শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

আর্থিক খাতের নাজুক চিত্র

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দেশের অর্থনীতির পরিধি বাড়ছে। অন্যদিকে, সাধারণ মানুষের মধ্যে হাহাকারও বাড়ছে। কারণ, সমগ্র আর্থিক খাতই যেন নাজুক হয়ে পড়ছে। যা আমাদের মত সাধারণমানুষের পক্ষে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা দূরহ। তাই এ ক্ষেত্রে দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদদের অভিমত প্রণিধানযোগ্য। গত ২১-২৩ ডিসেম্বর, ১৭ ঢাকায় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদগণ দেশের বর্তমান আর্থিক খাতের চালচিত্র বর্ণনা করেন। তাদের বক্তব্যসমূহ বর্ণনা করাই হচ্ছে এ নিবন্ধের মূল বিষয়। কারণ, তাতেই দেশের সা¤প্রতিক কালের আর্থিক খাতের দর্পণ চিত্রিত হবে। এমনকি দেশের অন্য খাতেরও। উক্ত সন্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘অর্থশাস্ত্র ও নৈতিকতা’। সম্মেলন উপলক্ষে ১৯ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাবেক সভাপতি, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহŸায়ক ও ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেন, ‘দেশের অর্থ ব্যবস্থাপনা যেভাবে চলছে, তাতে আর্থিক খাতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি রয়েছে। এজন্য অর্থ ব্যবস্থাপনা সংস্কারের বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। সঠিকভাবে তদারকি করা হলে দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে। প্রচলিত ব্যাংকিং খাতের জন্যে এতগুলো ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। এটা চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি’। বর্তমান শিক্ষা ও আর্থিক খাতের অবক্ষয়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীদের গোল্ডেন পাওয়া নিয়ে অভিভাবকরা খুশি হলেও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার গোড়া দুর্বল হয়ে পড়ছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছাত্র-ছাত্রীরা বের হয়ে কর্মস্থলে কী ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে সংশয় আছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, অধিকাংশ বে-সরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা সরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ খেলাপি। ফলে এই খাতটিতে এখন ধস নামছে। এছাড়া আগে মাত্র ৭টি ব্যাংকের তদারকি করতো বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে ৫৭টি ব্যাংকের তদারকি করতে হয়। তাই এর পরিধিও বাড়ানোর সময় হয়েছে।’
সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দিয়েই আয়বৈষম্য ও দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন প্রবৃদ্ধির সুবিধা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া। আর সম্পদের সুষ্ঠু সমবণ্টন নিশ্চিত করতে পারলেই অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। আর তখনই মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হবে।’ এর পর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ ও সিপিডি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান তার বক্তব্যে বলেন, ‘দেশের ব্যাংকিং খাতে সংকট চলছে। নৈতিকতার অভাব, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতা, রাজনৈতিক ও ক্ষমতার প্রভাবের কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ খাতে সুস্থ প্রতিযোগিতা কমেছে।’ তিনি তার বক্তব্যে আরো বলেন, আর্থিক খাতসহ পুরো শাসন ব্যবস্থায়-ই নৈতিকতার অভাব রয়েছে। পুঁজিবাজার যেন জুয়ার আসর (ক্যাসিনো)। গার্মেন্টসের শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নেই। বিচারবিভাগে নৈতিকতার অভাব। সুষ্ঠু গণতন্ত্রের অভাব, প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনৈতিক প্রভাব ও সর্বত্র বৈষম্য রয়েছে। তিনি আরো বলেন, অর্থনীতি একটি শৃংখলা। এখানে নৈতিকতা বড় বিষয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে নৈতিকতা অনুপস্থিত। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় অর্থনীতি চলছে। এতে জমি, সম্পদ, বণ্টন ব্যবস্থাসহ সবকিছুতে এক ধরনের বৈষম্য চলছে। অর্থায়নের দুটি খাত- ব্যাংক ও শেয়ারবাজার। আর এ দুটিতেই সমস্যা। অর্থনীতি বিকাশে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক ব্যাংকিং খাত জরুরি। কিন্তু দেশের ব্যাংকিং খাতে সংকট চলছে। ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ খেলাপি। আর খেলাপিদের জন্য এক ধরনের উদ্ধার তৎপরতা দেখা যায়। এই খেলাপিরা প্রায় সবাই এলিট শ্রেণির। তাদের প্রভাব ও ক্ষমতা রয়েছে। ঋণের সুদের হার (কস্ট অব লেন্ডিং) সবার জন্য এক রকম নয়। একেকজন একেক রেটে ঋণ পাচ্ছে। প্রতিযোগিতার বাজার প্রায় ধ্বংস হয়েছে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বাংলাদেশ ব্যাংক) বড় ধরনের ব্যর্থতা রয়েছে। সব কিছুতেই রাজনৈতিক আধিপত্য বাড়ছে। শেয়ারবাজার যেন জুয়ার হাট। এক টেবিলে বসে টাকা আয়ের মাধ্যম। কারসাজি ও ফটকাবাজির (স্পেকুলেশন) মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। এখানেও সুস্থ প্রতিযোগিতা নেই। ফলে শিল্পায়নের পুঁজির জন্য এটি সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারছে না। বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। এগুলো মোট দেশজ উৎপাদনে(জিডিপি) যোগ হলে দেশের অর্থনীতির চেহারা পরিবর্তন হয়ে যেত।’ তিনি আরো বলেন, বাজার ব্যবস্থায় অনৈতিক কার্যক্রম পুরো অর্থনীতিকে ঝুঁকিতে ফেলছে। দেশের রফতানির সবচেয়ে বড় খাত গার্মেন্ট শিল্প। কিন্তু এখানে বড় ধরনের বৈষম্য রয়েছে। শ্রমিক তার ন্যায্য মজুরি পায় না। অন্যদিকে, শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতার অভাবে শিক্ষার গুণগত মান কমছে। স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক নিরাপত্তাসহ সবকিছুতে বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে। সুষ্ঠু গণতন্ত্রের চর্চা নেই। রাজনৈতিকভাবে সমাজ বিভক্ত। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও অভ্যন্তরীণভাবে গণতন্ত্রের চর্চা হয় না। নিজেদের জবাবদিহিতা নেই। দলগুলোর মধ্যে সাংগঠনিক শৃংখলা কম। এখানেও বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে। দলগুলোর মধ্যে অর্থ ও পেশিশক্তির ক্ষমতা ক্রমেই বাড়ছে। ফলে মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে অনেক দূরে আছে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে। সমাজের অন্যতম সমস্যা হল দুর্নীতি। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও দুর্বল শাসন ব্যবস্থা পুরো রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে প্রভাব ফেলে। সুষ্ঠু সমাজে সবার জন্য সমান সরকারি সেবা থাকতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করার মানে হলো- সবার বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত সমাজে এটি কঠিন হয়ে পড়ছে। সামাজিক প্রণোদনার পরিবর্তন জরুরি। আর বৈষম্য কমাতে হলে অর্থনৈতিক সিস্টেমে নৈতিকতা নিশ্চিত করতে হবে।’
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আবুল বারকাত স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘বর্তমান সময়ের অর্থনীতি শিক্ষা নীতিহীন ও জনকল্যাণ বিমুখ হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যে অর্থনীতি পড়ানো হচ্ছে, তা শুধু স্যুট-বুট পরা কেরানি তৈরি করছে। তাই দর্শন ও নৈতিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া বর্তমান অর্থনীতি শাস্ত্রের পাঠ্যক্রমে বড় ধরনের সংস্কার আনা প্রয়োজন। কারণ, অর্থনীতি শাস্ত্র ৫০০ বছর ধরে যেভাবে এগিয়েছে তা থেকে এটা স্পষ্ট যে, এ শাস্ত্র জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে অথবা এ শাস্ত্র জনকল্যাণের কথা ভাবেনি। অর্থনীতি শাস্ত্রে এখন তিনটি বড় ধরনের ব্যর্থতা রয়েছে। এগুলো হলো বুদ্ধিবৃত্তিক, নীতি-নৈতিকতা ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা। বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যর্থতা হচ্ছে: পুঁজিবাদী বাজারব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেই নিজেকে সংশোধন করে নেয়, এই চিন্তাধারাই অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যর্থতা। নীতি-নৈতিকতার ব্যর্থতা হচ্ছে: ‘আমরা শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্যই প্রবৃদ্ধির পূজা করেছি, ভালো জীবনের জন্য নয়।’ আর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা হচ্ছে: আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান ফলপ্রদ বাজার তত্তে¡ বিশ্বাসী। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠান মনে করে, অর্থবাজারকে তেমন নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজন নেই।’ অপরদিকে, অধিবেশনে পঠিত প্রবন্ধে বলা হয়েছে, অর্থনীতিতে যাঁরা উচ্চতর সনদ অর্জন করছেন, তাঁদের এখন চাণক্য, অ্যারিস্টটল, এডাম স্মিথ, কার্ল মার্ক্স জানার প্রয়োজন যেমন পড়ে না; একইভাবে তাঁদের এখন মানুষ, সমাজ, ইতিহাস, রাজনীতির বিবর্তন ও বৈশিষ্ট্য না জানলেও চলে। দর্শন ও নৈতিকতা থেকে অর্থনীতি শাস্ত্রের এখন স্থায়ী বিচ্ছেদ ঘটেছে। সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা-প্রশাখার মতো অর্থনীতি এখন খÐিত ও গÐিবদ্ধ। চাহিদা-সরবরাহের চিরাচরিত বিধি ও তার সঙ্গে সম্পর্কিত গাণিতিক মডেলের বাইরে ছাত্রদের বেশি কিছু না জানলেও চলে।’ প্রবন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অর্থনীতি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘সামষ্টিক ও ব্যষ্টিক অর্থনীতির জ্ঞানের সঙ্গে স্নাতক পর্যায়ে দর্শন, ইতিহাস, গণিত, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান ও রাজনীতি নিয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্কুলের সঙ্গে অর্থনীতি শাস্ত্রের ছাত্রদের সম্পৃক্ত করতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘সাধারণ মানুষের জীবনে সমস্যা দুটো। একটা হলো সে কীভাবে বাঁচবে, আরেকটা হলো বাঁচার জন্য কী করতে হবে। পুঁজিবাদের বিকল্প সাম্যবাদ সাধারণ মানুষকে তেমন কিছু দিতে পারেনি। সাম্যবাদের দর্শন যদি এতই আকর্ষণীয় হয় তাহলে রাশিয়া ও চীন শুধু রাজনীতির জন্য সাম্যবাদ, আর অর্থনীতির জন্য বাজার ব্যবস্থার কাছে যেত না। এই প্রশ্নের উত্তর অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিকদের খুঁজতে হবে। অর্থনীতির সঙ্গে নৈতিকতার একটি সর্বজনীনযোগসূত্র বের করতে হবে। অর্থনীতি শাস্ত্রকে অবশ্যই নৃতত্ত¡, সমাজ বিজ্ঞানসহ সব বিষয়ের সঙ্গে সমন্বয় করেই অগ্রসর হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে এক সেমিস্টারের জন্য গ্রামে পাঠানো উচিত। অর্থনীতিতে নৈতিকতার চর্চা বাড়ানোর পাশাপাশি আচরণগত দিক নিয়েও আলোচনায় গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ অর্থনীতি হলো মূলত মানুষের খাসলত বা চিন্তাভাবনার ফসল।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে মূলত অর্থনীতিবিদগণই বক্তব্য দিয়েছেন। এই বাইরে ছিল জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ডেপুটিস্পিকার। বক্তাগণ প্রধানত দেশের বর্তমান অর্থখাতের দিক নিয়েই বিশ্লেষণ করেছেন। তার সাথে প্রসঙ্গতভাবে দেশের অন্য খাতের বর্তমান বিষয়টিও আলোকপাত করেছেন। ফলে দেশের সা¤প্রতিক কালের সামগ্রিক চিত্রই ফুটে উঠেছে। স্মরণীয় যে, বক্তাদের প্রায় সকলেই সরকারের ঘরানার লোক বলে পরিচিত। তাই তাদের বক্তব্য নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। বরং তাদের বক্তব্যের বাইরে আরো করুণ চিত্রও রয়েছে। বিশেষ করে আইনশৃখলা পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। সরকার বিরোধী বলে খ্যাত কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিকে উক্ত সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হলে এবং তাদের কথা বলার সুযোগ দেয়া হলে হয়তো আরো কিছু সত্য চিত্র ফুটে উঠতো। যাহোক, অর্থবিদগণ যা বলেছেন, তাতে দেশের সামিগ্রক চিত্রই মোটামুটি ফুটে উঠেছে। তাতে প্রতিয়মান হয়, দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। এবং তার ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে আরো খারাপ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রণিধানযোগ্য। তাতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ঋণের ১১% খেলাপি। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে এটি ৪.৩৪%, হংকংয়ে ০.৯%, চীনে ১.৭৪%, মালয়েশিয়ায় ১.৬৫%, থাইল্যান্ডে ২.৮৮% ও ফিলিপাইনে ১.৯৫%।’ এই পরিস্থিতিতে গত ২৫ ডিসেম্বর এক দৈনিকে বলা হয়েছে, ‘দেশে খেলাপি ঋণ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় অর্থনীতিতে তীব্র ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ঋণখেলাপি, জালিয়াতি, আত্মসাৎ, এমনকি ব্যাংক ডাকাতি ও নানা আর্থিক কেলেঙ্কারি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, প্রতিযোগী দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে পড়েছে।’ অর্থাৎ ঋণ খেলাপীরা দেশের ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে ফেলেছে। ফলে অনেক ব্যাংক দেউলিয়া হতে চলেছে। অবস্থার পরিবর্তন না হলে স্বল্প দিনের মধ্যে বেশিরভাগ ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে পড়তে পারে বলে জনমনে আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, দেশের উন্নতিকে মারাত্মকভাবে বিঘিœত করেছে অর্থপাচার। কারণ, ২০০৪ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় বহুবার প্রচারিত হয়েছে। আরো উল্লেখ্য, চলতি বছরে চালসহ প্রায় সব পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দারিদ্র্যহার বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে স¤প্রতি আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা মন্তব্য করেছে, বন্যার কারণে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত, রেমিটেন্স ও রফতানি হ্রাস, আমদানি বৃদ্ধি, বিনিয়োগ না থাকা ইত্যাদি কারণে চলতি বছরে প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের নিচে নেমে যাবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন