মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দক্ষিণাঞ্চলে আ’লীগের ভোট ডাকাতির অভিযোগ শরিক দলের মুখেও

প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : সদ্যসমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে ভোট ডাকাতি আর ত্রাসের মাধ্যমে জনগণের রায় ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ এখন খোদ শাসক জোটের শরিক দলের মুখে। এমনকি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ভাষায়, ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’-খ্যাত জাতীয় পার্টি ছাড়াও বরিশাল সদর সংসদীয় আসনটিতে শাসক জোটের মূল শরিক দলের সাথে অঘোষিতভাবে সমন্বয় করে চলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নেতৃবৃন্দও ‘আওয়ামী লীগ ভোট ডাকাতি করে তাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছে।
তবে ইসলামী আন্দোলনের প্রধান ঘাঁটি চরমোনাই ইউনিয়নে দলটির প্রার্থী ও পীর ছাহেবের ছোট ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান বিজয়ী হবার ঘটনাটিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে শেষ মূহুর্তে অঘোষিত আঁতাত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তাদের মতে, বিএনপি প্রার্থীর বিজয় ঠেকাতে শেষ মুহূর্তে আয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বচনী লড়াই থেকে অঘোষিতভাবে সরে দাড়ায়’। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ ও ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ। শাসক জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি সংবাদ সম্মেলন করে ‘নির্বাচনের কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে বরিশালের বাবুগঞ্জ ও উজিরপুরে আওয়ামী লীগ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে’ বলে অভিযোগ করেছে। এমনকি ভোটের দিন সকাল ৯টার মধ্যে কেন্দ্রগুলো দখল করে নেয়ার অভিযোগও করেছেন জেলা সভাপতি নজরুল হক নিলু।
গত মঙ্গলবার বরিশাল জেলার ৭৪ ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ৬২টিতেই তাদের বিজয় নিশ্চিত করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতেছেন ৪ জন। তার মধ্যে আবার ৩জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী। ৫টি ইউনিয়নের ফল স্থগিত রয়েছে। সবগুলো ইউনিয়নে পরাজিত বিএনপি ভোট গ্রহন শেষ হবার পর পরই জেলা কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে পুনঃনির্বাচনে দাবী করেছে।
গত মঙ্গলবার প্রথম দফায় বরিশাল বিভাগের ৪২টি উপজেলার ৩৫৭টি ইউনিয়নের মধ্যে যে ২৭১টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে সর্বকালের ভয়াবহ লোমহর্ষক তান্ডব হয়েছে। নির্বাচন কেন্দ্রীক গোলযোগের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়েছে। যা দক্ষিণাঞ্চলে স্মরণকালের যেকোন নির্বাচনকেন্দ্রিক গোলযোগে সর্বাধিক হতাহতের ঘটনা। এর মধ্যে ভোটের দিন মঙ্গলবার রাতে পিরোজপুরের মঠবাড়ীয়াতে আইন-শৃংখলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ৫জন। এ ঘটনাকে বিভিন্ন মহল থেকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর বড়াবাড়ি বলে অবিহিত করা হলেও দিনভর সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলের ৪১লাখ ২ হাজার ৪৯ জন ভোটারের মতামতকে পদদলিত করে কতিপয় সন্ত্রাশীর ভোট কেন্দ্র দখল করে চেয়ারম্যান পদে একটি দলীয় প্রতিকে সীল মরার বিষয়ে কোন জোর প্রতিবাদ ওঠেনি। এখনো প্রতিদিনই দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়ী-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চলছে। এবারের নির্বাচনকে দেশের প্রধান বিরোধী দল আগেভাগেই ‘প্রহসনের নির্বাচন হবে’ বলে দাবী করলেও নির্বাচন কমিশন নিজেদের ইমেজ এবং জনগনের ভোটের আমানত হেফাজতের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হননি বলে অভিযোগ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের। এবারে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ১ হাজার ১৯০ জন, সংরক্ষিত মহিলা আসনে ২হাজার ৭৫৭ এবং সাধারন ওয়ার্ড সমুহে ৯ হাজার ৪৫৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন।
তবে ভোটের দিন মূলত চেয়ারম্যান পদে তেমন কোন প্রতিদ্ব›িদ্বতা ছিল না প্রায় সব ইউনিয়নেই। যে সব ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে বুথে ঢুকতে পেরেছেন, তাদের হাতে মেম্বর পদের ব্যলট পেপার দিয়ে চেয়ারম্যানের ব্যলট পেপারটি নিয়ে নেয়া হয়। এমনকি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ওয়ার্কার্স পাটির জেলা সভাপতি নজরুল হক নিলু ‘ভোটের দিন সকাল ৯টার মধ্যে বাবুগঞ্জ ও উজিরপুরের সবগুলো ইউনিয়নের কেন্দ্রগুলো দখল’ করে নেয়ার যে অভিযোগ করেছেন ঐ একই চিত্র ছিল সমগ্র দক্ষিনাঞ্চল জুড়েই। মহলটির মতে ২০১৪-এর জানুয়ারিতে ভোটারবিহীন নির্বাচনে মহাজোট ক্ষমতা গ্রহনের মধ্যে দিয়ে নির্বাচন থেকে ভোটারদের দূরে রাখার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, পরবর্তীতে উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে তান্ডবের ভোটের পরে এবার সরাসরি ভোট ডাকাতি করে শাসক জোটের মূল শরিক দল সবগুলো ইউনিয়ন পরিষদ নিজেদের দখলে নিল।
তবে ওয়ার্কার্স পার্টির ইউপি নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়াকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল কিছুটা প্রসংশা করলেও তাদের এ বোধদয়কে ‘অনেক বিলম্বিত ও শিশুসুলব মন্তব্য’ বলেও মনে করছেন। তাদের মতে, যে প্রক্রিয়ায় ২০১৪-এর ভোটার বিহীন নির্বচনে মহাজোটের শরিকে থেকে দলটি দেশে গনতন্ত্রকে পঙ্গু করতে সহায়তা করেছে এবং পরবর্তী সময়ে উপজেলা পরিষদ ও পৌর নির্বাচন নিয়ে নিরবতা পালনের পরে সদ্য ইউপি নির্বাচন নিয়ে অভিযোগে আর কোন নৈতিকতা খুজে পাওয়া যায় না।
রাজনীতি থেকে সরে দাড়ানো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক বর্ষিয়ান ব্যক্তি এমন মন্তব্যও করেছেন যে, ‘১৯৭৩সালে সংসদীয় নির্বাচনে ওয়ার্কাস পার্টির বর্তমান সভাপতি রাশেদ খান মেনন বরিশাল সদর ও বাবুগঞ্জে নিজ বাড়ীর নির্বাচনী এলাকা থেকে ভাসানী ন্যাপের প্রর্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। সে নির্বাচনের আগে বরিশাল মহানগরী ও বাবুগঞ্জে বর্তমান মহাজোটের মূল দলেল শ্লোগান ছিল ‘ধানের শীষ ও আর কুড়ে ঘর ভেঙ্গে চুড়ে নৌকায় ভর’।
কুড়ে ঘর প্রতীক ছিল ন্যাপ (মোজাফফার) প্রার্থী মরহুম আরব আলী মিয়ার। ঐসব নেতবৃন্দের মতে, রাশেদ খান মেননের মত একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবীদকে তার মহাজোটের মূল শরিক দলকে চিনতে এতদিন সময় লাগল সেটাই আশ্চর্যের বিষয়। তবুও সাহস করে নিজ জোটের মূল শরিক দলের নির্বাচনী অপকর্মের কিছু চিত্র তুলে ধরায় দলটির প্রশংসাও করেছেন অনেকে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংগঠন ‘ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং সেল ফেমা’র বরিশাল জেলার সাধারন সম্পাদক এনায়েত হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার সকালে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহন শুরু হলেও সকাল ৯টার পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। পর্যায়ক্রমে বরিশালের অধিকাংশ কেন্দ্র শাসক দলের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় বলে জানিয়েছেন ফেমার নেতৃবৃন্দ।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন