গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা : অব্যাহত ঘন কুয়াশার কারণে দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট গত কয়েকদিন একটানা বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সাথে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুইদিন আগে ঘাটে এসে আজও ফেরির নাগাল পায়নি শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। টানা ৭ দিনের মত গত বুধবার ভোর ৪টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সাড়ে ৭ ঘণ্টা ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট বন্ধ থাকে। এতে উভয় পাড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলে যাত্রীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহান। এ রুটে খান জাহান আলী নামের একটি রোরো (বড়) ফেরি গত দুইদিন ধরে বিকল আছে। সচল রয়েছে ১৫টি ফেরি। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিনই ফেরি চলাচল বন্ধ থাকাায় ঘাট এলাকায় যানবাহন আটকে পড়ার ঘটনা ঘটছে। যাত্রীবাহী গাড়িগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে পার করা হলেও পণ্যবাহী ট্রাক আটকে চালক ও সহকারীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সময়মত পণ্য না পৌঁছানোয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যান পারাপার কমে যাওয়ায় বিআইডব্লিউটিসিও বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বুধবার টানা সাড়ে ৭ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় অন্তত ৫ কিলোমিটারজুড়ে হয় যানবাহনের দীর্ঘ সারি। বেলা ৩টা নাগাদ যানবাহনগুলো ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের বাংলাদেশ হ্যাচারিজ পর্যন্ত দুই সারিতে আটকে ছিল। আটকে পড়া যাত্রী, পরিবহন চালক ও ঘাটে নিয়োজিত সংশ্লিষ্টরা চরম দুর্ভোগ পোহান। কুয়াশাকালীন বেলা ১১টার দিকে দৌলতদিয়া ২নং ফেরিঘাট এলাকায় দেখা যায় ৮/১০টি এম্বুলেন্স পন্টুনের সামনের রাস্তায় রোগী নিয়ে নদী পাড়ের অপেক্ষায় আছে। ওই ঘাটে বাঁধা রোরো ফেরি এনায়েতপুরী ও গোলাম মওলা যাত্রী-যানবাহন বোঝাই করে ছাড়ার অপেক্ষায় আছে। এ সময় কথা হয় একটি এম্বুলেন্সে আটকে থাকা ফরিদপুর আরামবাগ এতিমখানার সুপার আ. খালেকের (৫৭) সাথে। তিনি জানান, গুরুতর হৃদরোগ নিয়ে ঢাকার পথে রয়েছেন। কিন্তু প্রায় ১ ঘণ্টার উপর এখানে আটকে আছি। আমার মত অনেক রোগী এভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। শুনেছি সরকার কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ফেরিতে ফগ লাইট স্থাপন করেছে কুয়াশার মধ্যেও চলাচলের জন্য। কিন্তু আমরা সেই আগের মতই দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। ঈগল পরিবহনের দৌলতদিয়া ঘাট সুপারভাইজার ভরত মন্ডল জানান, খুলনা-বরিশাল-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে তাদের স্বাভাবিক সময়ে দিন-রাতে কমপক্ষে ৫০টি এসি-ননএসি গাড়ী চলে। বর্তমানে চলছে মাত্র ৩০/৩৫টির মত। বুধবার যানজটে তাদের ১৫টি কোচ আটকে পড়ে। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে মালিক পক্ষ ট্রিপ কমিয়ে দিয়েছেন। এতে যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি মালিকের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া অফিসের ম্যানেজার সফিকুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিন দীর্ঘ সময় ধরে ফেরি বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় যানবাহন আটকে পড়ছে। আগের দিনের অনেক পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার হতে পারেনি। এরমধ্যেই আরো যানবাহন এসে আটকে থাকা যানবাহনের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। কুয়াশায় দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় বিআইডব্লিউটিসির প্রতিদিন রাজস্ব আয় অনেক কম হচ্ছে। পাশাপাশি যাত্রী ভোগান্তি ও পণ্যদ্রব্য পারাপারে সমস্যা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন