খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় সামনে রেখে দন্ডের ভয়ে বিএনপির গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, গতকাল থেকে বিএনপির সদস্য সংগ্রহের গঠনতান্ত্রিক নিয়ম পাল্টে গেছে, এটা হাস্যকর। খালেদা জিয়ার মামলায় রায়কে কেন্দ্র করেই বিএনপি তাদের গঠনতনন্ত্রের সাত ধারা নির্বাসনে দিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
গতকাল সোমবার বিকালে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে ঢাকা-১০ আসনের আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অভিযান অনুষ্ঠানে তিনি এ দাবি করেন। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন নিয়মের মধ্যে হয় জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ ফোরাম ২৫০০ কাউন্সিলরের অনুমোদন ছাড়া একটা শব্দও আমরা পরিবর্তন করতে পারি না। তিনি বলেন, যখন মামলার রায় হবে, তখন মিউ মিউ করে থলের বিড়াল বেড়িয়ে এসেছে। কিভাবে বের হলো? রাতের অন্ধকারে এক কলমের খোঁচায় বিএনপির গঠনতন্ত্রের সাত ধারা নির্বাসনে চলে গেল। নির্বাসনে, কি অদ্ভুদ এ দেশ ! কি অদ্ভুদ বিএনপি! কি অদ্ভুদ বিএনপির গণতন্ত্র ! কি তাদের গঠনতন্ত্র ! ঘরেই যাদের গণতন্ত্র নেই, তারা দেশের গণতন্ত্র কিভাবে প্রতিষ্ঠা করবে? কাদের বলেন, এক বছর দশ মাসে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একটা মিটিং হয় না। আমরা শক্তি আমরা বল, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল। এখন সাত ধারা কোথায়? ফখরুল সাহেব বলুন, রাতের অন্ধকারে সাত ধারা কোথায় পাঠালেন? তিনি বলেন, সকালে তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল ইসির কাছে পাঠালেন। তাহলে কি আদালতের রায় ইসির ইচ্ছা অনুযায়ী হবে? ইসি কি আদালতকে বলবে, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না। যদি রায় তাদের পক্ষে না আসে।
ইসির কাছে পাঠানো গঠনতন্ত্র সংশোধনের চিঠির মধ্যে সাত ধারা নেই জানিয়ে ওবায়দুল কাদের ৭ ধারায় কি আছে তার বর্ননা দেন। তিনি বলেন, সিইসির কাছে পাঠানো এই গঠনতন্ত্রে ৭ ধারা নেই। সাত ধারার প্রথমটি হচ্ছে- ক. ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নাম্বার এক। যেখানে দন্ডিত ব্যক্তি বিএনপির কোন নেতা হতে পারবে না, সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পাবে না, এমপি হতে পারবে না। খ. কেউ যদি দেওলিয়া হয় তাহলে বিএনপির সদস্য হতে পারবে না। গ. কেউ যদি উন্মাদ হয় তাহলে বিএনপির সদস্য হতে পারবে না। ঘ. কেউ যদি দুর্নীতিবাজ হয় তাহলে বিএনপির সদস্য হতে পারবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এবার বুঝে দেখুন, এই চারটা বিষয় আছে ৭ ধারায়। এই সাত ধারা রাতের অন্ধকারে কলমের খোঁচা দিয়ে বাদ দিয়ে নতুন করে গঠনতন্ত্র সম্মেলনের এক বছর দশ মাস পর নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে। তাহলে কি দাড়ায়? আগে ছিল এখন নেই।
দেওলিয়া হলেও তারা নির্বাচন করবে তাদের চিনে রাখার পরামর্শ দিয়ে কাদের বলেন, দেওলিয়া হলে, দন্ডিত হলে, দুর্নীতিবাজ হলে বিএনপির সদস্য হতে পারবে, তাদের চিনে নিন এই বিএনপিকে?
বিএনপি ভাঙ্গার শঙ্কা থেকে সংবিধান সংশোধন করেছে বলেও দাবি করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, আজকে যেই দল আদালতের রায়ের আগে, যদি বেগম জিয়া দন্ডিত হয়ে যায়, অথবা দুর্নীতির মামলায় সাজা হয়ে যায়, সে কারণে সরকারি দল যাতে দল ভাঙ্গতে না পারে সেজন্য সাত ধারা নিবাসনে পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, ফখরুল সাহেব বিএনপিকে ভাঙ্গার জন্য আওয়ামী লীগের প্রয়োজন নেই। বিএনপি যেভাবে নেতিবাচক, অগণতান্ত্রিক রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরেছে, বিএনপিকে ভাঙ্গার জন্য বিএনপিই যথেষ্ট।
বিএনপির ঈমান দূর্বল দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, মামলা হামলা সহ্য করে আওয়ামী লীগ দেশ স্বাধীন করেছে। মামলা হামলা সহ্য করেই বিএনপিকে আন্দোলনে পরাজিত করেছি আমরা। মামলা হামলার ভয়ে আজকে বিএনপি তাদের সংবিধান পরিবর্তন করে ফেলেছে। বিএনপির ঈমানের জোর এত হালকা, পালকের মত হালকা তাদের ঈমান। তিনি বলেন, সাজা হলে দুর্নীতিবাজ আর নেতা হতে পারবে না, সেজন্য সাত ধারার বিধায়। গুডবাই সাত ধারা, এটা হচ্ছে বিএনপি। এই মুখোশ উন্মোচন করা দরকার দেশের মানুষের সামনে।
ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপসের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।
প্রসঙ্গত: গত শনিবার রাতে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পরদিন গত রবিবার বিকালে নির্বাচন ভবনে যান বিএনপির সিনিয়র তিন নেতা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ও খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান জানান, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক রয়েছে। এ উপলক্ষে বিএনপির কাউন্সিলের নানা সিদ্ধান্ত ও গঠনতন্ত্র সংশোধন বিষয়ে কিছু তথ্য নির্বাচন কমিশনকে জানাতে আসেন তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন