বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

তাওবা : নিশ্চিত মুক্তির পয়গাম

প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. আবুল খায়ের স্বপন

॥ শেষ কিস্তি ॥
অতঃপর নবীজি (সা.) তার জানাজার নামাজ পড়ার জন্য অগ্রসর হলে হজরত উমর (রা.) নবীজি (সা.)-কে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এ মহিলার জানাজা পড়বেন অথচ এ মহিলা ব্যভিচার করছে? তখন নবীজি (সা.) বললেন, “এ মহিলা এমনভাবে তাওবা করছে যে, তা যদি মদিনার সত্তর জন অধিবাসীর মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয় তবে সকলের জন্য তা যথেষ্ট হবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজেকে পবিত্র করল তার চেয়ে উত্তম আর কাকে পাবে”। তাছাড়া একই প্রসঙ্গে হাদিসে আরও উল্লেখ আছে, “তোমাদের আগের উম্মতে এক লোক ছিল। সে নিরানব্বই জন লোককে খুন করার পর জিজ্ঞেস করল দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আলেম কে? তাকে এক খ্রিস্টান পাদ্রীর সন্ধান দেওয়া হলো। সে উক্ত পাদ্রীর নিকট জিজ্ঞেস করল, এ পরিস্থিতিতে তার তাওবা করার কোন সুযোগ আছে কি? পাদ্রী জবাব দিল না। এতে সে ক্ষুব্ধ হয়ে পাদ্রীকে হত্যা করে একশ’ খুন পূর্ণ করল। অতঃপর পুনরায় সে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। এবার তাকে এক আলেমের সন্ধান দেওয়া হলো। তার নিকট গিয়ে সে বলল, একশ’ খুন করেছে। তার কি তাওবা করার কোন সুযোগ আছে? আলেম বললেন, হ্যাঁ, তাওবার পথ তো খোলা আছে। তাওবার পথে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। তবে তুমি অমুক এলাকায় যাও। সেখানে আল্লাহর ইবাদত-গুজারী কিছু মানুষ বসবাস করে। তাদের সাথে তুমিও আল্লাহর ইবাদত কর। আর তোমার এলাকায় ফিরে এস না, ওটা খারাপ এলাকা। একথা শুনে, সে ব্যক্তি উক্ত এলাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। পথের মাঝখানে এসে সে মুত্যুবরণ করল। অতঃপর রহমতের ফেরেশতাগণ এবং আজাবেব ফেরেশতাগণ এসে তার ব্যাপারে বিবাদে লিপ্ত হলো। রহমতের ফেরেশতাগণ বলল, এ ব্যক্তি যেহেতু তাওবা করেছে এবং আল্লাহর প্রতি মন-প্রাণ সমর্পণ করে এসেছে (সুতরাং আমরা তাকে নিয়ে যাব)। আজাবের ফেরেশতাগণ বললেন, এ লোকটি কখনও কোন সৎ কাজ করেনি (সুতরাং আমরা তাকে নিয়ে যাব)। এরূপ অবস্থায় অন্য একজন ফেরেশতা মানব আকৃতিতে এসে দু’দলের মধ্যে বিবাদ ফয়সালা করে বললেন, লোকটি যেখান থেকে এসেছিল এবং যেখানে যাচ্ছিল এ দু’এলাকার দূরত্ব পরিমাপ কর, যে এলাকা নিকটবর্তী হবে সে পক্ষ তাকে নিয়ে যাবে। দূরত্ব মাপা হলো। আল্লাহর ইচ্ছায় (লোকটি) যে এলাকায় যাওয়ার ইচ্ছা করেছিল তা নিকটবর্তী হলো। অতঃপর রহমতের ফেরেশতা তাকে নিয়ে চলে গেল”। তাছাড়া খালেস তাওবাকারীকে আল্লাহ পাক আখেরাতে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি দুনিয়ার জীবনেও অনেক সম্মানিত করেন। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত সাহাবী দাহইয়া কালবী (রা.)-এর তাওবা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। যিনি ইসলাম পূর্ববর্তী জীবনে নিজ কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়ার ন্যায় ন্যক্কারজনক কাজ করেন এবং ইসলাম পরবর্তী জীবনে এসে আল্লাহর কাছে খালেস তাওবা করেন। আল্লাহ পাক তার তাওবা কবুল করে তাকে এমন মর্যাদাশীল সাহাবী হিসেবে মনোনীত করেন যে, পরবর্তীতে হজরত জিবরাইল (আ.) তাহার আকৃতি ধারণ করে মহানবী হজরত (সা.)-এর দরবারে ওহী নিয়ে আসতেন। তাছাড়া প্রখ্যাত বুজুর্গ হজরত মালেক বিন দিনার (রাহ.)-এর তাওবাও বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। যিনি জীবনের শুরু লগ্নে আল্লাহ পাকের আদেশ-নিষেধ সঠিকভাবে পালন করতেন না। হঠাৎ একদিন রাত্রে স্বপ্নে বিষধর সাপের তাড়া খেয়ে তার মধ্যে শুভ বুদ্ধির উদয় ঘটে এবং তিনি তার অতীত জীবনের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে এমনভাবে তাওবা করেন যে, মহান আল্লাহ পাক তার তাওবা কবুল করে তাকে জগতের একজন প্রখ্যাত বুজুর্গ ব্যক্তি হিসেবে মনোনীত করেন। খালেস তাওবাকারীর প্রতিদান জান্নাত। আর জান্নাতের অপরূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ পাক বলেন, “আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দার জন্য এমনসব সামগ্রী প্রস্তুত করে রেখেছি যা কোন মানব চক্ষু অবলোকন করেনি কিংবা কোন মানব মনে যার কল্পনা উদ্রেক হয়নি”। তাছাড়া হাদিসে বর্ণিত আছে, “জান্নাতের এক ছড়ি সমপরিমাণ স্থান দুনিয়ার সবকিছু হতে উত্তম”। “যে বেশি বেশি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে; আল্লাহ তার প্রত্যেক কষ্টে সুপথ বের করে দেন। প্রত্যেক চিন্তা-ভাবনা দূর করে দেন এবং তাকে এমনভাবে রুজি দান করেন যা সে ধারণাও করেনি”। আল্লাহ পাক আমাদেরকে উক্ত তাওবাকারীর অন্তর্ভুক্ত করুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন