শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

পবিত্র জুমার মাসয়ালা-মাসায়েল

প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মাওলানা মুফতী মোহাম্মদ আবদুচ্ছমদ

॥ শেষ কিস্তি ॥
হানাফী মাযহাবের ওলামাদের মধ্যে আল্লামা ইব্রাহীম হালভী সাহেবাইনের বর্ণনার ওপর ফতোয়া দিয়েছেন, কেননা এটা হলো গ্রহণ মত। এই মত গ্রহণ করার মাধ্যমে জুমার পরে চার রাকাত ও দুই রাকাতওয়ালা সব রেওয়ায়েতের ওপর সমন্বয় রক্ষা করা যায়। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন, জুমার পূর্বাপর দুই রাকাত করে চার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কদা। হাম্বলীগণ বলেন, শুধু জুমার দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। মালেকীরা বলেন, এগুলো মনদুব তথা মুস্তাহাব।
হানাফী মাজহাবের কয়েকটি দলিল নি¤েœ পেশ করা হলো। ১। হযরত সুফিয়ান আসসাওরী ইবনুল মোবারক ও ইমাম তিরমিজি (রহ.) প্রমুখ হযরাতে কেরাম ইবনু মাসউদ (রা.)-কে অনুসরণ করেছেন যে, তিনি জুমার পূর্বে ও পরে চার রাকাত করে আদায় করতেন। ইত্তেহাফ নামক কিতাবে বলেছেন, তা মারফু হাদিস যা জুমার পূর্বে চার রাকাতের প্রমাণ বহন করেছেন। আর পরবর্তী চার রাকাতের প্রমাণ হলো সে হাদিস, যা হযরত আবু হানিফা (রহ.) হতে রেওয়ায়াত কৃত এবং মুসলিম শরিফে বর্ণিত হয়েছে এবং মারফু পদ্ধতিতে বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) আমল করেছেন।
২। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি নবী করিম (সা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার মসজিদে আগমন করেন এবং সম্ভব পরিমাণ নামাজ আদায় করেন, অতঃপর খতিব সাহেব খুতবা শেষ করা পর্যন্ত নীরব থাকেন, এরপর জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করেনÑ তাকে উক্ত জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং আরও অতিরিক্ত তিন দিনের। (ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন পৃ. ২৮৩ যেমন ইমাম তিরমিজি ও আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন)।
৩। হযরত আবু আবদুর রহমান সালামী (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত আবদুল্লাহ (রা.) আমাদেরকে জুমার পূর্বে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত আদায় করার নির্দেশ দিতেন। (উক্ত হাদিসটি মুসান্নিফে আবদুর রাজ্জাক বর্ণনা করেন এবং এর সনদ সহিহ বলেছেন। ইমাম “মু জামুল কবিরে” বর্ণনা করেছেন।)
৪। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) জুমার (ফরজ) নামাজের পূর্বে চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন এবং এর মধ্যে কোনো ব্যবধান সৃষ্টি করতেন না (বরং এক সালামে চার রাকাত নামাজ পড়তেন।
৫। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি নবী করীম (সা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্য হতে কেউ যদি জুমার পর নামাজ আদায় করতে চায়, সে যেন চার রাকাত আদায় করেন। ইমাম বুখারি ব্যতীত মুহাদ্দেসীন কেরামের এক জামাত ওই হাদিস বর্ণনা করেন। (মুসলিম শরিফ ১ম খ- পৃ. ২৮৮ সুনানে নাসায়ী ১ম খ- ২১০পৃষ্ঠা।)
৬। হযরত জাবলা বিন সুহাইম হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় তিনি বলেন, যে ব্যক্তি জুমার পরে নামাজ আদায় করতে ইচ্ছা করে, সে যেন ছয় রাকাত আদায় করে। (ইমাম তাহাবী বলেন, এর সনদ সহিহ)
৭। তিনি বলেন, আমাদেরকে হাদিস বর্ণনা করেছেন আহমদ বিন মুহাম্মদ, তিনি বলেন আমাদেরকে খবর দিয়েছেন আবু শোয়াইব আসসেমান, তিনি বলেন, আমাদেরকে খবর দিয়েছেন আবু ইসমাইল আল ফার্সি, তিনি বলেন, আমি সুফিয়ান, মুসবিয়, আবু হানিফা, মালেক বিন মাসউদ ও জায়েদ (রহ.) প্রমুখকে দেখেছি তাঁরা সবাই জুমার পরে দুই রাকাত ও চার রাকাত আদায় করতেন। (মুনাকেবে আবু হানিফা ২১৯ পৃ.)
৮। হযরত আবু ইউছুপ (রহ.)-এর মতে, জুমার পরে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ছয় রাকাত এরূপ হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত। মতবিরোধমুক্ত করার জন্য প্রথমে চার রাকাত পরে দুই রাকাত পড়া উত্তম। অতএব উপরে বর্ণিত বর্ণনাগুলো দ্বারা বোঝা যায় যে, জুমার পূর্বে ও পরের সুন্নাত অর্থাৎ কাবলাল জুমার চার রাকাত ও বাদাল জুমার ছয় রাকাত সুন্নাত নামাজ অমূলক নহে বরং তার সমর্থনে দলিল রয়েছে।
লেখক : মুফতী, ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মূঈনীয়া কামিল মাদরাসা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
khayrul Basher ৮ অক্টোবর, ২০২০, ৩:২৯ পিএম says : 0
ভালোই লিখেছেন।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন