শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বকেয়া বেতন ও মজুরি কমিশনের দাবিতে কর্ণফুলী পেপার মিলে শ্রমিক বিক্ষোভ

| প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাঙামাটি জেলা সংবাদদাতা : ৬৪ বছর পুরনো ও দেশের ঐতিহ্যবাহী বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠান রাঙামাটি কর্ণফ‚লী পেপার মিলস কেপিএম এ আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে শ্রমিক বিক্ষোভ। কেপিএম এ কর্মরত শ্রমিকরা চলতি বছরের আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই তাদের মঞ্জুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ অন্তত ৫ শতাধিক শ্রমিক কর্মচারির পাওনা বকেয়া বেতন-ভাতাদি পরিশোধের দাবিতে গতকাল রোববার কেপিএম-এর এক নাম্বার গেইট সম্মুখে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেপিএম সিবিএ সংগঠনের সভাপতি আব্দুল রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান মোক্তার, কেমিক্যাল প্লান্টের ফোরম্যান সামছুল আলম, শ্রমিক নেতা আবুল বশর প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনের অন্যতম একদফা ছিলো আজকের কর্ণফ‚লী পেপার মিলস কেপিএম। কর্তৃপক্ষের চরম অব্যবস্থাপনায় আবারো ধ্বংসের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে ঐতিহ্যবাহি কেপিএমকে। তারা বলেন, এই মিলে কর্মরত অন্তত ৫ শতাধিক শ্রমিক বিগত চার মাস ধরে কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার শিকার হওয়া এই ৫শ’ শ্রমিক পরিবার-পরিজন নিয়ে বর্তমানে চরম কষ্টে দিনযাপন করছে। দায়-দেনাভারে জর্জরিত এ কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দীর্ঘদিন বকেয়া পড়ে আছে। চরম দুঃখ-কষ্টে জীবনযাপন করছে হাজারো পরিবার।
এছাড়া কেপিএমে কর্মরত শ্রমিকদের জন্যে সরকারি নির্দেশনা সত্বেও বাস্তবায়ন করা হচ্ছেনা মঞ্জুরি কমিশন। বক্তারা অবিলম্বে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করাসহ আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই মঞ্জুরি কমিশন বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। শ্রমিক নেতারা জানান, নির্দিষ্ট সময়ের পরেও অতিরিক্ত কয়েকঘন্টা এমনকি রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করেও শ্রমিকরা পাননা কোনো মুজুরি। তারপরও তারা কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতিবিজরিত এই মিলটি রক্ষায়। কিন্তু বর্তমান কর্তৃপক্ষ কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই সিবিএ নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করাসহ শ্রমিকদের পাশে সব সময় থাকে এরকম দুই শ্রমিক নেতাকে বহিস্কার করে শ্রমিকদের উপর ষ্ট্রিম রোলার চালাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের এহেন নির্মম আচরণের শিকার শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে রোববারের আন্দোলন কর্মসূচির ডাক দেয়। তারা জানান, আমাদের দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচির পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ে যাবে কেপিএম এর নির্যাতিত শ্রমিকরা।
উল্লেখ্য, কর্ণফ‚লী পেপার মিলটি রাষ্ট্রীয় অন্যতম গুরুত্বরপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এই মিলটি বছরের পর বছর ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।
বর্তমান সরকার সম্প্রতি এই মিলে পার্বত্য রাঙামাটির দুইজন সংসদ সদস্যের আবেদন এবং রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় আবারো ভর্তুকি প্রদান করে মিলটি চালু করে। কিন্তু বর্তমানে পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এমডি ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ মিলটিতে পূর্বেকার সময়ে কাঁচামাল সরবরাহকারী ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাঁচামাল না কিনে বিদেশ থেকে উচ্চ মূল্যে কাঁচামাল সংগ্রহ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বঞ্চিত ঠিকাদারবৃন্দ।
এতে করে অন্তত ৩৫ কোটি টাকা বকেয়া বিলও তারা মিল কর্তৃপক্ষের কাছে পাওনা রয়েছেন বলে দাবি করেছেন। এমতাবস্থায় তারা পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিনানিপাত করছেন বলে জানিয়েছেন সাংবাদিকদের।
উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে কর্ণফুলী পেপার মিলের এমডি মোঃ কাদেরুজ্জামানকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে বিষয়গুলো এডমিনের সাথে যোগাযোগের কথা বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর কেপিএম’র এডমিন জাহাঙ্গীর এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে রিসিভ করলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন।
বছরের পর বছর অনাদর-অবহেলা, লাগামহীন দুর্নীতি-অনিয়ম, সরকারি নীতি-নির্ধারকদের সিদ্ধান্তহীনতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার বেড়াজাল এবং দূরদর্শী পরিকল্পনার অভাবে দিনে দিনে ধ্বংসের অতল গহŸরের দিকেই ধাবিত হচ্ছে হাজার কোটি টাকা মূল্যের কেপিএম এবং এর সম্পত্তি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন