শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

শীতে খান মুলা ও বাঁধাকপি

| প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বাজার সুসজ্জিত এখন শীতের শাক-সবজিতে। শীতের আমেজে ধোয়া ওঠা গরম ভাতের সঙ্গে তাজা সবজি তাই এখন নিত্যদিনের খাবার। শীতের সবজিগুলোর মধ্যে এমন কিছু সবজি আছে যেগুলো শুধু মানব দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে না, কিছু কিছু রোগের পথ্যেরও কাজ করে। এমনই কিছু সবজির গুণাগুণ তুলে ধরছি।
মুলা : মুলার আদি নিবাস ইউরোপ হলেও বর্তমানে এটির প্রাপ্তি পৃথিবীর সকল দেশে। আবহাওয়া ও মাটির প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন জাত উপযোগী স্থানে চাষ করা হয়। প্রাচীনকালে মুলা শুধু সবজি হিসেবেই খাওয়া হতোনা, ঔষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। মুলার পাতা শাক হিসেবে এবং মুলা সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। মুলার খাদ্য গুণ : পানি ৯৪.৪%, আমিষ ০.৭%, স্নেহ বা চর্বি ০.১%, শর্করা ৩.৪%, আঁশ ০.৮%, খনিজ ০.৬%, ক্যালরিফিক ভ্যালু ১৭%। মুলার খনিজ উপাদান (প্রতি ১০০ গ্রামে): ক্যালসিয়াম ৩৫ মি: গ্রাম, ফসফরাস ২২ মি.গ্রাম, আয়রন ০.৪ মি.গ্রাম, ভিটামিন সি ১৫ মি. গ্রাম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সামান্য, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, সোডিয়াম ম্যাঙ্গানিজ, কপার ও পটাসিয়াম সামান্য পরিমাণ। মুলা শাকের খাদ্যগুণ : পানি ৯০.৮%, প্রোটিন ৩.৮%, স্নেহ বা চর্বি ০.৪% শর্করা ২.৪%. আঁশ ১.০%, খনিজ ১.৬%, ক্যালরিফিক ভ্যালু ১৭। মুলা শাকের খনিজ উপাদান : ক্যালসিয়াম ২৬৫ মি. গ্রাম, ফসফরাস ৫৯ মি. গ্রাম, আয়রন ৩.৬ মি. গ্রাম, ভিটামিন সি ৮১ মি. গ্রাম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সামান্য। উপরোক্ত খাদ্য ও পুষ্টিগুণ ছাড়াও মুলার অন্যান্য ভেষজ ব্যবহার যথা: ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ, চর্মরোগ প্রতিরোধ, কোষ্ঠ পরিষ্কারক, পাইলস, শ্বেতীরোগ, বক্ষ সমস্যা, জন্ডিস নিরাময়ে সহায়ক। মুলা হজমে সাহায্য করে, রক্ত বিশুদ্ধকরণ, ত্বকের সৌন্দয্য বৃদ্ধি এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। ভেষজ ব্যবহার : * পাইলস : প্রতিদিন ৬০-৯০ মি.লি. টাটকা মুলার রস সকাল ও রাতে সেবনে দ্রæত নিরাময় করা সম্ভব। * বক্ষ সমস্যা : এ্যাজমা, কাশি ও ঠান্ডাজনিত সমস্যার জন্য এক চা চামচ মুলার রস সমপরিমাণ মধু ও বিট লবনের মিশ্রণ সেবনে স্বস্তি পাওয়া যায়। * জন্ডিস : মুলার সবুজ পাতা থেতলে পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে চিনি মিশ্রিত করে প্রতিদিন ৫০০ মি. লি. সেবনে জন্ডিস দ্রæত নিরাময় হয়। * শ্বেত রোগ : ৩৫ গ্রাম পরিমাণ মুলা বীজের গুঁড়ো ভিনেগারের সাথে মিশিয়ে শ্বেত স্থানে প্রলেপ দিলে ধীরে ধীরে তা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
বাঁধাকপি : পাতা জাতীয় সবজির মধ্যে বাঁধাকপি অন্যতম। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এটির চাষকরা হয়। দেহের পেশী গঠনে বাঁধাকপি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। রান্না করার সময় কপি দীর্ঘক্ষণ আঁচে রাখা যাবে না এতে পুষ্টিগুণ কমে যায়। তাই এটি স্বল্প আঁচে স্বল্প সময়ের মধ্যে রান্না করতে হবে। বাঁধাকপি শীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আবার এটি ক্যান্সার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে। বাঁধাকপিতে আছে ভিটামিন সি। আঁশও আছে প্রচুর। যারা নিয়মিত বাঁধাকপি খান তাদের পায়ুপথ ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায় অনেকাংশে। আর বাঁধাকপি ঘরে রেখে খেতে চাইলে রাখতে হবে ঠান্ডা জায়গায়। বাঁধাকপির খাদ্যউপাদান : পানি ৯১.৯%, আমিষ ১.৮%, স্নেহ বা চর্বি ০.১%, আঁশ ১.০% খনিজ ০.৬%, শর্করা ৪.৬%। খনিজ ও ভিটামিন (প্রতি ১০০ গ্রামে): ক্যালসিয়াম ৩৯ মি.গ্রাম, ফসফরাস ৪৪ মি. গ্রাম, আয়রন ০.৮ মি. গ্রাম, ভিটামিন সি ১২৪ মি. গ্রাম, ক্যালরিফিক ভ্যালু ২৭ কিলোক্যালরি। ভেষজ গুণ : * কাঁচা বাঁধাকপির সালাদ কোষ্ঠ পরিস্কার করতে একটি চমৎকার পথ্য। এক্ষেত্রে বাঁধাকপি চিকন করে কেটে, লবণ, লেবুর রস ও গোল মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে সুস্বাদু সালাদ তৈরি করা যেতে পারে। * পাকস্থলী আলসার : বাঁধাকপিতে থাকে ভিটামিন-ইউ, একটি শক্তিশালী এন্টি আলসার ফ্যাক্টর যা রান্নায় নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিদিন তিন বেলার খাবার পর ৯০-১৮০ গ্রাম কাঁচা বাঁধাকপির রস খেলে আলসার নিরাময়ে সহায়তা করে। * স্থুলতা নিয়ন্ত্রণে : বাঁধাকপিতে থাকে টারট্রোনিক এসিড যা দেহে চিনি ও অন্যান্য শর্করাকে চর্বিতে পরিণত হতে বাঁধা প্রদান করে। ১০০ গ্রাম কাঁচা বাঁধাকপিতে থাকে মাত্র ২৭ কিলোক্যালরি যেখানে একই পরিমাণ গমের রুটিতে থাকে ২৪০ কিলোক্যালরি শক্তি। * অকাল বার্ধক্য : বাঁধাকপির ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-পি এর যৌগ রক্তনালীকে সুদৃঢ় করে এবং রক্তনালীর দেয়ালে কোন বাঁধাকে অপসারণ করে। আবার পিত্তথলীতে পাথর জমতে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে।
ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিষ্ট, ০১৭১৬২৭০১৭০

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন