শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ভারতের সাথে সরকারের সুসম্পর্ক নষ্ট করতে হিন্দুদের ওপর হামলা -ওবায়দুল কাদের

রংপুর জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মিথ্যাচারের ভাঙ্গা রেকর্ড বাজানো বিএনপির পুরোনো অভ্যাস। আগামী সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিতভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে। পানি ঘোলা করে অস্থিতীশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় এই অশুভ চক্রটি। এরা চাইছে এই ঘটনার মাধ্যমে তারা ভারতের সাথে আমাদের বিরাজমান সুসম্পর্ক নষ্ট করতে। কিন্তু তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। তাদের এই চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র কখনই সফল হবে না।
তিনি গতকাল রোববার দুপুরে রংপুরের পাগলাপীরের ঠাকুরপাড়া হিন্দুদের বাড়িতে আগুন ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে একথা বলেন। এসময় তার সাথে ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপিসহ স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পাগলাপীরের ঠাকুরটারির ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রামু , নাসিরনগর, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ঘটনার সাথে এই ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। আমরা আক্রান্তদের পাশে আছি। প্রশাসন প্রথম দিন থেকেই তাদের পাশে আছে। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে। সরকার ও পূজা কমিটির পক্ষ থেকে তাদের বাড়িঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। তাদের আসবাবপত্রের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। মন্দিরগুলোর পুন:নির্মাণ কাজও শেষের পথে।
তিনি আরও বলেন, আমি স্পষ্ট ও পরিষ্কার করে বলতে চাই, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই পাশবিক হামলা যারা করেছে ওপর তারা যতই প্রভাবশালী হোক। তারা কেউই রেহাই পাবে না। ইতোমধ্যেই অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদেরও গ্রেফতার করা হবে। কোন সরকারি কর্মকর্তা জড়িত থাকলেও তাকেও গ্রেফতার করা হবে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেয়া হবে। আমরা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ১১ টি পরিবারের প্রত্যেককে ২৫ হাজার, ভাংচুর হওয়া ৭ টি পরিবারের প্রত্যেককে ৫ হাজার করে এবং মন্দির সংস্কারের জন্য ১০ করে টাকা অনুদান দিয়েছি।
৭ই মার্চের স্বীকৃতিতে নাগরিক সেলিব্রেশন সমাবেশ নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা ছুটির দিনে মিটিং করেছি। নাগরিক কমিটিকে আমার নেত্রী বলে দিয়েছিলেন ছুটির দিন ছাড়া আমি মিটিং করবো না। নাগরিক সমাবেশ বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ সুশৃংখল মিটিং উল্লেখ করে কাদের বলেন, তারা বলেছে আমরা নাকি স্কুলের ছাত্র ব্যাংকের লোক ভাড়া করে নিয়ে এসেছি। শনিবার তো ব্যাংক বন্ধ থাকে। আপনারা কি কোন স্কুল ছাত্রকে ওই মিটিংয়ে দেখছেন?
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে বিএনপির মহাসচিবের কর্মসূচি বাতিলের বিষয়ে সেতু ও সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি যখন রাতে শুনলাম। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ঘটনাস্থলে যাবেন। তারপর শুনলাম। একই ফ্লাইটে যাবো। তখন ভাবলাম। ভালোই হলো। আমি নানককে অন্য সিটে বসিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আমার পাশে বসাতাম। তার সাথে কুশল বিনিময় হতো। একসাথে আসতাম। রাজনীতিতে একটি পজেটিভ সাইন দেখা যেতো। কিন্ত তিনি নিরাপত্তার অজুহাতে আসলেন না। এটার নামই বিএনপি
উল্লেখ্য, গত ১০ নভেম্বর ধর্ম অবমাননাকর চিত্র পোস্ট করার দায়ে টিটু রায়ের গ্রেফতারের দাবিতে পাগলাপীরের সলেয়াশাহ এলাকায় মানববন্ধন উত্তর বিক্ষোভে মুসল্লী-পুলিশ সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে হাবিবুর রহমান হাবিব নামের এক ফটুপাতের চায়ের দোকানের কর্মচারী নিহত এবং বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। এসময় দুর্বৃত্তরা ঠাকুরটারি গ্রামের ১১ টি বাড়িঘরে আগুন দেয় ও ৭ টি বাড়িঘরে ভাংচুর করে। এ ঘটনায় সদর ও গঙ্গাচড়া থানায় ৩ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামী করে দুটি মামলা করেছে পুলিশ। এ পর্যন্ত ওই ঘটনায় স্থানীয় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতা মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মমিনপুর ইউনিয়নের তিন ইউপি সদস্য ফজলুর রহমান, সামসুল হক ও সিরাজুল ইসলামসহ দুই শতাধিক গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে অভিযুক্ত টিটু রায়কে গত ১৪ নভেম্বর নীলফামারীর জলঢাকার গোলনা ইউনিয়নের চিরাভাজি গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে টিটু রায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গঙ্গাচড়া থানায় গত ৬ নভেম্বর আইসিটি আইনে মামলা রেকর্ড করে পুলিশ। মামলার বাদি ঘটনাস্থলের খলেয়া ইউনিয়নের লালচাদপুর গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের পুত্র পোল্টি ব্যবসায়ী রাজু আহম্মেদ। মামলাটি এখন ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে। ১৫ নভেম্বর টিটুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ১৮ নভেম্বর চার দিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করা হলে আবারও ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। সে অনুযায়ী তাকে আবারও জিজ্ঞাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার সময়সীমা রোববার শেষ হয়ে যাওয়ায় কমিটিকে আরও ৭ দিনের সময় দিয়েছে জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফ সাংবাদিকদের জানান, আমরা কাজ করছি। তদন্ত করতে একটু সময় লাগবে। আমাদেরকে আরও ৭ দিনের সময় দেয়া হয়েছে।
এর আগে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের মাঝে নগদ অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ করেন। পরে তিনি এক স¤প্রীতি সমাবেশে যোগ দেন। স্থানীয় হিন্দু মুসলিমসহ সব ধর্মের লোকজন এতে অংশ নেয়। সমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা রানা দাস গুপ্ত বক্তব্য রাখেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন