শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

নীরব ঘাতক ঃ ডায়াবেটিস

| প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ডায়াবেটিস একটি মারাত্মক রোগ। এরোগ নিয়ে গভীরভাবে ভাবনার সময় এসেছে। কারণ, আমাদের দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে লাগামহীনভাবে। অনেকেই মনে করে থাকেন ২০৩০ সালে বিশ্বের ডায়াবেটিস রাজধানী হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। কাজেই এই ডায়াবেটিস নিয়ে অনেক বেশি সচেতনতার প্রয়োজন, কারণ এই রোগের প্রকোপ চোখ আর কিডনির ভীষণ ক্ষতি করে।
ডায়াবেটিস নিয়ে উদ্বেগের কারণ, এ রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। হার্টের রোগের ক্ষেত্রেও অনুঘটকের কাজ করে ডায়াবেটিস । তা ছাড়া ‘ ডায়াবেটিক ফুট’-এর কথা কে না জানে। পায়ে সংক্রমণ থেকে গ্যাংগ্রিন। সেখান থেকে সেপটিসিমিয়া হয়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই এত চিন্তা। উদ্বেগের কারণও তাই চড়চড় করে বাড়ছে।
একশোটি ‘কার্ডিও ভাসকুলার ডেথ’ হলে দেখা যায়, এর মধ্যে ২৫-৩০ জনের ডায়াবেটিস ছিল। এই অনুপাতটা ক্রমশ বাড়ছে। মানুষ কিডনির চিকিৎসার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে থাকেন। ডায়ালিসিস করাতে প্রস্তুত অথচ, ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করাতে রাজি নয়। এটাই সমস্যা। এই রোগটা হল ময়াল সাপের মতো। আস্তে আস্তে রোগীকে গিলে ফেলে। তাই হার্টের অসুখ হলে মানুষ যতটা তৎপর হয়, ডায়াবেটিসে ততটা হয় না। অথচ সঠিক সময়ে চিকিৎসা হলে ডায়াবেটিসকে ঠেকানো যায়। নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ থাকা যায়।
সব থেকে বড়ো সমস্যা হল এই রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা আছে। বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন, ইনসুলিন নেওয়া শুরু করলে জীবন বরবাদ হয়ে যায়। যতক্ষণ ‘ট্যাবলেট’ ততক্ষণ ঠিক আছে। কারো কারো ধারণা ইনজেকশন শুরু হলেই ডাক্তার বোধ হয় টাকা কামানোর জন্য রোগীকে ইনজেকশন দিয়ে থাকেন। কিংবা এই ডাক্তার কিছু জানে না। বলা বাহুল্য, এই ভুল ধারণার জন্য কিছু ডাক্তারও দায়ী। রোগীকে ধরে রাখার জন্য অনেক ডাক্তারই ইনসুলিনের বদলে ‘ট্যাবলেট দিয়ে থাকেন। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। সমস্যাটা প্রথমে বুঝতে হবে।
অগ্ন্যাশয়ে সমস্যা থাকলেই ইনসুলিন হরমোন শরীরে কম তৈরী হয় বা একেবারেই তৈরী হয় না। গøুকোজ ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদনে এই হরমোন মুখ্য ভূমিকা নেয় মানবদেহে। যাদের ছোটো থেকেই অগ্ন্যাশয় খারাপ তাঁরা ‘টাইপ ১’ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ছোটদের হয় বলে একে জুভেনাইল ডায়াবেটিসও বলা হয়। আর যাদের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অগ্ন্যাশয় খারাপ হয়, তাদের শরীরে ইনসুলিন কম তৈরী হয় বা কাজ করে না। এ হল ‘টাইপ ২’ ডায়াবেটিস। টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে তো ছোটো থেকেই ইনসুলিন নিতে হয়। এখানে কোনও বিভ্রান্তির অবকাশ নেই। সমস্যা হল টাইপ ২ নিয়ে। এই ধরণের ডায়াবেটিসে প্রথমিক অবস্থায় ট্যাবলেট দিয়েই কাজ হতে পারে। অগ্ন্যাশয় যত খারাপ হতে থাকে তত ট্যাবলেটের ডোজ বাড়তে থাকে। একটা সময় ট্যাবলেট আর কোনও কাজ করে না। তখন ইনসুলিন দিতে হয়। এই সহজ সত্যিটাকে রোগীদের সামনে তুলে ধরতে হবে। বলতে হবে যে, কিডনি, চোখ ভালো রাখতে গেলে ইনসুলিন চাইই চাই।
আজকাল ডায়াবেটিসের জন্য নানারকম নন-অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের বিজ্ঞাপন দেখা যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনও শাখার বিরুদ্ধে কিছু না-বলে একটা কথাই শুধু বলা যায়, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মেনে যদি কেউ বøাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন তাহলে বলার কিছুই নেই। নিমের মতো কিছু ভেষজে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করার মতো রাসায়নিক আছে ঠিকই, কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, এগুলোর কোনওটাই ডায়াবেটিস এর দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। একটা পর্যায়ের পর ইনসুলিন নিতে হতে পারে। সেই সঙ্গে দরকার ঘাম ঝরানো শারীরিক কসরত। পরিমিত খাওয়া-দাওয়া। তাই সবারই প্রথমে ইনসুলিন নিয়ে ভীতি দূর করতে হবে। তবে, এটা ঠিক, অ্যালোপেথিক ওষুধ দামি বলে অনেকেই বিকল্প উপায় খোঁজ করেন।
সুগার বাড়লে যেমন সমস্যা। সুগার কমলেও তাই। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই সুগার স্বাভাবিকের থেকে নীচে নেমে যায়। এমনটা হলে রোগীর বুক ধড়ফড় করে। হাত-পা কাঁপে। অস্বাভাবিক ব্যবহার করতে থাকে রোগী। কথা জড়িয়ে যায়। এদের দেখলে হঠাৎ করে মদ্যপ বলে ভুল হতে পারে। জুভেনাইল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রেও এমন সমস্যা হতে পারে। এই ধরনের শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা উচিত। ক্লাস চলাকালীন এদের টিফিন খেতে দেওয়া উচিত।
একটা প্রচলিত ধারণা ছিল, শহুরে মানুষদেরই শুধু ডায়াবেটিস হয়। এই ধারণা কিন্তু ভুল। শহরের ১০-১২ শতাংশ মানুষের মধ্যে যদি ডায়াবেটিস থাকে , গ্রামের ৫-৬ শতাংশ মানুষের মধ্যেও এই রোগ রয়েছে। বিভিন্ন সমীক্ষায় এই সত্য প্রমাণিত। আসলে, গ্রামের সঙ্গে তো শহরের দূরত্ব অনেক কমে গিয়েছে। লাইফ স্টাইলও বদলে গিয়েছে। গ্রামের মানুষ এখন আর শুধু চাষের উপর নির্ভরশীল নয়। তা ছাড়া বিনোদনের হরেক উপকরণ পরিশ্রমবিমুখ করে তুলেছে গ্রামের মানুষকেও। সবশেষে একটা কথা বলা যায়, নিজেকে ডায়াবেটিস মুক্ত রাখতে কয়েকটি কাজ করতে হবে। বয়স তিরিশের উপর হলেই বিশেষ করে বলা দরকার, ভুঁড়িকে কোনও মতেই বাড়তে দেওয়া উচিত নয়। সব সময় ফুর্তিতে থাকতে হবে। দিনে অন্তত একটা সময় ৩০-৪০ মিনিট নিজেকে ‘রিলাক্সড’ রাখতে হবে। নিয়মিত সুগার পরীক্ষা করাতে হবে। কারও পরিবারে যদি ডায়াবেটিস থাকে তবে, তাঁকে প্রতি বছর নিয়ম করে সুগার পরীক্ষা করানো উচিত। না-থাকলে ৫-৬ বছর পর পর করলেই হবে।

আফতাব চৌধুরী
বিশিষ্ট সাংবাদিক-কলামিস্ট। সদস্য, কার্যকরী পরিষদ ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন, সিলেট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
লোকমান ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:৫৩ এএম says : 0
স্যারকে অসংখ্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)
Mahbub Rahman ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:২০ পিএম says : 0
nice topic.aware ness journal. everybody have to preventing that disease importantly.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন