নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশন যে বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মনোভাবের প্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদকে একদলীয় বাকশাল বানিয়েছেন। এভাবেই তিনি ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান। সে কারণে কোনো ধরনের সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হোক- সেটা তিনি চান না। সেজন্যই তো সিইসিও ফেনী মার্কা ও হাসিনা মার্কা নির্বাচন করতে চান। যে নির্বাচনে রাত তিনটার মধ্যে ব্যালট বাক্স ভরে যাবে। গতকাল (বুধবার) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কচিকাঁচার মেলা ভবন মিলনায়তনে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বললেন যে, সামনের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে না, সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে। তার একদিন পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছেন, না না না এটা তার ভিন্নমত। আরে! একজন কমিশনার যখন বলবেন, তখন এটা তো গোটা নির্বাচন কমিশনেরই কথা। এটার কারণটা কি? আমরা আগেই বলেছি যে, এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার হচ্ছেন একটা মাইকের হর্ণ। এই মাইকের হর্ণ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যা বলা হবে সেটাই বলবেন। কারণ তিনি জনতার মঞ্চে উঠেছিলেন। উনাকে দলীয় দায়িত্ব শপথ করিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বানানো হয়েছে।
সিইসির বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, জনগণের দাবি হচ্ছে ইভিএম দেয়া চলবে না, ইভিএম দূর থেকে ম্যানিপুলেট করার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা বার বার আপত্তি দিয়েছে বিভিন্ন দল, শুধু বিএনপি আপত্তি দেয়নি। অনেক সামাজিক সংগঠন এবং যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে যেসব সংগঠন আছে তারা গিয়েও নির্বাচন কমিশনে আপত্তি করেছে। তারা ম্যাজিস্ট্রেসিসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছে। এসব তো প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ হবে না। তিনি ফেনী মার্কা নির্বাচন করবেন, হাসিনা মার্কা নির্বাচন করবেন, রাত তিনটার মধ্যে ব্যালট বাক্স ভরে যাবে। সুবহে সাদেকের সময় ফলাফল ঘোষণা করা হবে আওয়ামী লীগের সবাই জিতেছে। এই নির্বাচন ছেড়ে তিনি আসল প্রতিযোগিতামূলক, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবেন কেনো?
মঞ্চে বসা গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে সম্বোধন করে তিনি বলেন, মাজহার ভাইরা বিখ্যাত গীতিকার। তারা গান রচনা করেন আর কণ্ঠ শিল্পী তার কণ্ঠে তা গান। নির্বাচন, এই নির্বাচন কমিশন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার। গীতিকার তো শেখ হাসিনা। আর কণ্ঠ শিল্পী প্রধান নির্বাচন কমিশনার। শেখ হাসিনা যে গান বা গীত লিখবেন সেই গানটাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কণ্ঠ থেকে সেটাই বেরিয়ে আসবে। এটাই হচ্ছে তাদের মধ্যে অলিখিত চুক্তি যেটা আমরা দেখতে পারছি না, যেটা জানি না। শেখ হাসিনা গীতিকার আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কণ্ঠ শিল্পী এর বাইরে আর কিছু নাই। এই পরিস্থিতি থেকে বেরুতে হলে সরকার পতন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে ছুটিতে পাঠানো এবং পরবর্তীতে পদত্যাগের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতিকে জোর করে, গুন্ডামি করে সরানো হয়েছে এটা সুস্পষ্ট। তাদের কথার মধ্যে দ্বৈততা, দ্বিচারিতা এবং অসহিষ্ণুতা স্পষ্ট মনে হয় যে, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ হয়নি। যেখানে প্রধান বিচারপতির ওপর গুন্ডামি হয়, তাহলে আপনার-আমার এই দেশের মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? আমরা এখন থেকে বের হয়ে গেলে যে গুম হবো না, অপহরণ হবো না, আমরা যে বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের শিকার হবো না তার গ্যারান্টি এই রাষ্ট্রে নাই। এই রাষ্ট্র এখন ডাকাতদের রাষ্ট্র, গুণ্ডাদের রাষ্ট্র।
রিজভী বলেন, এই সংসদের মাধ্যমেই বিচারপতি নিয়োগ হবে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন তখন শৃগালের মতো হুক্কা হুয়া করে তার অনুগত সংসদ সদস্য, গোটা সংসদই তো তার অনুগত, সেটাকেই সায় দেবে। এই কারণে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের প্রধানমন্ত্রী সহ্যই করতে পারছেন না। তার কারণেই শুরু হলো প্রধান বিচারপতির ওপর গুন্ডামি। দেশে অপসংস্কৃতি রোধে জাসাস নেতা-কর্মীদের সোচ্চার হওয়ার আহবানও জানান রিজভী।
সংগঠনের সভাপতি প্রফেসর ড. মামুন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন রোকনের পরিচালনায় সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গাজী মাজহারুল আনোয়ার, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, নির্বাহী কমিটির সদস্য ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, জাসাস সাধারণ সম্পাদক হেলাল খান, সহসভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, জাহাঙ্গীর আলম রিপন, মীর সানাউল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী মাজহার আলী শিবা শানু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পরে জাসাস শিল্পীরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন