সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

মিসওয়াক : বিজ্ঞান ও সুন্নাত

আমাতুল্লাহ তামান্না | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

\ শেষ \
দেড় হাজার বছর আগে যে কাজ স্বয়ং রাসূল (সা:) করে গিয়েছেন আজ বিজ্ঞান গবেষণা করে আমাদের সে তথ্য দিচ্ছে। তো আমাদের ভেবে দেখা উচিত সুন্নত বিজ্ঞানের মুখাপেক্ষী না বিজ্ঞান সুন্নতের মুখাপেক্ষী?
গুরুনানক সম্পর্কে কথিত আছে, তিনি সর্বদা হাতে মিসওয়াক রাখতেন এবং মিসওয়াক করতেন। তিনি বলতেন, হয়তো এ লাকড়ী গ্রহণ কর, নতুবা রোগকে বরন কর।
দেখুন কত সূ² কথা! তিনি বলেছেন, মিসওয়াক দ্বারা রোগ ব্যাধি দূরীভ‚ত হয়। নতুবা অসুস্থ হওয়াটা স্বাভাবিক।
উপ-মহাদেশের এক মহান ব্যক্তিত্ব বিখ্যাত গবেষক ডা. মুহাম্মদ তারেক মাহমুদ বলেন, এ ব্যক্তির মুখে ছিল খুবই দুর্গন্ধ, এর জন্য সে উন্নত মানের টুথপেষ্ট, ঔষধ মাজন ও দুর্গন্ধ নাশক বিভিন্ন ঔষধ (গবফরপরহব অহঃরংবঢ়ঃরপ) ব্যবহার করে কিন্তু তার কোন উপকার হয়নি। এ ব্যাপারে আমার নিকট পরামর্শ চাইলে আমি তাকে পীলু বৃক্ষের মিসওয়াক ব্যবহারের পরামর্শ দিলাম এবং পদ্ধতি বলে দিলাম যে, মিসওয়াকের আগায় চিকন আঁশগুলো প্রত্যহ নতুন হওয়া উচিত অর্থাৎ প্রত্যহ সেই আঁশগুলো কেঁটে ফেলে নতুন আঁশ গুলো ব্যবহার করতে থাকবেন। নতুবা মিসওয়াকের কাঙ্খিত উপকার পাওয়া যাবে না। এ পদ্ধতিতে মিসওয়াক ব্যবহারের পর অতি অল্পদিনের মধ্যেই সে আরোগ্য লাভ করে।
মস্তিষ্ক, টনসিল, হৃৎপিন্ডের সমস্যা ও গারের ঘা নিরাময়ে মিসওয়াকের উপকারীতা:
হাকীম এস.এম ইকবাল বলেন, আমার নিকট একজন রোগী এল। তার হৃৎপিন্ডের ঝিল্লিতে জমা হয়েছিল অনেক পুঁজ। এর জন্য লোকটি চিকিৎসাও নিচ্ছিল। কিন্তু কিছুতেই সে ফল পেল না। অবশেষে অপারেশনের মাধ্যমে পুঁজ বের করা হল। কিছুদিন পর আবার পুঁজ জমা হয়ে গেল। অবশেষে সবদিক থেকে নিরাশ হয়ে সে আমার নিকট চলে এল। আমি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে পেলাম তার দাঁতের মাড়ীতে ক্ষত আছে। তাতে পুঁজ ভর্তি, দাঁতের মাড়ীর ওই পুঁজই তার হৃৎপিন্ডে গিয়ে জমা হচ্ছে। আমার এ রোগ নিরূপন সকল ডাক্তারগনও একবাক্যে স্বীকার করে নিলেন।
এবার তার চিকিৎসার পালা। প্রথমে তার দাঁত ও মাড়ীর চিকিৎসা করা হল। সেবনের জন্য কিছু ঔষধ আর ব্যবহারের জন্য দেওয়া হল পীলু বৃক্ষের মিসওয়াক। ফলে অতি অল্প দিনের মধ্যেই তার রোগ নিরাময় হল।
৩টি গাছের ডাল মিসওয়াকের জন্য উপকারী:
পীলু গাছ, নীম গাছ ও বাবলা গাছ
টনসিলের রোগীদের জন্য উচিৎ, তারা যেন তাজা মিসওয়াক দ্বারা দাঁত মাজে এবং মিসওয়াক টুকরো টুকরো করে পানিতে জাল দিয়ে গড়গড়া করে কুলি করে, তবে সে খুব দ্রæত আরোগ্য লাভ করবে ইনশা আল্লাহ।
এক লোক “থাইরাইড গø্যান্ড” রোগে আক্রান্ত ছিল। তার প্রতিক্রিয়া গোটা দেহে বিস্তার লাভ করার কারনে নি¤েœাক্ত রোগের সৃষ্টি হয়েছিল। ঘাড় ব্যথা, গলায় ব্যথা ও জ্বালাপোড়া, গলার স্বর হ্রাস পাওয়া, মস্তিষ্ক ও স্বরণশক্তি হ্রাস পাওয়া, মাথা ঘুরানো ইত্যাদি। ব্রেইন স্পেশালিষ্ট জেনারেল ফিজিশিয়ান বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা এসব রোগের চিকিৎসা করানোর পর ব্যর্থ হয়েছে। হাকীম এস.এম ইকবাল বলেন এ রোগীকে আমি মিসওয়াক কেটে তা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি দ্বারা গড়গড়া করতে দিলাম সাথে সাথে মিসওয়াক ব্যবহারেরও নির্দেশ দিলাম এভাবে খুব দ্রæত তার রোগ উপশম হল।
গালের ঘা অনেক ক্ষেত্রে গরমের তীব্রতা এবং প্রখরতার কারনে হয়ে থাকে। তন্মধ্যে বিশেষ এক প্রকার ঘা রয়েছে, যার বিষাক্ততা দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তার জন্য তাজা মিসওয়াক দ্বারা দাঁত মাজতে হবে এবং তখনকার সৃষ্ট লালাগুলো মুখের মধ্যে মলতে হবে। এ পদ্ধতিতে অনেক রোগী আরোগ্য লাভ করেছে।
হযরত আলী (রা:) বলেন, মিসওয়াক দ্বারা মস্তিষ্ক সতেজ হয়। প্রকৃত পক্ষে মিসওয়াকের মধ্যে থাকে ফসফরাস জাতীয় পদার্থ। আর দাঁতের প্রধান খাদ্যই হলো ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস।
যেসব রোগীদের গালে ফোলা, পুঁজ, রক্তিমতা, ব্যথা ইত্যাদি রয়েছে এবং দাঁতের সমস্যার কারনে চক্ষুরোগ, দৃষ্টিশক্তি দূর্বল এবং অন্ধত্বের শিকার হয়েছেন এবং ডাক্তার তাদের চিকিৎসা করে ব্যর্থ হয়ে পড়েছেন। আপনারা অতি দ্রæত মিসওয়াক ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ুন। খুব শিগগির আপনারা ফল পেয়ে যাবেন ইনশা আল্লাহ। (চক্ষু রোগের যত কারনই খুঁজে পাওয়া যাকনা কেন, দাঁতের যতেœর প্রতি অমনোযোগীতাই এর প্রধান কারন বলে বিবেচিত হবে, এছাড়া পাইওরিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্যও মিসওয়াক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরী।
অপরিচ্ছন্ন, দুর্গন্ধময় পুঁজযুক্ত দাঁত মস্তিষ্ক রোগের কারনেই পাইওরিয়ায় আক্রান্ত হতে হয়।
ব্রাশ ও মিসওয়াকের পার্থক্য:
এখানে একটি প্রশ্ন জাগে, দাঁতের পরিচ্ছন্নতা ও সুরক্ষার জন্য ব্রাশ বেশী প্রয়োজনীয়, না মিসওয়াক? তাই এখানে ব্রাশের উপকারীতা ও ক্ষতির উভয় দিক তুলে ধরা হচ্ছেÑ
ব্রাশ: জীবানু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার গনের সুদীর্ঘ পরীক্ষা নিরীক্ষার পর চ‚ড়ান্তভাবে প্রমানিত হয়েছে যে, একবার ব্যবহার করা ব্রাশ স্বাস্থের জন্য তখনই ক্ষতিকর, যখন ততা দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা হয়। কেননা ব্যবহারের দ্বারা তার মধ্যে জীবানুর ভিত্তি স্থাপিত হয়। পানি দ্বারা পরিষ্কার করলেও তা থাকে ক্রমবর্ধমান। তাছাড়া ব্রাশ দাঁতের উপরের উজ্জল স্তরকে দূরীভ‚ত করে দেয়। ধীরে ধীরে দাঁতগুলো মাড়ী থেকে বিচ্যুত হয়ে থাকে। আর খাবারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কনাগুলো দাঁতের ফাঁকে জমে মাড়ী ও দাঁতের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সুন্নতের উপর আমল করার ও তার উপকারীতা বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন