শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

১১১ বছরে ডা. খাস্তগীর স্কুলে বর্ণাঢ্য মিলনমেলা

| প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো : ‘১৯৬৪ সালে আমি ক্লাস ফোরে ভর্তি হই। হোস্টেলে থাকতাম। ভূতের ভয় করত খুব। খাস্তগীর স্কুল তো আগে ছিল হাসপাতাল। তাই মরা মানুষের হাড্ডি সব গাছের নিচে আছে। এজন্যই ভূতের ভয়। বাথরুমে একা যেতে পারতাম না। ভয়ে চোখ বন্ধ করে থাকতাম। মাঝরাতে কান্না জুড়ে দিতাম। এ খবরটা অভিভাবকদের কাছে পৌঁছায়। তারা এসে টিচারদের বললেন। টিচাররা তখন বলেন, ওসব ভূত-টুত কিছু নেই। ওদের মনের ভূত আগে তাড়াতে হবে’। কথাগুলো বললেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড.শিরীণ আক্তার। তিনিও ছিলেন ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। এসেছিলেন আনন্দঘন পুনর্মিলনীতে শামিল হতে।
১১১ বছর পূর্তির দু’দিনব্যাপী বর্ণিল সব আয়োজন ছিল বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কেন্দ্রস্থলে জামাল খান সড়কের ডা. খাস্তগীর স্কুলে। অসাধারণ মেধাবী মা ও দুই মেয়ের হাস্যোজ্¦ল উপস্থিতি সবার নজর কাড়ে। মা দিল আফরোজ খানম, কন্যা আমেনা শাহীন ও তাহমিনা পারভিন। রতœগর্ভা মা দিল আফরোজ গতকাল (শনিবার) নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে জানান, ‘আমি ১৯৫৩ সালে এই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হই। ১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হই। আজ আমার মনে হচ্ছে, প্রথম যেদিন এই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম সেই দিনটিকে অনাবিল আনন্দে ফিরে ফেলাম। ওই সময়ে স্কুল প্রাঙ্গণে দৌঁড়াদৌড়ি খেলাধূলা, বান্ধবীদের সাথে আড্ডার কথা খুব মনে পড়ে। তখন এসব বিল্ডিং ছিলনা। আরও ভালো লাগে যখন শুনি এ স্কুলের মেয়েরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছেন’।
সাবেক সিনিয়র শিক্ষিকা দিল আফরোজের কন্যা আমেনা শাহীন এই স্কুল থেকে ১৯৮০ সালে কুমিল্লা বোর্ডে মানবিক বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ফেলে আসা সোনালি দিনগুলো খুঁজে ফিরে চপলা কিশোরীর মতো আনন্দ অবগাহনের মাঝে তিনি জানালেন, আমার মা, আমি, বড় মেয়ে ডা. নাইমুসহ আমার পরিবারের তিন প্রজন্ম এই স্কুলেরই গর্বিত শিক্ষার্থী। তার পিতা খ্যাতনামা প্রবীণ শিক্ষাবিদ এ কে মাহমুদুল হক।
এমনিভাবে অগণিত সাবেক ডা. খাস্তগীর স্কুল শিক্ষার্থীর জমকালো মিলনমেলায় স্কুল প্রাঙ্গণ ছিল গতকাল এবং আগের দিনব্যাপী (শুক্রবার) প্রাণবন্ত। পুরনো সহপাঠীদের দীর্ঘদিন পর খুব কাছে পেয়ে যেন অপার্থিব খুশির ফোয়ারা বয়ে যায়। একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় আর ছবি তোলার ব্যস্ততায় স্কুল প্রাঙ্গণজুড়ে ছিল অন্যরকম দৃশ্যপট। কেউ কেউ আবেগ মাখা আনন্দে সঙ্গে কান্নায় চোখ মোচেন। দুদিনের পদচারণায় সুখকর অতীতকে খুঁজে ফিরতে আসা সবারই মুখে মুখে গৌরবের উচ্চারণটি ছিল শত বছর পেরিয়ে এই শিক্ষাঙ্গন মেধাবীদের প্রিয় স্কুল হিসেবে দেশে-বিদেশে খ্যাতি অটুট রেখেছে। ফলাফলে বরাবরই শীর্ষস্থান দখল করে আছে। সেরাদের সেরা এই শিক্ষাঙ্গন।
‘অনন্য খাস্তগীর ১১১-তম বর্ষ উদযাপন’ অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। তিনি বলেন, এই শিক্ষা শিক্ষাঙ্গনকে আমি মনে করি পৃথিবীর এমন একটি প্রান্ত যেখানে সবাই আসে তাদের জীবনকে মনোরমভাবে সাজাতে। ঐতিহ্যের ধারক এই স্কুলটি সবসময়ই তার শিক্ষার্থীদের মনোরম জীবন সাজাতে অনুপ্রাণিত করছে। যারা সমাজকে সারা বিশ্বকে আলোকিত করছেন। আমি চাই এই স্কুল শুধু সুশিক্ষা প্রদানেই নয়; সুস্থ সংস্কৃতিমনস্ক মানবিক মানুষ হওয়ার শিক্ষা যেন দেয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন