প্রায় তিন সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক প্রচারনা শেষে আজ রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। দলীয় প্রতীকে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি এসিড টেস্ট হিসেবে গণ্য করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ইতিপূর্বে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবী জানানো হলেও অবশেষে সেনা মোতায়েন ছাড়াই পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব দিয়েই ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে প্রায় চারলাখ ভোটারের এই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী প্রচারনা শান্তিপূর্ণভাবেই সমাপ্ত হয়েছে। তবে বিএনপির তরফ থেকে ইতিমধ্যে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শণের অভিযোগ তোলা হয়েছে। সরকারীদলের ক্যাডার এবং পুলিশ সদস্যরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে এবং সরকারী দলের প্রার্থী যত্রতত্র আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও নির্বাচন কমিশনের স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার ভ’মিকা পালন করেছে বলে গত সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ থাকতেই পারে। নির্বাচন কমিশণ এসব অভিযোগের সত্যাসত্য তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করলে কমিশনের প্রতি ভোটার ও প্রার্থীদের আস্থা বাড়তো। যাই হোক, অবাধ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ সুরক্ষায় নিরাপত্তা বাহিনী, নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসন নিরপেক্ষ ভ’মিকা পালন করবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা।
রংপুর সিটি নির্বাচন এ বছরের শেষ নির্বাচন হলেও এই নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের শুরু থেকে বেশ কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা উত্তরের উপনির্বাচন এবং পর্যায়ক্রমে সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। আগামী বছরের শেষে অথবা ২০১৯ সালের শুরুতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বছরজুড়েই সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভাগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ হিসেবে রংপুর সিটি কর্পোরেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনের পরিবেশ ও মানের উপর পরবর্তি নির্বাচনগুলোতে সরকারী প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, দক্ষতা ও আস্থার প্রমান কতটা পাওয়া যাবে তা আন্দাজ করা যাবে। এমনিতে গত জাতীয় নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তি সময়ে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে বিনা প্রতিদ্বন্দিতা ও ভোটারবিহিন নির্বাচনের এক নতুন অধ্যায় মঞ্চস্থ হতে দেখেছে দেশের মানুষ। দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা পুন:প্রতিষ্ঠায় আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রতিটি স্থানীয় নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠুতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনকেই নিতে হবে। রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন থেকেই শুরু হোক দেশের নির্বাচনব্যবস্থা গণতান্ত্রিক ধারায় পুন:প্রতিষ্ঠার শুভ সূচনা।
শুধুমাত্র ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলের নামই গণতন্ত্র নয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মূল্যবোধ আরো ব্যাপক ও সুদুরপ্রসারী। গত জাতীয় নির্বাচন এবং পরবর্তীকালের স্থানীয় নির্বাচনগুলোকে কোনভাবেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে মেলানো যায়না। বিশেষত: ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং জেলাপরিষদের নির্বাচনগুলোতে সরকারীদলের যে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ দেখা গেছে তা গণতান্ত্রিক নির্বাচনব্যবস্থার জন্য কলঙ্কজনক। দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহনের ব্যাপারে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিকদলের আপত্তি থাকলেও স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে সব দলের অংশগ্রহণ নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও দক্ষতার প্রমান দিয়ে জনগনের আস্থা অর্জনের যে সুযোগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে তা কাজে লাগাতে হবে। গুরুত্ব ও প্রকৃতি বিবেচনায় স্থানীয় নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে ব্যাপক ব্যাবধান থাকলেও স্থানীয় নির্বাচনকে রাজনৈতিক দল, ভোটার এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা অর্জনের প্রস্তুতিপর্ব হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। রসিক নির্বাচনে ভোটের মাঠে উৎসবের আমেজ এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার দোলাচল কাজ করছে। প্রায় দুইশ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় বিভিন্ন বাহিনীর সাড়ে ৫ হাজারের অধিক সদস্য এবং প্রতি ওয়ার্ডে ভ্রাম্যমান আদালত এবং অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেসি মনিটরিং ব্যবস্থা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বরত কর্মকর্তা এবং মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে যথাযথ ভ’মিকা পালন করলে একটি উৎসবমুখর, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নজির স্থাপিত হতে পারে। কারচুপি ও দখলবাজির নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি কেউ দেখতে চায়না। অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে রংপুর শহরের ভোটাররা তাদের কাঙ্খিত প্রার্থীকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করতে সক্ষম হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন