নানক, পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমসহ আওয়ামী লীগের জেলা ও থানা পর্যায়ের নের্তৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পথসভা শেষে জামালপুর-মাদারগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে দাঁতভাঙ্গা সেতু. ঝাড়কাটা নদী সেতু ও কালু মন্ডলের দহ সেতু নির্মাণ কাজের ভিত্তিপস্তর উদ্বোধন করেন। পরে পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের মা মোছাঃ নুরুন্নাহার বেগমের চেহলামে অংশ নেয়।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুপুর সাড়ে ১১টায় হেলিকাপ্টারে যোগে হাজরাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করেন। কর্মসূচি শেষে বিকাল ৩টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন