শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

জনমনে আতঙ্ক বাড়ছে

| প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেষণে কর্মরত উচ্চমান সহকারী মো: নাসির উদ্দীন নিখোঁজ হন গত বৃহস্পতিবার। একই মন্ত্রণালয়ে কর্মরত এবং মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মোতালেব হোসেন নিখোঁজ হন শনিবার। দিনে নিখোঁজ হন গুলশানের লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিন। রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে প্রথম জনকে, বাসিলা থেকে দ্বিতীয় জনকে এবং গুলশান থেকে তৃতীয় জনকে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিরা তুলে নিয়ে যায়। তাদের স্বজনদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে জিডি করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ডিবি পুলিশ তাদের গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করে। শিক্ষামন্ত্রীর পিও নিখোঁজ হওয়ার পর সরকারী মহলে ব্যাপক তোলপাড় হয়। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয় দু’জন সহকর্মীর এভাবে নিখোঁজ হওয়ায় ঘটনায়। তাদের নিখোঁজ থাকা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আলোচনা চলাকালেই গত রোববার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) নিখোঁজ এই তিন জনকে গ্রেফতার দেখিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী ও শিক্ষামন্ত্রীর পিও’র বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। আর লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিকের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে জঙ্গীবাদে অর্থায়নের অভিযোগ। ঘটনা প্রবাহের এই বিবরণ থেকে এটা স্পষ্টতই প্রমাণিত হয় কথিত ব্যক্তিদের ডিবি পুলিশই তুলে নিয়ে গিয়েছিল। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাদের বিরুদ্ধে যেহেতু নির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে সেক্ষেত্রে তাদের ওইভাবে তুলে না নিয়ে গিয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কি গ্রেফতার করা যেতো না? তাহলে তাদের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন, উদ্বেগ ও আলোচনার অবকাশ সৃষ্টি হতো না। ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে অস্বীকার ও পরে গ্রেফতার দেখানো নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। এ ধরনের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। কেউ একজন নিখোঁজ হয়েছে। ডিবি পুলিশের তরফ থেকে তার গ্রেফতারের বিষয় নাকচ করে দেয়া হয়েছে। পরে তাকেই নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, এযাবৎ যারা নিখোঁজ হয়েছে বা যাদের অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিরা তুলে নিয়ে গেছে, তাদের অধিকাংশের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। স্বল্প সংখ্যকের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। কিছু সংখ্যকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
গত বছর অন্তত ৮৬ জন নিখোঁজ হয়েছে বলে একটি মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র কয়েকজন ফিরে এসেছে। কয়েকজনের লাশ পাওয়া গেছে। বাকীরা এখনো নিখোঁজ। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, কেউ বলতে পারে না। গুম, অপহরণ, খুন ইত্যাদি আইনশৃংখলা বাহিনীর নামে কিংবা বেনামে প্রায়ই ঘটছে। গত কয়েক বছর ধরেই এই কারবার চলছে। দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গেই আইনশৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন শাখা বা বিভাগ জড়িত। লক্ষ্য করার বিষয়, আইনশৃংখলা বাহিনীর তরফে এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করা হয়েছে। এই অস্বীকৃতির প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয়, অন্য কোনো সংঘবদ্ধ চক্র গুম, অপহরণ ও খুনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু এই চক্রের সঙ্গে কারা জড়িত তা আজও উদঘাটিত হয়নি। নিখোঁজ থাকার পর যারা ফিরে এসেছে তাদের কাছ থেকে বিশেষ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ এ ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ-তৎপরতা দেখায়নি। এ ধরনের ঘটনা নিরোধ ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আইনশৃংখলা বাহিনী এড়িয়ে যেতে পারে না। এ ক্ষেত্রে আইনশৃংখলা বাহিনী লাগাতার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। গুম, অপহরণ, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, পুলিশী হেফাজতে মৃত্যু ইত্যাদি নিয়ে অনেক কথা, অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। সাম্প্রতিককালেও গুমের পাশাপাশি বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। যশোরে এক রাতের ‘গোলাগুলিতে’ অজ্ঞাত পরিচয় চারজন নিহত হওয়ার পরদিন গত শনিবার ও গত রবিবার জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আরও দু’জনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পার্শ্ববতী ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরায় অনুরূপ অজ্ঞাত পরিচয় দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ওদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আটদের পরদিন শনিবার রাতে পুলিশের সঙ্গে ডাকাতদলের বন্দুকযুদ্ধে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছে। সঙ্গতকারণেই এসব ঘটনায় সারাদেশেই নতুন করে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
এইভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়া, গোলাগুলিতে অজ্ঞাত লাশ হয়ে যাওয়ার ঘটনা সুষ্ঠু আইনশৃংখলা ও নাগরিক নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এহেন প্রেক্ষাপটে আইনশৃংখলা বাহিনীর ভূমিকা নতুন করে প্রশ্নের মুখোমুখী হচ্ছে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে রীতি মতাবেক তাকে গ্রেফতার ও আইনের হাতে সোপর্দ করা আইনশৃংখলা বাহিনীর দায়িত্ব। পরিচয় গোপন করে তুলে নেয়া কিংবা বন্দুকযুদ্ধের নামে কাউকে মেরে ফেলা তাদের কাজ নয়। আইনের রক্ষকদের আইনের লংঘন থেকে বিরত থাকতে হবে। তা না হলে দুষ্কৃতীচক্রগুলোও এর সুযোগ নিতে পারে। নিচ্ছে না যে, তা হলফ করে বলা যায় না। কাজেই তাদের সতর্ক থাকতে হবে, শপথ ও ক্ষমতার এখতিয়ারের মধ্যে থাকতে হবে। একইসঙ্গে নাগরিক নিরাপত্তা সংহত ও নিশ্চিত করার অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন