প্রচন্ড শীত দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ নানা ধরনের শীতজনিত রোগে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত এবং ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বেসরকারিভাবে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি বলে দাবি করা হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে শীতের তীব্রতা ছিল কম। গত কয়েক দিনে তা হঠাৎ করে তীব্র হতে শুরু করেছে। অসহনীয় শীতের কারণে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসকদের মতে, প্রচÐ ঠাÐার কারণে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কাশিসহ ভাইরাসজনিত রোগ বেড়ে যায়। এ অবস্থায় ঠাÐা থেকে শিশু ও বয়স্কদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। ঠাÐার কারণে শিশু ও বয়স্কদের হালকা গরম পানি সেবন করানো উচিত।
শীতকালে ফুসফুসে জীবাণু সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। শীতে বয়োজ্যেষ্ঠ ও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আগে থেকে যারা অ্যাঁজমা, ব্রঙ্কাইটিস শ্বাসরোগে ভুগছেন তাদের রোগ শীতে জটিল হয়ে ওঠে। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ও জীবাণু বহনকারী রোগীদের যত্রতত্র কাশি না দেওয়াই উচিত। আর কেউ কাশি দিলে মুখ ডেকে আড়াল করে দেওয়া ভালো। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় শৈত্যপ্রবাহে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে গরিব-দুঃখী মানুষের জীবনযাত্রা। সকালে তীব্র শীতে কাজে বের হতে পারছে না তারা। বিকাল থেকেই তাপমাত্রা নিম্নগামী হওয়ায় সন্ধ্যার পর পরই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট, হাটবাজার ও দোকানপাট। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। গরম কাপড়ের অভাবে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। কাজে বের হতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে শ্রমজীবী মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। শীতার্তদের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে সরকারি উদ্যোগে। তবে চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় তা পৌঁছাচ্ছে না গরিব-দুঃখী সব মানুষের কাছে। এ বাস্তবতাকে মনে রেখে শীতার্ত মানুষের কষ্ট লাঘবে সমাজের অবস্থাসম্পন্ন মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার পক্ষ থেকেও শীতার্তদের সহায়তায় শীতবস্ত্র বিতরণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া উচিত। মানুষ মানুষের জন্য এই মূল্যবোধে একে অপরের সহায়তায় এগিয়ে এলে লাখ লাখ গরিব-দুঃখী মানুষের কষ্ট লাঘব করা সম্ভব হবে।
একদিকে প্রচÐ শীত, অন্যদিকে ঘনকুয়াশায় দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন কয়েক দিন ধরে স্তব্ধ প্রায়। ফেরি চলাচল বিঘিœত হওয়ায় রাজধানী থেকে দক্ষিণাঞ্চলে সড়কপথে যাতায়াতে তিনগুণেরও বেশি সময় লাগছে। তীব্র শীতে খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ সীমা অতিক্রম করতে চলেছে। শীতের কারণে কাজ পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ছে। জুটছে না পেটের অন্ন। হাড়কাঁপানো শীত অসহায় জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। শীত গরিব মানুষের জীবনকে অসহনীয় অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। তারা আশা করে সরকার কম্বল ও গরম পোশাক বিতরণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সমাজের অবস্থাসম্পন্ন মানুষদেরও শীতার্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। বাড়িয়ে দিতে হবে সহযোগিতার হাত। শৈত্যপ্রবাহ কৃষির জন্য যেসব হুমকি সৃষ্টি করছে তা রোধে কৃষি বিভাগ যথাযথ উদ্যোগ নেবে আমরা তেমনটিও দেখতে চাই।
হার কাঁপানো শীত পড়েছে, দিন দিন শীতের তীব্রতা বাড়ছে। সামনের দিনগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই এর তীব্রতা আরো বাড়বে। তাই এখনই দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং সৎ চেষ্টা। একজন মানুষ হয়ে আর একজন অসহায় কর্মঅক্ষম মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই তীব্র শীত আমাদের জন্য অনেক আনন্দদায়ক কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছেন? এই শীতে অসহায় গরীব বস্ত্রহীন কর্মঅক্ষম মানুষ কীভাবে রাত কাটাচ্ছে। তাদের আমাদের মত দামি গরম পোশাক তো দূরে থাক, সামান্য কাপড় টুকু নেই। ছোট ছোট বাচ্চারা এই তীব্র শীত এ কত কষ্টে আছে। অনেকে এই শীত সহ্য করতে না পেরে মারাও যাচ্ছে। তাই সকলের প্রতি আহবান আসুন আমরা যে যা পারি তাই দিয়েই শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই।
লেখক: পরিচালক, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন