বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

অতিরিক্ত লবণ : নানা রোগের উৎস

| প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মানব দেহের অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লবন। এই লবণ আমরা নানা খাদ্য হতে গ্রহণ করি। আবার সরাসরিও গ্রহণ করি। তরকারি তৈরী করতে লবণ ব্যবহার করা হয়। আবার নানা সালাত বা টক জাতীয় খাবার খাওয়ার সময় লবণ দিয়ে খাই। আমরা যে ভাবেই খাইনা কেন লবণ খেতে হবে পরিমিত। অতিরিক্ত নয়। অতিরিক্ত লবণ আমাদের শরীরে নানা জটিল রোগ সৃষ্টি করে। তাই লবণ খাওয়ার ব্যাপারে খুবই সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। লবণের রাসায়নিক নাম সোডিয়াম ক্লোরাইড। সোডিয়াম আমাদের দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাব হলে দেহে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ সোডিয়ামের উৎস লবন।

দৈনিক চাহিদাঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতিদিন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি ৬ গ্রাম বা ১ চা চামচ বা তার কম লবণ গ্রহণ করতে হবে। এ সংস্থার নির্দেশনা মতে সুস্থ থাকতে হলে খাবার টেবিলে কোনো লবণ বা লবণদানি রাখা যাবে না। এমনকি রান্নায়ও অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার করা যাবে না। আমাদের দৈনিক সোডিয়ামের দরকার ১০০০-৩০০ মিলি গ্রাম। বিশেষজ্ঞরা বলেন তা ২৪০০ মিলিগ্রামের বেশি নয়। সোডিয়ামের এ চাহিদা পূরণের জন্য প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রতিদিন প্রায় ৬ গ্রাম, ৭-১০ বছর বয়সী শিশুদের ৫ গ্রাম, ৪-৬ বছর বয়সীদের ৩ গ্রাম, ১-৩ বছর বয়সীদের ২ গ্রাম, ৬ মাস বয়সী শিশুদের প্রতিদিন ১ গ্রাম লবণ খাওয়া উচিত। ছোট শিশুদের কিডনী বেশি লবণ সহ্য করতে পারে না। তাই শিশুদের আরও কম পরিমাণ লবণ খাওয়া উচিত।
উপকারিতাঃ পরিমিত লবণ দেহের সোডিয়ামের অভাব পূরণ করো। দেহের হাড় ও মজবুত করে। হজমের সহায়তা করে ও রক্ত পরিষ্কার করে। জিহŸায় স্বাদ বাড়ায় , খাদ্য দ্রব্যবে পচনের হাত থেকে রক্ষা করে। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে লবণ রক্তের ও শরীরের তরল রসের ঘন হয়ে যাওয়া বা দানা বাধাঁ রোধ করে সে গুলোকে তরল বা দ্রবনীয় অবস্থার রাখে।
অপকারীতাঃ সুস্থ শরীরের জন্য লবণ অবশ্যই প্রয়োজন তা তা পরিমিত খেতে হবে। আবার চিকিৎসক ও গবেষকদের মতে, শরীরের নানা জটিল রোগ সৃষ্টি করে লবণ। যা গুপ্ত ঘাতক হিসেবে মানুষকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। অতিরিক্ত লবণ দেহে সমস্যার সৃষ্ঠি করে তা হলোঃ
* বিশেষজ্ঞদের মতে, লবণের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য হলো এটি পর্যাপ্ত পানি ধারণ করতে পারে। একারণে রক্তে পানির পরিমান বেড়ে যায়। ফলে রক্তনালিতে পানি জমে রক্তে স্বাভাবিক চাপ বৃদ্ধি পায়। ফলে মানব দেহে উচ্চ রক্ত চাপ সৃষ্ঠি হয় বা হাই প্রেসার রোগ জন্ম নেয়। এতে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ দেখা দেয়। একই ভাবে উচ্চরক্ত চাপ ফুসফুস ও মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তচলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে স্ট্রোক বা মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ রোগ এবং শ্বাস যন্ত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে। তাছাড়া অতিরিক্ত লবণ খেলে প্রস্রাবের সাথে ক্যালসিয়াম শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে প্রস্রাবের সাথে ক্যালসিয়াম শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে হাড়ের অস্টিওপোরোসিস রোগ দেখা দেয়। অতিরিক্ত লবণ সেবনে লিভারের কার্যকারিতার অসুবিধা দেখা দেয়। কিডনী বা মূত্র তলির নানা জটিলতা দেখা দেয়। ফলে বৃক্কের বা কিডনী ছাকন কাজে সমস্য সৃষ্টি হয়। অনেক দিন ধরে অতিরিক্ত লবণ খেলে শরীরের বিভিন্ন সন্ধিতে বা জোড়কৃত স্থানে জমা হয়ে বৃদ্ধ বয়সে অনেক রকম অসুখ দেখা দেয়। অকালে চুল পেকে যায়, টাক পড়ে, ¯œায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে। শরীর ফুলে যাওয়া রোগী, অর্শ, হার্পানী রোগীদের জন্য লবণ খুবই ক্ষতিকর। এতে সমস্যা আরো বেড়ে যায়, অধিক লবণ গ্রহণের ফলে পাকস্থলীর ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে হেলিকোবেকটার পাইলোরি নামে এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। যার দারুণ পাকস্থলীর আলসার ও পাকস্থলীর ক্যান্সার হয়।
যে ভাবে বেশী লবণ গ্রহণ করা হয়ঃ- খাদ্য রান্না করার সময় অতিরিক্ত লবণ দিয়ে রান্না, কাচাঁ, সালাত বা ভর্তা চাটনী তৈরী করতে লবণ ব্যবহারে করা হয়। প্রক্রিয়াজাত খাবারে লবণ বেশী থাকে। যেমন বোতল জাত খাবার স্যুপ, বোতলজাত জুস, ফাস্ট ফুড, চিজ, ব্রেড, চাইনিজ খাবার, লবণাক্ত মাছ, চিপস ক্রোকাস, লবণাক্ত বিস্কুট বড়ই, তেতুল, আমলকি, আমড়া, জলপাই, জাম্বুরা, আনারস, কামরাঙ্গা, এ জাতীয় টক ফল লবন দিয়ে খাওয়ার মাধ্যমে বেশী লবণ নিজের অজান্তেই বেশী ঢুকছে।
কম খাওয়ার উপায়ঃ প্রত্যাহিক জীবনে আমরা যে তরিতরকারি ও নানা খাবার খাই। এ গুলোতে ও লবণ থাকে। সুতরাং খাবারের সময় আলাদা লবণ খাবেন না। রান্নার সময় যত কম সম্ভব লবণ দিয়ে রান্না করুণ। প্যাকেট জাত খাবার প্রক্রিয়াজাত মাছ মাংস কম খান। ফাস্ট ফুড, হোটেল, ক্যান্টিনের খাবারে প্রচুর লবণ থাকে। তাই এসব খাবার পরিহার করুন। শিশু কাল থেকেই শিশুদের কম লবণ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। শুটকী মাছ, আচার জাতীয় খাবার কম খান। খাদ্যকে সংরক্ষণ করার জন্য লেবুররস, ভিনেগার , কাচাঁ, রসুন, মসলা ব্যবহার করুন। কাচাঁ শাকসবজি ও ফল মূল লবণ দিয়ে খাবেন না। মনে রাখবেন লবণ খাওয়া বাদ দেওয়া যাবে না। কারন লবণ শরীরের একটি গুরত্বপূর্ণ উপাদান। তাই লবণ খেতে হবে পরিমিত, নয় অতিরিক্ত।

ষমোঃ জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন