শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ডিএনসিসি নির্বাচনে কমিশনের গাফিলতির প্রশ্নই ওঠে না সচিব

হিজড়া পরিচয়েই ভোটার হওয়া যাবে কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত

| প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচন আইনি জটিলতার কারণে স্থগিত হওয়ার পেছনে নির্বাচন কমিশনের কোনো গাফিলতি ছিল না বলে দাবি করেছেন ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ। নারী বা পুরুষের পাশাপাশি কেউ চাইলে হিজড়া পরিচয়েও ভোটার হতে পারবেন, এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ইসি।
গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের ১৭তম সভা শেষে সাংবাদিকদের এ দাবি করেন তিনি। ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, গতকাল হাইকোর্ট যে স্থগিতাদেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন তা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, মহামান্য হাইকোর্টের এই আদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের সকল কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। একই সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৮টি ওয়ার্ড মহামান্য হাইকোর্ট যে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন ৩ মাসের জন্য একইভাবে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। আদেশের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থায় যাচ্ছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত বিস্তারিত আদেশ পাইনি। আমরা শুধু মিডিয়ার মাধ্যমে এবং উকিল প্রত্যয়নের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। যখন আদেশটি হাতে পাব আমরা নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করব। নির্বাচন কমিশন পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে। কোন বিষয়গুলোতে নির্বাচন আটকে রয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন কোন জায়গায়, কোন বিষয়ের ওপর মহামান্য হাইকোর্ট তাদের অবজারভেশনের আলোকে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন সেটা আমরা জানতে পারিনি। উকিল নোটিশের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি এই উপনির্বাচন এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচন স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে তিন মাসের জন্য। জটিলতা নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেনি ইসি- স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর এমন অভিযোগের প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, সাংবিধানিক দায়িত্ব হিসেবে জাতীয় নির্বাচন ইসি নিজেরাই পরিচালনা করে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের প্রেক্ষিতে করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করে দেবে নির্বাচন কোনটা করব কোনটা করব না। সেক্ষেত্রে আমরা অনুরোধ পাওয়ার পরই কিন্তু নির্বাচনের কাজে হাত দিয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশন তফসিলও ঘোষণা করেছে। মহামান্য হাইকোর্ট কোন বিষয়ের ওপর আদেশ দিয়েছে তা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত বলতে পারব না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে কোনো ত্রুটি দেখিয়ে দিয়েছে কি না যেগুলোর কারণে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যেতে পারে?- জানতে চাইলে সচিব বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ পাওয়ার পর এ বিষয়ে কোনো পত্র যোগাযোগ হয়নি। সাধারণত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যখন কোনো অনুরোধপত্র পাঠান তখন আইনের বিষয়গুলো দেখার জন্য তাদের আইন অণুবিভাগ রয়েছে। ওখানে আইন অণুবিভাগের ক্লিয়ারেন্স নিয়ে কিন্তু আমাদের চিঠি পাঠিয়েছে। কোন জায়গায় বিষয়গুলো মহামান্য হাইকোর্ট ত্রুটিগুলো ধরেছে আদেশ পাওয়ার পর আমরা তা বুঝতে পারব। যথেষ্ট আলোচনা না করেই তফসিল ঘোষণা হয়েছে এবং এর দায় কমিশন নেবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, আদেশটা পাওয়ার পর মন্তব্য করতে পারব। আমাদের গাফিলতির প্রশ্ন ওঠেই না। কমিশন সভায় উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিয়ে কোনো এজেন্ডা ছিল না এবং এ বিষয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি। এর আগে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে ১৭তম কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। অপর চার নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান, সভায় নির্বাচন কমিশন যারা প্রবাসী ভোটার রয়েছে তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আগামী ফেব্রæয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে একটি সেমিনার করা হবে। সেমিনারে যেসব সুপারিশমালা প্রণয়ন করা হবে তার আলোকে প্রবাসী ভোটার তালিকা নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। সভায় সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রধান নির্বাচন কমিশনারদের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারের আরো অত্যাধুনিক করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে যেসব ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি আগামী ফেব্রæয়ারির ১ তারিখ থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ করা হবে। হিজড়াদের ভোটার তালিকায় তৃতীয় লিঙ্গ পরিচয়ে ভোটার করতে আইনের নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে কমিশন সভায়। হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এতদিন যে হিজড়া পুরুষদের পোশাক পরে তাকে পুরুষ এবং যে মহিলাদের পোশাক পরে তাকে মহিলা হিসেবে ভোটার করা হয়েছে। এখন থেকে তারা হিজড়া হিসেবে ভোটার হতে পারবেন। এটা কমিশনে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য যুগ্ম সচিব আইনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি এ সংক্রান্ত আইন ও বিধি সংশোধন করে কমিশন সভায় উপস্থাপন করবেন। পরে কমিশন সেটি দেখে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবেন। ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর মন্ত্রিসভায় হিজড়াদের স্বীকৃতি বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকার বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে হিজড়া লিঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করিয়া স্বীকৃতি প্রদান করিল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন