পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বাংলাদেশের এই প্রথম যাত্রা করা আন্তর্জাতিক মানের ফিস এ্যাকুরিয়াম ‘রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড’ ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে পর্যটক ও দশনার্থীদের মাঝে। উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিদিন সহ¯্র দর্শনার্থী এই এ্যাকুরিয়াম পরিদর্শনে আসছেন বলে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে এটি পরিদর্শন করেছেন সেতু ও সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কয়েক ডজন এমপি ও সচিবসহ অসংখ্য ভিআইপিরা। দেখা গেছে, কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা হাজারো পর্যটক প্রতিদিন এই এ্যাকুরিয়াম পরিদর্শনে ভিড় করছে। গতকাল ‘রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড’ এ্যাকুরিয়াম পরিদর্শন করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমে দ্বীন, বায়তুশ শরফের পীর আল্লামা মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন (ম.জি.আ)।
এসময় তাঁকে অভ্যর্থনা জানান ‘রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট উদ্দ্যোক্তা মোহাম্মদ শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি পীর সাহেব হুজুরকে এ্যাকুরিয়াম, ফিস মিউজিয়াম, থ্রি ডিসহ দর্শনীয় অনেক কিছু দেখান। মনোমুগ্ধকর এসব দেখে কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান আল্লামা মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন। পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, এটি দেখে দর্শনার্থীরা শুধু বিনোদন পাবেন না, এটি ধেকে তারা মহান আল্লাহর অপার সৃষ্টি সাগর ও সাগর সংক্রান্ত অনেক অজানা তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন। এ ধরণের একটি আশ্চর্য্যজনক এ্যাকুরিয়াম স্থাপনের জন্য পীর সাহেব বায়তুশ শরফ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। পরে ‘রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড’ এর উন্নতি-সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজার বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক এম এম সিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম-সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম কামাল, দৈনিক ইনকিলাবের বিশেষ সংবাদদাতা শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ফরিদ আহমদ, ‘রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড’ এর জেনালে ম্যানেজার কাজি মোহাম্মদ নিজামুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ আবু, কক্সবাজার নিউজ ডট কম (সিবিএন) এর বার্তা সম্পাদক ইমাম খাইর, সাংবাদিক জাহেদুল ইসলাম প্রমুখ।
উল্লেখ্য কক্সবাজার পর্যটনে নতুন সংযোজন হয়েছে রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টার। শহরের অভ্যন্তরে চিত্ত বিনোদনের খোরাক হিসেবে কক্সবাজারে এই প্রথম আন্তজার্তিক মানের ফিশ এ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্স এটি। পর্যটন শিল্প বিকাশে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একমাস আগে গত ৩০ নভেম্বর ২০১৭ ইং আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। উদ্বেধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কক্সাবজার সদরের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, এমপি আশেকুল্লাহ রফিক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।
রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী এই প্রতিবেদককে জানান, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে দুই বছর আগে রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ইট-পাথর আর কংক্রীটে আবদ্ধ জীবন থেকে এখানে এসে খানিকটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ও বিনোদনের স্বাদ পাবে দেশী-বিদেশী পর্যটকসহ শহরবাসী।
তিনি আরো জানান, ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টারকে মোট ৮টি জোনে গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে থ্রি-নাইন ডি মুভি দেখার নান্দনিক স্পেস, দেশী-বিদেশী নানা প্রজাতির পাখি, ছবি তোলার আকষর্ণীয় ডিজিটাল কালার ল্যাব, শপিং ষ্পেস, লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্ট, এবাদত খানা, শিশুদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা, বিয়ে বা পার্টির করার কনফারেন্স হল ও ছাদে প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করার পাশাপাশি আয়োজন রয়েছে বার-বি কিউর। এছাড়া রয়েছে সুপরিসর পার্কিং ও লাগেজ রাখার লকার। এখানেই এসে কোন রকম বিরক্তি ছাড়াই কিভাবে নিমিষেই ৪ থেকে ৫ ঘন্টা কেটে যাবে বুঝাই যাবে না। পুরো সেন্টার নিরাপত্তা বেষ্টনী সিসিটিভির আওতায় রয়েছে সর্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে।
এখানকার মূল আকর্ষণ ফিশ এ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্স। এ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, সাগর ও মিঠা পানির বর্ণিল রাজত্ব। সেখানে বিচরণ করছে প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছ। জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পুকুর ও সমুদ্রের গভীর তলদেশে বসবাস করা নানা প্রাণীর বসবাসের চিত্র। এখানে কেউ ঢুকলে মনে হবে সমুদ্রের তলদেশে অবস্থান করছেন তিনি। মাছের যতœ ও খাবার দিতেও রয়েছে ডুবুরী। এ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্স অবলোকনে বিদেশীদের জন্য ২০০০ হাজার টাকা, দেশী পর্যটক বা স্থানীয়দের জন্য ১০০০ হাজার টাকা ও শিশুদের জন্য রয়েছে সুলভ মূল্যের ব্যবস্থা। তাছাড়া মাপ অনুযায়ী শিশুদের জন্য রয়েছে ফ্রি ব্যবস্থা। এছাড়া টিকেটের উপর রয়েছে ৫০% মূল্য ছাড়।
রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার ও ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন জানান, বর্তমান প্রজন্মকে গ্রাস করছে ইন্টারনেট। এতে শিশুদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে। পাশাপাশি বিনোদনের উৎস খুঁজে না পেয়ে অনেকেই বিপদগামী হচ্ছে। এছাড়া অধিকাংশ শিশু-কিশোর সমুদ্র ও মিঠা পানির মাছ সম্পর্কে অজ্ঞ। তাই তাদের বিলুপ্ত হওয়া প্রাণীসহ বিভিন্ন মাছ সম্পর্কে ধারণা দেশে এই প্রথম আন্তর্জাতিক মানের এ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে কক্সবাজারে। এটি কক্সবাজারবাসীর জন্য গৌরবের বলেও জানান তিনি। রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টার যাত্রার মাধ্যমে পর্যটনে নব দিগন্তের সূচনা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন