শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কনকনে হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় জীবনযাত্রা ব্যাহত

বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

উত্তরী হাঁড় কাঁপানো হিমেল কনকনে হাওয়া এবং ঘন কুয়াশায় দেশের প্রায় সর্বত্র স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। অনেক এলাকায় মাঝরাত থেকে সকাল পেরিয়ে দুপুর পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে। আংশিক মেঘলা আকাশ ও অব্যাহত কুয়াশার ঘোরে সড়ক, নৌপথে চলাচল বিলম্বিত হচ্ছে। পথে পথে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। তাছাড়া ফ্লাইটের শিডিউল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। শৈত্যপ্রবাহে কনকনে শীতের কারণে শ্বাসকষ্ট ও বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি রোগ-ব্যাধির প্রকোপ বেড়ে গেছে। হাসপাতালেও বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বিশেষত বয়োবৃদ্ধ ও শিশুরা অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশার বৈরী আবহাওয়ায় দিনমজুর শ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। কেননা তাদের আয়-রোজগার কমে গেছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, উত্তরের সুদূর সাইবেরিয়া ও হিমালয় অঞ্চলের তীব্র শৈত্যপ্রবাহের ধাক্কা বাংলাদেশে এসে পড়েছে গত সপ্তাহ থেকে। সেই সঙ্গে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার ফুট ঊর্ধ্বাকাশের জেট বায়ুমালা এখন অনেকটা নিচের দিক দিয়ে সজোরে প্রবাহিত হচ্ছে। এরফলে শৈত্যপ্রবাহের মাঝে কনকনে শীতের কামড় বেড়ে গেছে। গতকাল (রোববার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সিলেটে ২৫.১ ডিগ্রি সে.। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮.৯ এবং ১২.৮ ডিগ্রি সে.। গতকাল পর্যন্ত রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে রয়েছে। যা শৈত্যপ্রবাহের পর্যায়ে আছে। অন্যান্য বিভাগে তাপমাত্রায় কিছুটা উন্নতি হলেও উত্তরী হাঁড় কাঁপানো শীতের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। পার্বত্য জেলাগুলোতেও শীতের দাপট আর কুয়াশায় কাবু জনজীবন।
আজ (সোমবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও দিনের বেলা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বিরাজমান শৈত্যপ্রবাহ পরিস্থিতি দেশের আরও কিছু এলাকা থেকে প্রশমিত বা কমে আসতে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী দুই দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। এর পরের ৫ দিনে আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
সব ফেরি সেক্টরে কয়েক হাজার যানবাহন আটকা,নৌপথে যাত্রী পরিবহনও বিপর্যস্ত
নাছিম উল আলম : পদ্মা ও মেঘনায় ঘন কুয়াশায় গতকালও মত ফেরি পারপারসহ যাত্রীবাহী নৌযান বন্ধ থাকায় রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক ও নৌপরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত ছিল। পাটুরিয়া ও মাওয়াসহ দেশের সবগুলো ফেরি সেক্টরেই গতকাল সকাল প্রায় ১১টা পর্যন্ত ফেরি পারপার বন্ধ থাকায় কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পরে। লাগাতার শৈত্য প্রবাহের পাশাপাশি ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা ও গোল আলুর ক্ষতি ক্রমশ বাড়ছে। মান নষ্ট হচ্ছে অনেক শীতকালীন সবজির।
দক্ষিণাঞ্চলে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ২ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়ে ১১ডিগ্রীর ওপরে উঠলেও ঘন কুয়াশায় বেলা ১১টা পর্যন্ত সূর্য ছিল আড়ালে। দিনের বাকি অংশও মেঘলা আকাশে রোদের কোন উত্তাপ লাগেনি। ফলে তাপমাত্রার পারদ আগের চেয়ে কিছুটা বাড়লেও শীতের অনুভুতির কোন কমতি ছিলনা। পাশাপাশি সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তফাতও ছিল খুব সীমিত। এদিকে গতকাল শেষ রাত থেকে বেলা প্রায় ১১টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় পদ্মা ও মেঘনার বুকসহ সব নদীর অববাহিকা ঢেকে থাকায় দেশের প্রধান দুটি সেক্টরসহ সবগুলো ফেরি রুটেই যানবাহন পারপার বন্ধ ছিল। ফলে রাজধানীর সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগসহ ফরিদপুর অঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা চরম বিপর্যয়ের কবলে। একই পরিস্থিতি চাঁদপুর-শরিয়তপুর, ভোলা-ল²ীপুর ও ভোলা-বরিশালের মধ্যবর্তী ফেরি রুটগুলোতেও। গতকাল সকাল ১১টার পরে এসব ফেরি সেক্টরে যানবাহন পারপার শুরু হলেও ততক্ষনে প্রায় ২হাজার যানবাহন ফেরি ঘাটগুলোতে আটকা পরে। ফলে নারী ও শিশু সহ হাজার-হাজার যাত্রী সীমাহীন দুর্ভোগে পরেন।
আগুনে শীত নিবারনের সময় দগ্ধ হয়ে মৃত্যু এক
শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে : ঘন কুয়াশার কারণে কুড়িগ্রামের বেশীর ভাগ এলাকায় তাপমাত্রা বাড়তে পারছে না।শীতের অনুভূতি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে।রেকর্ড পতনের পর তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করলেও কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে তীব্র শৈত প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।শৈত প্রবাহ বয়ে যাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এদিকে শনিবার সকালে সদর উপজেলার বাঘডোবার পাড় গ্রামে কনকনে ঠান্ডায় আগুন জ¦ালিয়ে শীত নিবারনের সময় ওসমান আলী নামের এক মুক্তিযোদ্ধা দগ্ধ হয়। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে রাতে তার মৃত্যু হয়। কুড়িগ্রামের কৃষি আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, রোববার জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
ঠাকুরগাঁওজেলা সংবাদদাতা: শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ে হতদ্ররিদ্র মানুষের উষ্ণতা দিতে শীত বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। রবিবার সকালে ইউনিয়ন ইন্সুরেন্স কোম্পানী লিঃ এর উদ্যোগে ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব চত্বরে প্রায় ৩শ দরীদ্র মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।
এসময় ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতিসহ সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ।
এক সপ্তাহে ৬ জনের মৃত্যু
আদমদীঘি (বগুড়) উপজেলা সংবাদদাতা :শীতজনিত রোগে গত এক সপ্তাহে এসব এলাকায় ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।। শনিবার রাতে সান্তাহার শহরের মালশন গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মচারী আলতাফ (৭০) একই গ্রামের মনোয়ারা (৫৫) মঙ্গলবার রাতে শহরের ছাতিয়ানগ্রম রোডের হটাৎপাড়া গ্রামের মোস্তফার স্ত্রী রেজিনা (৪০) পাশ্ববর্তী বড়গাছা গ্রামের বাবলু (৬৮) শুক্রবার সান্দিড়া গ্রামের মুক্তা (৪৬) উপর পোঁওতা গ্রামের মৃত আফসারের স্ত্রী ছামেনা (৫৫) এছারাও শনিবার রাতে সান্তাহার শহরের হরিজন পলীøতে একজনের মৃত্যু খবর পাওয়া গাছে। শিশু ,নারী, পুরষসহ বিভিন্ন বয়সের শত শত ব্যক্তি শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে এসব আক্রান্ত রোগীরা উপজেলা সদর হাসপাতালেও স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিক ও চিকিৎসালয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। শৈত্যপ্রবাহ এবং ঘন কুয়াশা এসব এলাকায় জেকে বসেছে শীত।
ফরিদপুরে কম্বল বিতরণ
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা ঃ ফরিদপুরে দরিদ্র অসহায় শীতার্তদের মাঝে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য ও সাবেক এমপি কাজী সিরাজুল ইসলামের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
রবিবার বেলা ১২ টায় বোয়ালমারীর কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজ মাঠে কম্বল বিতরন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি কাজী সিরাজুল ইসলাম।
ঘন কুয়াশায় বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে
মোঃ গোলাম ফারুকদুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে : বগুড়া জেলার শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত দুপচাঁচিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে অত্র উপজেলায় ১৩ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে ৭শ হেক্টর জমিতে ইতিমধ্যে বীজ তলা তৈরী করাও হয়েছে। কৃষকরা চলতি এই বোরো মৌসুমের জন্য ডিসেম্বর মাস থেকেই বীজতলা তৈরীর কাজ শুরু করে। ইতিমধ্যে অনেক বীজতলার গাছ গজায়ে সবুজ বর্ণ ধারণ করেছে। কিন্তু হঠ্যাৎ করে গত দু’সপ্তাহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মত দুপচাঁচিয়া উপজেলায় তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার প্রভাব পড়ে বীজতলাগুলোর উপর। এই কোল্ড ইনজুরির কারণে বীজতলার গজানো গাছগুলোর পাতার রঙ বিবর্ণ হয়ে হলুদ রঙ ধারণ করে। এছাড়াও অনেক অঙ্কুরকৃত চারা মরে যাচ্ছে। এতে কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে গতকাল রোববার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি “দৈনিক ইনকিলাব” কে জানান, শীত জনিত কারণে বোরো ধানের বীজ তলা কিছু ক্ষতি সাধন হচ্ছে। এই মুহুর্তে প্রচন্ড শীতে বীজ তলার চারা বাড়তি কমে যেতে পারে সেই সাথে ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়ে চারার গোড়া ও পাতা পচা রোগ হয়ে চারা মারাও যেতে পারে। এ বিষয়ে কৃষকদের কে বীজতলা পলিথিন দিয়ে যেকে রেখে পানি সেচ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সুন্দরগঞ্জে শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধে আহত-২
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তীব্র শীতের হাতা থেকে রক্ষা পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে দুই নারী অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গত দুই সপ্তাহ থেকে হিমেল হাওয়া, কনকনে ঠান্ডা ও শৈত্য প্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তীব্র শীত থেকে রক্ষা পেতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে গত দুই দিনে আগুনে পুড়ে দুইজন গুরুতর আহত হয়েছে। আহতরা হলেন রামডাকুয়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের স্ত্রী হাওয়া বেগম (৫০) ও ধর্মপুর গ্রামের অনিল চন্দ্রের স্তী রত্মা রানী (২৫)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন