রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিআরডিবিতে অচলাবস্থা

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অফিস শূন্য, মামলা আতঙ্কে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে (বিআরডিবি) অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বিআরডিবি’র ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. আকরাম হোসেনের করা একাধিক মামলায় ঢাকা অফিসসহ দেশের বিভিন্ন শাখা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলো শূণ্য হয়ে পড়েছে। আর তাই ঢাকাসহ সারাদেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বাভাবিকভাবে অফিস করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটিতে এক ধরণের স্থবিরতা বিরাজ করছে। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে কারওয়ানবাজারের পল্লী ভবনে গিয়েও এর সত্যতা মিলেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চেয়ার ফাঁকা। যারা আছেন তাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। অনেকেই কাজে স্থবিরতার বিষয়টি স্বীকার করেন। পাশাপাশি ঢাকার বাইরের অফিসগুলোতে একই অবস্থা বিরাজ করছে।
সূত্র মতে, গত ৯ নভেম্বর যুগ্ম পরিচালক (পরিকল্পনা) পদটি বিলুপ্ত করে অবৈধবাবে যুগ্ম পরিচালক (নির্মাণ) পদ সৃষ্টি করে সেই পদে পদোন্নতি নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাশপাশি সাবেক মহাপরিচালক মো. আবদুল কাইয়ুম প্রতিশ্রুত ‘মির্জাপুরে ৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকায় বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ’ টাকা প্রদানের বিষয়টি উঠে আসে। এই নিয়ে বিআরডিবি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অবৈধবাবে যুগ্ম পরিচালক (নির্মাণ) পদ সৃষ্টি করা এবং এই পদে পদোন্নতির জন্য সিনিয়র ৮৬জনকে বাদ দিয়ে জুনিয়র কর্মকর্তা (৮৭তম) প্রকল্প পরিচালক (ইরেসপো) মো. রাশেদুল আলমের নাম সুপারিশ করা এবং মির্জাপুরে বাণিজ্যিক ভবন নির্মানে টাকা না দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি জানায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরডিবি’র এক কর্মকর্তা বলেন, গত দু’বছর থেকে নানা অনিয়মে এমনিতেই বিপর্যস্ত বিআরডিবি। এ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারপর আবার নতুন করে সিনিয়র কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে যুগ্ম পরিচালক পদে জুনিয়রকে পদোন্নতি প্রদানের সুপারিশ করা হয়। এ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। পরে নেতৃবৃন্দ গত ১২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটিতে স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে মহাপরিচালক মো. আকরাম হোসেনের সাথে বিভিন্ন দাবি নিয়ে সাক্ষাৎ করেন। কিন্তু সাক্ষাৎ করতে গেলে মহাপরিচালক ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী নেতৃবৃন্দের সাথে কোন কথা বলবেন না বলে জানান। অসাদাচারণ করেন। পাশাপাশি এ নিয়ে আন্দোলন করলে চাকরিচ্যুতির হুমকি দেন। এখানেই শেষ নয়; মহাপরিচালক এ সময় আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীকে কটাক্ষ করে কথা বলেন। একই সঙ্গে তাদেরকেই গুরুত্ব দেন না, তারপরতো কর্মকর্তা-কর্মচারী।’ এ ধরনের মন্তব্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মহাপরিচালকের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশের সহায়তায় মহাপরিচালক বিআরডিবি ত্যাগ করেন। অপরদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিচালক প্রশাসন বা ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের পদত্যাগের দাবি করেন। এ ঘটনার পর ৩দিন মহাপরিচালক বিআরডিবিতে অফিস না করে মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন। পাশাপাশি বাকবিতন্ডার ঘটনায় ১১জনকে চাকরি থেকে সাময়িক বহিস্কার, ২০জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং ৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা এবং ওয়ারেন্ট জারী করা হয়। রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মহাপরিচালকের করা গত ১৪ নভেম্বরের একাধিক মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন অফিস না করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ওই মামলায় মাঠ পর্যায়ে বিআরডিবিতে শূণ্যতা এবং অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা।
এদিকে বিআরডিবি অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও মহাসচিব এবং বিআরডিবি কর্মচারী সংসদ (সিবিএ) সভাপতি ও মহাসচিব বিআরডিবি’র মহাপরিচালকের কাছে স্মারকলিপিতে ১৬টি দাবি বাস্তবায়নের আহবান জানান। দাবিগুলো হলো- যুগ্ম পরিচালক (নির্মাণ) পদ বিলুপ্ত করে দীর্ঘদিনের চলে আসা যুগ্ম পরিচালক (পরিকল্পনা) পদটি ফিরিয়ে আনা। পাশপাশি এই পদে প্রকল্প পরিচালক (ইরেসপো) মো. রাশেদুল আলমের পদোন্নতি বাতিল করা। বিআরডিবি’র নিজস্ব তহবিলের অর্থ অণ্য কোন প্রতিষ্ঠানকে কোনভাবেই না দেয়া, মোবাইল সিম ট্রাকিং বন্ধ করার পাশপাশি ইতোপূর্বে যাদের বেতন কাটা হয়েছে তাদের বেতন ফিরিয়ে দেওয়া। পদোন্নতি পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল এবং পরিচালক পদে পদোন্নতির বিদ্যমান পদ্ধতি বহাল রাখা, পেনশন হোল্ডারদের হয়রানী বন্ধসহ প্রচলিত পেনশন প্রদান করা। এছাড়া স্বেচ্ছাচারী বদলী ও পদোন্নতি নীতিমালা বাতিল করা, স্কেলগ্রেড আপগ্রেডেশনের বিষয়ে প্রস্তাব প্রেরণসহ বাস্তবায়নের উদ্যোগ, বিআরডিবি’র স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল কমিটিতে এসোসিয়েশন ও সিবি’র প্রতিনিধি পূর্বেল ন্যয় বহাল রাখা, নকল প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা নিশ্চিত করা, গত ১২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণকরাী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার হয়রানি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, বিআরডিবি’র সকল পরিচালনা পরিষদের সদস্য হিসিবে অর্ন্তভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা, সিনিয়রদের বাদ দিয়ে জুনিয়রদের সিনিয়র পদে পদায়ন বন্ধ করা, সকল প্রকল্পের মাঠ কর্মীদের আয় থেকে দায় প্রথা বাতিল করা, প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকুরী নিয়মিতকরণের ব্যবস্থা করা, প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তরে পদায়নের ক্ষেত্রে সিনিয়রদের অগ্রাধিকার প্রদান এবং সরাসরি ৯ম গ্রেডে নিয়োগ প্রাপ্তদের একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট সুবিধা বাস্তবায়ন করার দাবি জানায়।
বিআরডিবি’র ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মো. আকরাম হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারী নেতৃবৃন্দ গত ১২ নভেম্বর যা করেছে তা এক কথায় ‘বিডিআর বিদ্রোহের’ মত ঘটনা। তাই মামলা এবং বিভাগীয় শাস্তি প্রদান করেছেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীকে কটাক্ষ করে কথা বলার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রশ্নই উঠে না। সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমিও সেই পরিবার থেকে এসেছি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
A.k,laskar ২২ নভেম্বর, ২০১৭, ২:৩৩ পিএম says : 0
( নকল প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা নিশ্চিত করা) - ভূল সংশোধন করার জন্য অনুরোধ করছি
Total Reply(0)
রিপন ২২ নভেম্বর, ২০১৭, ৬:৫৮ পিএম says : 0
চাকরি জাতীয়করণ সবার অাগে। কমর্চারীদের পেটে ভাত নেই, বছরের পর বছর বেতন ভাতা নেই, অফিসারগণ পদন্নোতি নিয়ে ব্যস্ত ।
Total Reply(0)
২২ নভেম্বর, ২০১৭, ৯:৩৭ পিএম says : 0
প্রকল্পের হাজার হাজার জনবলের মৌলিক দাবী চাকুরী নিয়মিতকরন ও আয় থেকে দায় পদ্বতিতে বেতন ভাতা প্রদান বাতিল করতে হবে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন