রাজধানীর বনানীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে গুলি করে ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ৪ হত্যাকারীকে সনাক্ত করলেও তাদের সন্ধান পায়নি পুলিশ। বনানী বি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ১১৩ নম্বর বাড়ির প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে মুখে কাপড় বাঁধা ৪ যুবকে। একজনের মাথায় ক্যাপ পরা । মাত্র দুই মিনিটের মধ্যেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলে যায় খুনিরা। অর্থ লেন দেন ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে এ খুনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ।
একাধিক সূত্রের জানা গেছে, আর্থিক বিরোধের জের ধরেই খুন করা হয়েছে এস মুন্সিকে। আব্দুল সালাম নামে টাঙ্গাইলের এক দালালের সঙ্গে তাঁর আর্থিক বিরোধ ছিল। ছয় লাখ টাকার দাবিতে বনানী এবং টাঙ্গাইল থানায় এস মুন্সির বিরুদ্ধে মামলা করেন সালাম। এস মুন্সি দুই মাস আগে হুমকির অভিযোগে সালামের বিরুদ্ধে উত্তরা পূর্ব থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। উভয়ের বিরোধকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে পুলিশ। একই সঙ্গে দুর্বৃত্তদের চাঁদার দাবি পূরণ না হওয়ায় কিংবা টাকা লুটের উদ্দেশ্যে কেউ এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে কি না তাও পর্যবেক্ষণ করছেন তদন্তকারীরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এস এম মোস্তাক আহমেদ খান বলেন, এখন পর্যন্ত হত্যার কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর্থিক, ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক কোনো বিরোধ আছে কি না যাচাই করা হচ্ছে। তবে অফিস থেকে কিছু লুট হয়েছে বলে জানা যায়নি। খুনিরা চারজন ছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কিলার ৪ জনের প্রত্যেকের মুখে কাপড় বাঁধা থাকায় পুরো মুখ দেখা যায়নি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা যায়, মঙ্গলবার রাত ৭টা ৪৯ মিনিটে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে তারা। ফুটেজে দেখা গেছে, তাদের পরনে জিন্সের প্যান্ট ও শার্ট ছিল। এরমধ্যে একজনের পরনে ছিল টি-শার্ট। অন্য একজনের মাথায় ক্যাপ। ক্যাপ ও টি শার্ট পরিহিত দুজন আলাদাভাবে দ্রুত হেঁটে ওই প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে। বাকি দুজনকে একসঙ্গে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তাদের বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহজাহান সাজু জানান, মুন্সি ওভারসীজে ঢুকে মালিক সিদ্দিক হোসেনকে যারা হত্যা করেছে তারা পেশাদার চাঁদাবাজ এবং পেশাদার কিলার। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে চার কিলারকে দেখা গেছে। তাদের গ্রেফতারের জন্য একাধিক টিম কাজ করছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান,পরিকল্পিতভাবে সিদ্দিক হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে। কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের আড়াল করতে মুখ ঢেকে এসেছিলো। ঘটনার সময় মুন্সি ওভারসিজের মালিক সিদ্দিক হোসেন ছাড়াও আটজন কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিদ্দিক হোসেনের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, সিদ্দিক হোসেনের হাতে ও বুকে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এরমধ্যে হাতের গুলিটি একদিকে ঢুকে অন্যদিকে বের হয়ে গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ঘটনায় নিহত সিদ্দিক হোসেনের স্ত্রী জোছনা আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেছেন বলে জানান তিনি।
নিহত সিদ্দিক হোসেনের তিন সন্তানের মধ্যে শারমিন সুলতানা একটি বেসরকারি মেডিকেলের ছাত্রী, সাদিয়া আক্তার এসএসসি পরীক্ষার্থী, একমাত্র ছেলে মেহেদি হাসান পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। তাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে। রাজধানীর উত্তরার চার নম্বর সেক্টরের সাত নম্বর সড়কের বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে বসবাস করতেন সিদ্দিক হোসেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল দিনব্যাপী বনানীর মেসার্স মুন্সি রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসে বায়রার সদস্যরা কালো কাপড় পরে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন।
সংগঠনটির সভাপতি বেনজির আহমেদ জানান, তারা হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
বায়রা সদস্য হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ নেতৃবৃন্দের কাছে নিহত সিদ্দিকের পরিবারকে বায়রার পক্ষ থেকে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা অনুদান দেয়ার দাবি জানান। একইসঙ্গে তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে ১ কোটি টাকা অনুদান আদায়ে নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ করেন।
ডিবির একটি সূত্র জানায়, ফুটেজ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে খুনিরা এম এস ওভারসিজে মাত্র আড়াই মিনিট অবস্থান করে। এর মধ্যে গুলি চালিয়ে চলে যায়। তারা পয়েন্ট ৩২ বোরের গুলির আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। হত্যার ধরন দেখে গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, খুনিরা ভাড়াটে। তাদের লক্ষ্য ছিল এস মুন্সিকে হত্যা করা।
এস মুন্সির জামাতা ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যবস্থাপক আবু হানিফ বলেন, টাঙ্গাইলের সালাম নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে ঝামেলা ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে জিডিও করেছিলেন তিনি (এস মুন্সী)। এ ছাড়া আমার কিছু জানা নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন