প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতির অস্তিত্ব, বাঙালি জাতির ইতিহাস। তিনি বলেন, ‘এই ভাষণ এদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এই ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি শুধু স্বাধীনতার ঘোষণাই দেননি, বাংলার মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে চেয়েছেন।’ প্রধানমন্ত্রী গতকাল সংসদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো থেকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় দেশ ও জাতির সাথে আমরা গর্বিত এবং এ জন্য ইউনেস্কোসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জাতীয় সংসদ ধন্যবাদ জানাচ্ছে’ শীর্ষক প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সংসদ কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ (১) বিধিতে এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের শুরুতে বাঙালি জাতি গঠনে তার আকাক্সক্ষার পথে পাকিস্তানীদের প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বলেন, ‘আপনারা সব জানেন ও বুঝেন’, অর্থাৎ বাংলার মানুষের সাথে বঙ্গবন্ধুর যে সম্পর্ক তা তিনি তুলে ধরেছেন। অপরদিকে অসহযোগ আন্দোলনে কী কী করতে হবে, গরীব মানুষের যেন কষ্ট না হয়, এ জন্য তিনি দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। আবার তিনি বলেছেন, ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি।’ কারণ তিনি জানতেন তাকে হয়তো আর কথা বলতে দেয়া হবে না। তাই তিনি সকল দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। বাংলার মানুষও তার কথার একচুল বাইরে যায়নি। তিনি যেভাবে দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সেভাবেই পুরো নয় মাস চলেছে। তিনি বলেন, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো অর্জন হয়নি। এ লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ বন্ধ করতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ’৭৫ থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত এই ভাষণ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এই ভাষণ বাজাতে গিয়ে অনেককে প্রাণ দিতে হয়েছে। ওই সময় পাকিস্তাানের প্রেতাত্মারা দেশ চালিয়েছে বলেই বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাঙালিকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ সত্যিই তা পারেনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের হৃদয় থেকে এই ভাষণ মুছে দিতে পারেনি। সরকারি রেডিও-টেলিভিশনে নিষিদ্ধ থাকলেও প্রত্যেকটি পাড়া-মহল্লায় এই ভাষণ প্রচারিত হয়েছে। ইউনেস্কোর ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে’ ৭ মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্তির প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি ৭ মার্চের ভাষণের স্বীকৃতি অর্জনের জন্য যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ‘বজ্রকন্ঠ’ নামে ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার হতো। এই ভাষণ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা নতুনভাবে অনুপ্রেরণা পেতো।
৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘ইউনেস্কোর ঘোষণা আসার পর প্রথমে মনে এসেছে আমার মায়ের কথা। যেদিন বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেবেন, সেদিন দুপুরে বাবাকে মা বলেছিলেন, তুমি একটু বিশ্রাম নাও। তোমার ওপর দেশের মানুষের অনেক দায়িত্ব। অনেকে অনেক কথা বলবে, তোমার মনে যা আসবে তুমি তাই বলবে।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল বিশ্বের শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের দিক-দর্শন। এই ভাষণে বিশ্বের নির্যাতিত মুক্তিকামী মানুষ আজও তাদের মুক্তির প্রেরণা খুঁজে পান। সূত্র : বাসস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন