আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য গ্রহণের ফলে প্রয়োজনীয় অংশ দেহাভ্যন্তরে থেকে যায় আর অপাচ্য অংশ নিয়মিতভাবে মল হিসেবে দেহ হতে বের হয়ে যায়। যদি তার ব্যত্যয় ঘটে তখনি কোষ্টকাঠিন্য দেখা দেয়। কোষ্টকাঠিন্য একটি যন্ত্রণাদায়ক ও বিবক্তিকর সমস্যা, বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য, তবে সব বয়সের রোগীদের এ সমস্যায় পড়তে দেখা যায়।
কোষ্টকাঠিন্য কি?
আমরা মল শক্ত হলেই কোষ্ঠকাঠিন্য শব্দটা ব্যবহার করে থাকি। যদি দিনের পর দিন পায়খানা করতে অসুবিধা হয় এবং মল শক্ত, শুষ্ক ও নিস্কাশনে কষ্টসাধ্য হয়, তখন তাকে কোষ্টকাঠিন্য বলে। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় যে, যদি সপ্তাহে ২ বারের কম হলেই সেটি কোষ্টকাঠিন্য।
কারণ
কোষ্টকাঠিন্য হওয়ার নানারকম কারণ আছে। অনেকের কোন রোগ ছাড়া বা এমনিতেই কোষ্টকাঠিন্য হতে পারে। অনেক জটিল রোগের লক্ষণ হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কারণ গুলি নি¤œরূপÑ
আঁশযুক্ত খাদ্য ও শাকসবজী কম খাওয়া।
নিয়মিত ফাষ্টফুড ও বেশী পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করা।
অনিয়মিত খাদ্য গ্রহণ ও কম খাদ্য গ্রহণ।
খাবারের মধ্যে খুব কম তেলও কোষ্টবদ্ধতার কারণ।
অপর্যাপ্ত পানি পান করা।
সময়মতো মলত্যাগ না করা ও তাড়াহুড়ো করে মলত্যাগ করা।
মানসিক উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তা
কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম কম করা।
পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের স্বল্পতা।
দেরিতে ঘুম হতে উঠা, অহেতুক রাত জাগা বা অনিদ্রা।
উত্তেজক খাবারÑ চা, কফি, মদপান, ধুমপান ইত্যাদি গ্রহণ করা।
দূর্ঘটনা বা কোন রোগ ভোগের পর দীর্ঘদিন যাবৎ বিছানাগত থাকা।
পরিপাকতন্ত্রের অসহিষ্ণুতা
পায়ুপথের রোগ ও অন্ত্রের অস্বাভাবিকতা।
বয়স্ক ব্যক্তি, গর্ভবতী ব্যক্তি।
বিভিন্ন ঔষধ গ্রহণের ফলে ও হতে পারে। যেমনÑ ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, গ্যাস্ট্রিক, খিচুনী ও আয়রণ, ক্যালসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম যুক্ত ঔষধ।
উপসর্গ সমুহ
কোষ্টকাঠিন্যের মূল উপসর্গ হলো শুস্ক কঠিন ও শক্ত মল।
অস্বস্তি বোধ হওয়া।
জিহবায় সাদা লেপাবৃত আবরণ।
অক্ষুধা ও পেট ভরা ভাব থাকা।
খাদ্যের প্রতি রুচী না থাকা।
মল ত্যাগে অনেক বেশী সময় লাগা।
অনেক বেশী চাপের দরকার হওয়া।
অধিক সময় ধরে মলত্যাগের পরও বেগ থাকা।
মলদ্বার ও তলপেটের ব্যথা অনুভূত হওয়া।
আঙুল, সাপোজিটরি ও অন্য কোন মাধ্যমে মলত্যাগ করা।
কোষ্টকাঠিন্য প্রতিরোধের উপায়
বেশী করে আঁশযুক্ত ফলমূল, শাকসবজি খাবার খাওয়া।
বেশী করে পানি পান করা।
দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করা।
কায়িক পরিশ্রম ও ব্যয়াম করা।
প্রচুর শরবত ও তরল খাবার পান করা।
পেঁপে, বেল ও ইসবগুলের ভূষি সোনা পাতা ও এলোভেরা খাওয়া।
রাত্রে হালকা গরম দুধ পান করা।
খাদ্যাভ্যাস
যারা প্রায়ই কোষ্টকাঠিন্যে ভোগেন তাদের নি¤œলিখিত খাবার এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
ভাজাপোড়া খাবারÑ চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বিস্কুটের গুড়া ও ব্রেড ক্রাম্বে ভাজা যথাসম্ভব বাদ দিতে হবে।
হিমায়িত খাবারের পানি শুকিয়ে ফেলা হয় এবং এতে লবণ বেশী থাকে, এগুলো কোষ্টকাঠিন্য বাড়ায়।
চিপস, ¯œ্যাকস খাদ্য তালিকা হতে বাদ দিতে হবে।
কাঁচাকলা খেলে কোষ্টকাঠিন্য হয়। তবে পাকা কলা উপকারী।
বেকারী পণ্যÑ বিস্কুট, ক্র্যাকার্স, ডোনাট, পেষ্ট্রি জাতীয় খাদ্যে চর্বির পরিমাণ বেশী থাকে, তাই এগুলো খাদ্য তালিকা হতে বাদ দিতে হবে।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার যেমন: পনির, আইসক্রিম জাতীয় খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়াতে পারে।
লাল মাংস যেমনÑ গরু, খাসি, ভেড়া, মহিষের মাংসে চর্বি বেশী থাকে। এগুলো কোষ্টকাঠিন্য বাড়াতে পারে।
কি কি খাবার খেতে পারেন?
খোঁসাযুক্ত ফলমূল আঁশ সমৃদ্ধ, যা কোষ্টকাঠিন্য দুর করে।
টক দই হজমে সহায়ক।
পাকা কলা, বেল, পেঁপে হজমে সহাযতা করে।
গোটা শস্য, ভূট্টা ও গমের তৈরী খাবার গ্রহণ।
ডাল, ডালজাত খাবার ও কোষ্টকাঠিন্য দূর করে। কারণ এগুলোতে প্রচুর আঁশ থাকে।
বীজ জাতীয় খাবারে প্রচুর আঁশ থাকে। এগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে।
ঢেঁকিছাঁটা চাল, লাল আটা ইত্যাদিতে আঁশ আছে, যা গ্রহণে কোষ্টকাঠিন্য দূর হয়।
ভিটাডমিনÑবি অন্ত্রের কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ভিটামিনÑ বি সমৃদ্ধ খাবার যেমনÑ ডিম, যকৃৎ, টমেটো, শালগম, মুলা, শিম, ছোলা, বাঁধাকপি, পেঁয়াজ ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
শিম, বরবটি, মটর, পাতাজাতীয় সবজীতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে, এগুলো কোষ্টকাঠিন্য দুর করে।
শিশুদের তরলজাতীয় খাবার যেমনÑ দুধ, স্যুপ, শরবত, সাগু, বিভিন্ন ফলের রস, তরকারীর ঝোল, পাতলা ডাল প্রত্যহ খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদী কোষ্টকাঠিন্যের জটিলতা
দীর্ঘদিন ধরে কোষ্টকাঠিন্যে ভূগলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমনÑ
মল ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হওয়া।
পাইলস, ভগন্দর, গেজ হতে পারে।
মলদ্বার বাইরে বের হয়ে আসতে পারে।
প্রসাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মানসিক অশান্তি, দুশ্চিন্তা দেখা দিতে পারে।
খাদ্যনালিতে প্যাঁচ লেগে পেট ফুলে যেতে পারে।
খাদ্য নালীতে আলসার বা ছিদ্র হয়ে যেতে পারে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
চিকিৎসা
কোষ্টকাঠিন্যের জন্য অনেকে কারণ অনুসন্ধান না করেই মল নরম করার জন্য বিভিন্ন ঔষধ গ্রহণ করে থাকে। সেটি খুব একটা আশা ব্যঞ্জক নয, বরং ক্ষতিই ডেকে আনে। তাই প্রথমে কারণ অনুসন্ধান করে তার চিকিৎসা নেওয়া অতি জরুরী।
প্রত্যহ মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
হোমিও মতে বিভিন্ন ঔষধ লক্ষণ অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডাঃ মোঃ হুমায়ুন কবীর
কনসালটেন্ট, রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
৮৯, সিটি করপোরেশন মার্কেট, নিমতলী
চাঁনখারপুর, ঢাকা-১০০০।
মোবাইলঃ ০১৭১৭৪৬১৪৫০, ০১৯১২৯৭২৮৯৪
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন