শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

রাজধানীতে জনভোগান্তির শেষ নেই

| প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাজকর্মে কোনো গতি নেই। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক অসুস্থ হওয়ার পর ওই সিটি কর্পোরেশনের কাজে ধীরতা নেমে আসে। তার ইন্তেকালের পর সেই ধীরতা আর বাড়ে। আর এখন উপনির্বাচনের হওয়া শুরু হওয়ায় বলতে গেলে কাজ একেবারেই থেমে গেছে। অথচ দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র আছেন, কাউন্সিলরবৃন্দ আছেন, আছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা সবাই গা ঢিলা দিয়ে আছেন। স্বস্ব দায়িত্ব পালনে তারা তেমন কোনো আগ্রহই দেখাচ্ছেন না। এতে উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ যেমন থমকে গেছে, তেমনি নাগরিক সেবা একেবারেই প্রান্তিক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। মেয়র আনিসুল হক, সেসব উন্নয়ন, সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনমূলক কাজ করেছিলেন সেসব সম্পূর্ণ অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। তিনি যানজটমুক্তসহ নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য বিধানে যেসব রাস্তা ও এলাকা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে মুক্ত করেছিলেন, সেগুলো পুনরায় দখল হয়ে গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অবস্থাও তথৈবচ। মেয়র সাঈদ খোকন বিদেশে গেছেন বেশ কিছু দিন হলো। কয়েকজন কর্মকর্তাও বিদেশে আছেন। তাদের বিকল্প হিসাবে ভারপ্রাপ্তরা আছেন বটে। কিন্তু তারা কেউই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। অন্যরা তাদের অনুসরণ করছেন। ফলে কোনো কাজকর্মই বলতে গেলে হচ্ছে না। কর্মকর্তারা ইচ্ছেমত অফিসে আসছেন, ইচ্ছেমত চলে যাচ্ছেন। দুই সিটি কর্পোরেশনের এহেন কর্মবিমুখতা ও স্বেচ্ছাচারিতায় নাগরিকভোগান্তি ও দুর্ভোগ চরম সীমায় উপনীত হয়েছে। খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট, ধূলা, যানজট, ময়লা আবর্জনার ছড়াছড়ি, মশার উপদ্রব-সব মিলে নাগরিকজীবন দুবিষহ হয়ে উঠেছে। উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কাজ ছাড়াও দুই সিটি কর্র্পোরেশনের দৈনন্দিন কাজ অনেক। এই দৈনিন্দন কাজও ঠিকমত হচ্ছে না। নাগরিকসেবা প্রদানে এই দায়িত্বে অবহেলা, অমনোযোগিতা ও যথেচ্ছাচার কোনো অজুহাতেই মেনে নেয়া যায় না।
গত বর্ষায় অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে দুই সিটি কর্র্পোরেশনের রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুই সিটির অধীন রাস্তা বা সড়কের পরিধি ২২৮৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৫০০ কিলোমিটার রাস্তা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যসব রাস্তার ক্ষতি হয়েছে আংশিক। সাত বছর মেয়াদে মেরামত করা রাস্তা এক বছরেই ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। উঠে গেছে পিচঢালাই। সৃষ্টি হয়েছে ছোটবড় অসংখ্য গর্ত। স্বভাবতই আশা করা গিয়েছিল, এই শুকনো মওসুমে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো মেরামত ও সংস্কার করে দ্রুত চলাচল উপযোগী করা হবে। এক্ষেত্রে দুই সিটি কর্র্পোরেশনের উদ্যোগ-পদক্ষেপ ও কার্যব্যবস্থা হতাশাজনক বললেও কম বলা হয়। একদিকে যেমন রাস্তার এই বেহাল দশা অন্যদিকে তেমনি ওয়াসা, টিএন্ডটি, তিতাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি সেবাসংস্থার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে উন্নয়ন ও মেরামত কাজ সম্পদন প্রায় সব ছোট বড় রাস্তাকেই যান চলাচলের অনুপযুক্ত করে ফেলেছে। নজির হিসাবে উল্লেখ করা যায়, উত্তরার জসীম উদ্দিন রোড হয়ে বিমানবন্দর আসার রাস্তা, খিলক্ষেত রেলগেট-ডুমনি রাস্তা, মিরপুর ১০ নম্বর-কঁচুক্ষেত রাস্তা, আমিনবাজার থেকে সদরঘাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের রাস্তা, ফুলবাড়িয়া মাজার থেকে স্্ুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট পর্যন্ত রাস্তা, চানখাঁরপুল-চকবাজার রাস্তা, চকবাজার-লালবাগ রাস্তার কথা। এসব রাস্তায় যানবাহন চলাচল এমন কি পথচারি চলাচলও মুশকিল। এসব রাস্তাসহ ভাঙাচোরা ও খান্দাখন্দে ভরা সকল রাস্তা কবে মেরামত করে চলাচল উপযোগী করা সম্ভব হবে, কেউ বলতে পারে না। অন্যদিকে প্রায় সকল সেবা সংস্থাই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে কাজ করছে। কুড়িল থেকে রামপুরা পর্যন্ত ওয়াসা ড্রেনেজের কাজ করছে। এই এলাকায় যানজট ও অন্যান্য কারণে নাগরিক ভোগান্তির কোনো সীমা নেই। ওয়াসার কাজের কারণে মালিবাগ এলাকায় ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করার পরও এর নিচের রাস্তার এখনো সংস্কার হয়নি। একারণে যানবাহন ও পথচারীরা নিত্য নাকাল হচ্ছে।
নাগরিক সেবা ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার জন্যই দুই সিটি কর্র্পোরেশনসহ বিভিন্ন সেবাসংস্থা রয়েছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়, কোনো সংস্থার কাজের মধ্যেই এই চেতনাবোধের পরিচয় পাওয়া যায় না। তাদের কাজের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। সমন্বয় থাকলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ভোগান্তি ও যানজট এত দু:সহ হয়ে উঠতো না। রাজধানীর নাগরিকরা সকল সেবার জন্যই তাদের সাধ্যের অতীত মূল্য দিয়ে থাকে। অথচ কাঙ্খিত সেবা তারা পায় না। সেই সঙ্গে নানাবিধ দুর্ভোগ-যাতনা তাদের নিত্যসঙ্গী। বলা বাহুল্য, এভাবে চলতে পারে না। চলতে দেয়া যায় না। সাধ্যযোগ্য ও সম্ভবপর নাগরিকসেবা নাগরিকদের প্রাপ্যই শুধু নয়, অধিকারও বটে। এ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সিটি কর্র্পোরেশনদ্বয়ের সঙ্গে অন্যান্য সেবাসংস্থাকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। দুই সিটি কর্র্পোরেশনকেও তাদের কাজের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল, আন্তরিক ও তৎপর হতে হবে। এখন যে দায়িত্বহীনতা, অমনোযোগ ও ধীরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তার দ্রুত অবসন ঘটাতে হবে। কাজের মনিটারিং ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিক সাধারণের সঙ্গে তারা এখন কার্যত উপহাস ও মস্করা করছে। এটা মোটেই বরদাশতযোগ্য নয়। রাস্তাঘাট চলাচল উপযোগী করে তা সুরক্ষা যেমন তাদের করতে হবে তেমনি অন্যান্য সেবাও যথাযথভাবে প্রদান করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন