বিশেষ সংবাদদাতা : দিতির স্বামী চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী খুন হয়েছেন ১৭ বছর আগে। হত্যাকাÐের ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও আলোচিত এ হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়নি। এক সময় মামলার খোঁজ-খবর নিতেন সোহেল চৌধুরীর মা নূরজাহান বেগম। তিনি মারা যাওয়ার পর মামলার খোঁজ-খবর নেয়ার মতো একমাত্র দিতিই ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর মামলাটি আদৌ শুরু হবে কি না তা নিয়ে সংশয় থেকেই গেল।
১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে চলচ্চিত্র নায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ব্যাপারে সোহেলের ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেন। চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেনÑ ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আশীষ চৌধুরী, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন, আদনান সিদ্দিকী, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ও ফারুক আব্বাসী। ওই মামলায় ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। এরপর মামলাটি দ্রæত নিষ্পত্তির জন্য ২০০৩ সালে ঢাকার ২ নম্বর দ্রæত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়। আসামিদের মধ্যে তারিক সাঈদ মামুনের পক্ষে হাইকোর্টে মামলাটি বাতিল চেয়ে আবেদন করা হলে আদালত একটি রুল দেয়। সেই সঙ্গে বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়।
আদালত সূত্র জানায়, গত ১০ বছরেও ওই রুলের নিষ্পত্তি না হওয়ায় বিচার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। আসামিদের মধ্যে ইমন কারাগারে এবং আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ সাত আসামি জামিনে আছেন। আরেক আসামি আশীষ চৌধুরী পলাতক।
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় অভিযোগ করা হয়, হত্যাকাÐের কয়েক মাস আগে কথিত এক বান্ধবীকে নিয়ে ওই ক্লাবের মধ্যে সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের তর্কাতর্কি হয়। তখন উত্তেজিত হয়ে সোহেল ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গালাগালি করেন। তার প্রতিশোধ হিসেবে সোহেলকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাÐের দিন রাত ১টার দিকে সোহেল বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। এসময় তাকে বাধা দেয়া হয়। এরপর রাত আড়াইটার দিকে ফের প্রবেশের চেষ্টা করলে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান সোহেলকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খুনের পরপরই আসামি আদনান ধরা পড়েছিলেন।
১৯৮৪ সালে এফডিসির ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রুপালি জগতে পা রাখেন দিতি ও সোহেল। কয়েক বছর পর দু’জনে বিয়ে করেন। প্রথম দিকে এই জুটি বেশ কয়েকটি ব্যবসা সফল ছবি উপহার দেন। পরে দিতি ঢালিউডে পাকাপোক্ত আসন করে নিতে সক্ষম হলেও সোহেল চৌধুরী ছিটকে পড়েন। ঢাকাই চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা শুরু হলে দিতি চলচ্চিত্র ছেড়ে টিভি নাটকে অভিনয় শুরু করেন।
গত ২০ মার্চ রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন দিতি। গত বছর তার মস্তিষ্কে ক্যান্সার ধরা পড়ে। ২৫ জুলাই ভারতের চেন্নাইয়ের ‘মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রমাটোলজি’তে (এমআইওটি) তিনি ভর্তি হন। প্রায় দুই মাস চিকিৎসার পর দেশে ফেরেন। এরপর মাসখানেক সুস্থ ছিলেন। কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এরপর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। আবারও তাঁকে চেন্নাইয়ে নেয়া হয়। চেন্নাইয়ের চিকিৎসকরাও হাল ছেড়ে দেন। ৮ জানুয়ারি তাঁকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে। মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন