বরাদ্দের অভাবে বগুড়ায় আর্সেনিক দূষণ রোধ সংক্রান্ত প্রকল্প গুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বগুড়ায় বাড়ছে আর্সেনিক দূষণ ও এর ফলে সৃষ্ঠি হচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। বগুড়ার জন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদ্প্তর ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার রেকর্ড অনুযায়ি বগুড়ার পল্লী অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষ রয়েছে আর্সেনিক সংক্রান্ত ঝুঁকিতে। বগুড়ায় বর্তমানে ১২ উপজেলায় সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৪ লাখ ৬৬ হাজার হ্যান্ড টিউবের মধ্যে ৬৯ হাজার ২শ’ ৮টি টিউবওয়েলই আর্সেনিক দূষণ কবলিত বলে চিত্রিত করা হয়েছে। যা মোট টিউবওয়েলের ৮ শতাংশ। আর্সেনিক দূষণের এই হার উদ্বেগ জনক বলে মনে করেন ্বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুজ্জামান। তার মতে এই বিপুল পরিমানে আর্সেনিক দুষণ কবলিত এলাকায় আর্সেনিক মুক্ত টিউবওয়েল বসানোর পদক্ষেপ না নিলে পল্লী অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার ঝুঁকি গুরুতর দিকে মোড় নিতে পারে।
বগুড়ায় বর্তমানে আর্সেনিক দূষণ কবলিত মানুষের সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাঠ জরীপের রেকর্ড অনুযায়ি ৪শ ৬৪ জন আর্সেনিক রোগী রয়েছে। ্এর মধ্যে বগুড়া সদর উপজেলায় সর্বাধিক ১শ ৯১ জন আর্সেনিক রোগী রয়েছে। বগুড়া সদর ছাড়া অপরাপর উপজেলাগুলোর মধ্যে শাহজাহানপুর উপজেলায় ৪২ জন, গাবতলীতে ৩৪ জন, ধুনটে ৮৪ জন, শেরপুরে ১০ জন, সোনাতলায় ১ জন, সারিয়াকান্দিতে ৮০ জন ও শিবগঞ্জ উপজেলায় ২২ জন আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগী রয়েছে।
তবে আর্সেনিক বিষয়ে জন সচেতনতা সৃষ্টি ও আর্সেনিক মুক্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থার জন্য পৃথক কোন বরাদ্দ না থাকায় পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জানতে চাইলে বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, ২০০৩ সালে সরকারি বরাদ্দে বগুড়ার আর্সেনিক কবলিত টিউবওয়েল গুলোকে রঙ দিয়ে চিত্রিত করার পর থেকে এই খাতে আর কোনো সরকারি বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, বগুড়ায় স্থানভেদে কোথাও সাড়ে ৪শ’ ফিট, কোথাও সাড়ে ৩শ ফিট, কোথাও আবার তার চেয়েও কম পরিমাপে টিউব বসানোর ব্যবস্থা থাকলে পুরো বগুড়াকে আর্সেনিক মুক্ত পানি সরবরাহ ব্যবস্থার মধ্যে আনা সম্ভব। আর্সেনিক বিষয়ে দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, আর্সেনিক কবলিত এলাকার মানুষ যেসব টিউবওয়েল চিত্রিত করা হয়েছে সেসব টিউবওয়েলের পানি খাচ্ছেনা বটে, তবে ওই টিউবওয়েলের পানি গবাদী পশুকে খাওয়াচ্ছে, ব্যবহার করছে শস্য ও শাকসব্জী উৎপাদনের কাজে। ফলে ভিন্নভাবে আর্সেনিক মানব শরীরে প্রবেশ করে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছে, যা কোনো ক্রমেই কাম্য নয়। বগুড়া নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় নিয়ুক্ত এনজিও সংস্থা এনজিও ফোরামের সাথে এবিষয়ে যোগাযোগ করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে তারা বগুড়ায় আর্সেনিক বিষয়ে চলমান সব কর্মসুচি বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে ঘোষণার প্রস্ততিতেই দাতারা এই খাতের অর্থ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ইতোমধ্যেই তাদের বিপুল সংখ্যক কর্মি ছাঁটাই ও করতে হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন