রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পৌষের শেষে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে গোটা দেশ। বিশেষত দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষকে গত ৫০ বছরের মধ্যে রেকর্ড সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ছোঁবল পোহাতে হচ্ছে। গত সোমবার তেঁতুলিয়ায় ২.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। গত অর্ধশত বছর বা তারো বেশী সময়ে এটি সর্বনিম্ন বলে জানা গেছে। শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত আছে। প্রায় প্রতিদিনই নিচে নেমে যাচ্ছে তাপমাত্রার পারদ। শীতের প্রকোপে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র ও কাঁথা-কম্বলের অভাবে দুর্বিসহ সময় পাড় করছে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ। শীতজণিত অসুস্থ্যতায় আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। গত কয়েক দিনে শীতের প্রভাবে অসুস্থ্য হয়ে বেশ কিছু সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ক্রমবর্ধমান শৈত্যপ্রবাহ উত্তরের জেলাগুলোর মানুষের জন্য দুর্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তীব্র শীতের কামড় এবং ঘন কুয়াশার কারণে দিনমজুর দরিদ্র মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত দেশের বিত্তবান মানুষেরা গরম কাপড় ও কম্বল নিয়ে অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়। তবে এ বছর এমন রেকর্ড শৈত্যপ্রবাহেও শীর্তাত মানুষের পাশে যেন তেমন কেউ নেই। সরকারী-বেসরকারী সহায়তার প্রত্যাশায় মানবেতরভাবে দিন গুনলেও সাহায্য নিয়ে কেউ এগিয়ে যাচ্ছেনা। বিশেষত উত্তরের দুর্গম চরাঞ্চলের জেলেও কৃষিজীবী মানুষগুলো শীতবস্ত্রের অভাবে তীব্র শীতে ধুঁকছে।
বিশ্বের আবহাওয়া ও জলবায়ু ক্রমে চরম ভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। ঋতুভেদে শীত এবং গরম দুটোই বেড়ে মানুষের সহ্যসীমা অতিক্রম করে চলেছে। এই সপ্তাহে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শৈত্য প্রবাহে রেকর্ড সৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট এবং শহরে হীমাঙ্কের নিচে শৈত্য এবং তুষারপাতের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। নিউ ইয়র্কসহ বিভিন্ন শহরে জরুরী অবস্থা জারি করতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষাপ্রতিণ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে, বিশেষ জরুরী কাজ ছাড়া সাধারণ মানুষকে বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। বিশেষত শিশু ও বয়ষ্ক মানুষগুলো শীতজণিত রোগব্যাধিসহ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়েছে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশ বাংলাদেশেও এখন প্রায় একই রকম অবস্থা বিরাজ করছে। শিল্পোন্নত দেশে উন্নত আবাসন এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশের শীর্তাত দরিদ্র মানুষগুলো পর্ণকুটিরে বসবাস করেন। এদের পক্ষে পরিবারের সদস্যদের জন্য আরামদায়ক গৃহসজ্জা, শীতবস্ত্রের যোগান নিশ্চিত করা দূরে থাক, ক্ষুন্নিবৃত্তি দূর করতে দু বেলা খাদ্যের সংস্থান করাও কঠিন হয়ে পড়ে। খড়কুটোতে আগুন জ্বালিয়ে তীব্র শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে বস্ত্রহীন দরিদ্র মানুষগুলো। তাদেরকে শীতের দুর্যোগ রক্ষা করতে সরকারী ত্রান সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সারাদেশের শীতার্ত মানুষের কাছে গরম কাপড়, কম্বলসহ ত্রান সামগ্রী নিয়ে সরকারের পাশাপাশি দেশের ধনী, স্বচ্ছল মানুষদের এগিয়ে যাওয়া এই মুহুর্তে মানবতার দাবী। এই দাবী অগ্রাহ্য করার কোন সুযোগ নেই।
আবহাওয়া বিগড়ে যাওয়া ও জলবায়ুর অস্বাভাবিক আচরণের জন্য আমাদের অপরিনামদর্শি আচরণ দায়ী। অপরিকল্পিত শিল্পায়ণ, নদ-নদী, পাহাড় ও বনভূমি ধ্বংস করে আমরা যে উন্নয়নের দাবী করছি চুড়ান্ত বিচারে তা আমাদের জন্য প্রকৃতির চরম প্রতিশোধের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একদিকে নদীগুলো দূষণের শিকার হচ্ছে, শুকিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে অস্বাভাবিক বন্যা ও ভাঙ্গনের কবলে সর্বস্ব হারাচ্ছে কৃষিজীবী দরিদ্র মানুষ। এবার অস্বাভাবিক বন্যা ও পানিদূষণে ইতিহাসের নজিরবিহিন ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীণ হয়েছিল হাওরের মানুষ। সিডর ও আইলার মত ভয়াবহ ঘূর্ণীঝড়ের অভিজ্ঞতাও সাম্প্রতিক সময়ের। একটি প্রাকৃতিক দুযোর্গের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই আরেকটি দুর্যোগ হানা দিচ্ছে জনজীবনে। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেয়ার দাবী করলেও দেশের দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রার মান কতটা বেড়েছে তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। একদিকে শহরে বহুতল ভবন বাড়ছে অন্যদিকে সমুদ্রের উপক‚লে, দুর্গম চরাঞ্চলে এবং শহরের বস্তিতে দুস্থ্য মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। দেশের মানুষের গড় আয় যতই বাড়–ক, দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বা আয়বৈষম্য আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। দুর্নীতি, লুটপাটসহ নানাভাবে একশ্রেনীর মানুষ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, অন্যদিকে বৈষম্য ও সরকারী পরিষেবা বঞ্চিত কোটি কোটি দরিদ্র সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমন ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষগুলোই কখনো বন্যায়, কখনো মওসুমী ঝড়ে, নদীভাঙ্গনে বা তীব্র শীতে প্রকৃতির হেঁয়ালি আঁচরণের শিকার হয়ে পড়ে। ভোটের সময় নানা রকম চটকদার শ্লোগান ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিত্তশালী রাজনৈতিক নেতারা এদের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় তাদের কোন হদিস খুঁজে পাওয়া যায়না। দেশব্যাপী এই তীব্র শৈত্যপ্রবাহে সরকারের ত্রান ও পুর্নবাসন মন্ত্রনালয়, স্থানীয় প্রশাসন, সব রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিল্পপতি ও সমাজসেবিরা এগিয়ে আসলেই তারা বেঁচে যায়। সকলের সুদৃষ্টি ও শুভবুদ্ধির উদয় হোক এই প্রত্যাশা আমাদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন