মাজহাবের দিক দিয়ে মুসলিম দুনিয়ায় সর্বাধিক প্রচারিত হানাফী তেমনি তরিকতে কাদেরিয়াত ও চিশতিয়া তরিকাদ্বয়ের ভক্ত অনুসারীদের সংখ্যাও বিশেষত বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশে বিপুল।
কাদেরিয়া তরিকার প্রবর্তক ছিলেন পীরানে পীর দস্তগীর মুহিউদ্দীন গাউসুল আজম হজরত আব্দুল কাদের জিলানী বাগদাদী (রহ.) হানাফী অনুসারীদের ন্যায় কাদেরিয়া তরিকাপন্থীদের সংখ্যাও বিপুল বিশেষত বাংলাদেশের রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী গাউসুল আজম মসজিদ-এর কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান (রহ.) ছিলেন কট্টর হানাফী, তেমনি কাদেরিয়া-চিশতিয়া উভয় তরিকার ভক্ত অনুসারী। তবে প্রচলিত সকল মাজহাব-তরিকার ইমাম ফকীহ এবং পীর-মাশায়েখের প্রতি তিনি যথার্থ ভক্তি-সম্মান প্রদর্শন করতেন। পীর পরিবারের কৃতী সন্তান মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর মহান পিতা হজরত মাওলানা শাহ মোহাম্মদ ইয়াছীন (রহ.) এবং তার নানা মাওলানা আবদুল মজীদ (রহ.)ও ছিলেন এ দেশের খ্যাতনামা পীর এবং ফুরফুরা শরীফের পীর হজরত মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকী (রহ.)-এর সুযোগ্য খলিফা।
হরজত বড়পীর আবদুল কাদের জীলানী (রহ.)-এর চরম ও পরম ভক্ত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) এ জগত বিখ্যাত আধ্যাত্মিক সাধকের পবিত্র মাজার জিয়ারত করেছেন বহুবার। তিনি যখনই বাগদাদ সফরে গমন করেছেন প্রথমেই বড়পীর গাউসুল আজমের মাজার জিয়ারত করেছেন। তার স্মৃতির স্মরণে ও কাদেরিয়া পাবলিকেশন্স মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর অমরকীর্তিগুলোর অন্যতম। তিনি প্রতিষ্ঠাতা খতিব হিসেবে মসজিদে গাউসুল আজমের মিম্বরে দাঁড়িয়ে প্রতি জুমআ’ ও ঈদের খোৎবা-বক্তব্য প্রদান করেছেন প্রায় দুই যুগ ওফাত পূর্ব সুস্থকালীন অবস্থায়। ২০০৬ সালের ৬ ফেব্রæয়ারি তার ওফাতের পর এ মসজিদ প্রাঙ্গণেই লাখ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং মসজিদের দক্ষিণ পাশে তাকে দাফন করা হয়। সেখানেই তিনি চিরশায়িত। আল্লাহ্ তাকে ‘জান্নাতুল ফেরদাউস’ দান করুন।
মসজিদে গাউসুল আজম প্রতিষ্ঠার চমৎকার পটভূমিকা রয়েছে। মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান ১৯৭৬ সালের ১৬ জুলাই ঢাকা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের যে মহাসম্মেলন আহŸান করেন, তার আগেই তিনি এ সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। এ সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে একটি ছিল ঢাকার অদূরে মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্য জমি ক্রয় করা। এর আগেই তিনি গাউসুল আজম প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন এবং এ জন্য বরাদ্দও নির্ধারণ করেছিলেন।
মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মধ্যে আরো উল্লেখযোগ্য দু’টি বিষয় ছিল, যার একটি হচ্ছে জমিয়তের একটি স্থায়ী অফিস ও অপরটি হচ্ছে একটি আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করা। প্রথমটি মসজিদে গাউসুল আজম সংলগ্ন জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কমপ্লেক্স এবং অপরটি দৈনিক ইনকিলাব ভবনের কাদেরিয়া পাবলিকেশন্স।
আগেই বলা হয়েছে, মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) ছিলেন হজরত গাউসুল আজম (রহ.)-এর একান্ত ভক্তদের একজন। তাই তিনি মসজিদ নির্মাণ ও ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাকালেই এ উভয়ের নাম যথাক্রমে মসজিদে গাউসুল আজম ও কাদেরিয়া পাবলিকেশন্স মনোনীত করেন। স্মরণযোগ্য যে, জমিয়তের জন্য স্থায়ী অফিস ও কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনারই অংশবিশেষ মসজিদে গাউসুল আজমের আত্মপ্রকাশ। মসজিদে গাউসুল আজমের বর্তমান খতিব জমিয়তের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক বিশিষ্ট কবি মাওলানা রুহুল আমীন খান এ মসজিদ কায়েম করার ইতিহাস ১৯৮৮ সালেই লিখেছিলেন :
‘এ সময়ে মাওলানা মান্নান গভীরভাবে উপলব্ধি করতে থাকেন জমিয়তের জন্য নিজস্ব একটি স্থায়ী অফিস ও কমপ্লেক্স গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা। ওয়ার্কিং কমিটির সভায় তিনি এই মহৎ ইচ্ছা ব্যক্ত করলে সদস্যগণ উৎফুল্লভাবে জানান এর প্রতি সমর্থন এবং ব্যক্ত করেন এর বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ়প্রত্যয়, তৈরি হয় পরিকল্পনা। স্থির হয় দেশে ইসলামী শিক্ষার বিস্তার, ইসলামী আদর্শের প্রচার ইসলামী তাহজীব তমদ্দুনের বিকাশ সাধনের কেন্দ্ররূপে গড়ে তুলতে হবে এমন একটি কমপ্লেক্স যেখানে থাকবে একটি মসজিদ। যে মসজিদে ইসলামী জিন্দেগীর বিভিন্ন দিকের তা’লীম হবে। জিকির হবে। তরবিয়াত চলবে। যেখানে থাকবে একটি ইসলামী গবেষণা কেন্দ্র।
এরপর চলতে থাকে মসজিদের জন্য জমি বরাদ্দের চেষ্টা-তদবির সরকারি প্রতিশ্রæতিও আসতে থাকে, কিন্তু নানা কারণে প্রতিশ্রæতি অপূর্ণ থেকে যায়। অবশেষে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতি বিনামূল্যে মসজিদ কমপ্লেক্সের জমি দানের কথা ঘোষণা করেন। শুরু হয় জমি সংগ্রহের চেষ্টা। মহাখালীতে ৮ বিঘা ১৪ কাঠা জমি পাওয়া যায়। তবে এ নিচু জমি ভরাট করতে হবে। ২৫-৩০ ফুট নিচু জমি ভরাট করা খুব সহজ ব্যাপার নয়, এ দুঃসাধ্য কাজ অর্থাৎ ভরাট করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন জমিয়তের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যগণ। তাদের এক মাসের বেতনের টাকা এবং প্রতিটি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ৭৫০ টাকা প্রদান করবে ভিটি বালু ফেলে জমিন উঁচু করার জন্য। প্রাপ্ত সমুদয় চাঁদার টাকা ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে জমিয়তের নামে ব্যাংকের হিসাবে জমা হবে। সেখান থেকে প্রয়োজনমতো চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হবে, যা জমি ভরাটের কাজে ব্যয় করা হবে। জমিয়তের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো নগদ টাকা গ্রহণ করা হবে না। ভরাটের কাজ তদারকি করবেন মাদ্রাসার শিক্ষকগণ। এসব ব্যবস্থা গৃহীত হবার পর ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। যথারীতি কাজ চলতে থাকে এবং সংশ্লিষ্ট সবাই সুষ্ঠু-সুন্দর এবং আন্তরিকভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ভরাট করার পর মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মিত হবে। এর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কী হতে পারে? এতকাল যাবৎ জমিয়তের স্থায়ী নিজস্ব কোনো অফিস না থাকায় এখানে- সেখানে মিটিং-সভাবেশ করতে হয়েছে এবং জমিয়তের নিজস্ব মসজিদ না থাকায় নামাজ আদায়ে অসুবিধা হয়ে আসছিল এবার সেসব অসুবিধার অবসান হতে চলছে এটি এক দুর্লভ বিষয়।
সুকৌশলী দূরদর্শী মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) পূর্ব থেকেই মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দের কাছে সুপরিচিত ছিলেন। তখন পর্যন্ত যেসব আরব রাষ্ট্রের দূতাবাস ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তিনি সরাসরি এসব দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেন, বিভিন্ন রাষ্ট্রদূত কর্মকর্তাকে দাওয়াত করে তাদের নিকট তার পরিকল্পনা উপস্থাপন এবং ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি বিভিন্ন আরবদের নিকট কমপ্লেক্স মসজিদ প্রতিষ্ঠায় আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানান এবং আরবী ও ইংরেজি ভাষায় তার পরিচিত-সংশ্লিষ্ট সকল মহলে প্রেরণ করেন। এ ব্যাপারে তিনি অবিরাম চেষ্টা চালাতে থাকেন। বস্তুত সরকার তো বিনামূল্যে কেবল জমি দান করেই বাহবা কুড়ালেন, কিন্তু প্রদত্ত জলাশয় ভরাট করে সেখানে কমপ্লেক্স মসজিদ নির্মাণে যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন এর ব্যবস্থা মাওলানা মান্নান (রহ.)কেই করতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করতে হয়। ১৯৮১ সালের মে মাসের শেষ দিক ২ ও ৩ জুলাই ইরাকের রাজধানী বাগদাদে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি)-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বাদশ সম্মেলনে পর্যবেক্ষক হিসেবে তৎকালীন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি হিসেবে মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) আমন্ত্রিত হন, তারই নেতৃত্বে চল্লিশজনের অধিক সদস্য সমন্বয়ে এক প্রতিনিধিদল তার সফরসঙ্গী হয়েছিলেন। সেখানে সপ্তাহকাল অবস্থানের সময় একদিন মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) ইরাকের ধর্ম ও ওয়াক্ফ মন্ত্রণালয়ের দফতরে গমন করেন এবং সংশ্লিষ্ট ধর্মমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন এবং একপর্যায়ে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া একটি ফাইল মন্ত্রীকে প্রদান করেন, যাতে গাউসুল আজম মসজিদ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা বিবরণ বর্ণিত ছিল।
গাউসুল আজমভক্ত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর লালিত স্বপ্ন বাস্তব রূপলাভ করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দেয়, গাউসুল আজম মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য আর্থিক অনুদানের নিশ্চিত প্রতিশ্রæতি আসে প্রজাতন্ত্রী ইরাক সরকারের পক্ষ হতে। এ নির্মাণ ব্যয়ভার গ্রহণের কথা ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ঘোষণা করেন। এ ঘোষণা প্রমাণ করে যে, ইরাকি নেতৃবৃন্দের নিকট মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) কত আস্থাভাজন ও মর্যাদাবান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার আহŸানে সাড়া দিয়ে তৎকালীন ইরাক সরকার বাংলাদেশী মুসলিম জনতার হৃদয় জয় করেছিলেন নিঃসন্দেহে। ইরাকি অনুদান প্রাপ্তির সরকারি ঘোষণা ছিল মাওলানা এম এ মান্নানের প্রচেষ্টার সফল পরিণতি। বিরাট অংকের আর্থিক সাহায্যের এ প্রতিফলে জমিয়ত প্রধানের পক্ষে সম্ভব মহৎ হয়েছে মসজিদে গাউসুল আজম কমপ্লেক্স নির্মাণের পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনায়। পরবর্তী বর্ণনায় সে বিষয়টি লক্ষ করা যাবে অর্থাৎ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলো।
মরহুম প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের অনুদান ঘোষণার পর ইরাক হতে ইঞ্জিনিয়ারদের একটি বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায় চলে আসেন। তারাই সয়েল টেস্ট করার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করেন। ইরাকি দূতাবাসের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এখানকার বিভিন্ন প্রাচীন ও আধুনিক মসজিদ পরিদর্শন করে এতদঞ্চলের স্থাপত্যরীতি ও বৈশিষ্ট্যের একটি ধারণা নেন এবং অবশেষে মাটি পরীক্ষার রিপোর্টসহ বাগদাদে চলে যান এবং ইরাকের ধর্ম ও আওকাফ মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশলীগণ বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং স্থাপত্য ঐতিহ্যের সঙ্গে বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতার লীলাভূমি ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতির পাদপীঠ ইরাকের স্থাপত্যের সমন্বয়ে তৈরি করেন বাংলাদেশ সয়েলটেক। কাজ শুরু হয়ে যায়। সমতল থেকে ৩৬ ফুট গভীরে ড্রিলিং করে সেখান থেকে পাথর, বালু আর লোহার সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয় পাইল, ক্রমে পাইলিংয়ের কাজ সমাপ্ত হলে শুরু হয় মূল ভবনের নির্মাণকাজ।
জলাভূমি ভরাট থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে থাকে। এ সময় ইরাকি প্রকৌশলীদের ভ‚মিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু এরপরও তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়নি, পরবর্তী কাজে তারা আত্মনিয়োগ করে। জানা যায়, একই সঙ্গে চলে মসজিদ নির্মাণের কাজ, মিনারের কাজ, অজুখানা বিল্ডিং নির্মাণের কাজ এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের অফিস ভবন নির্মাণের কাজ। যে অফিস ভবনের পরিকল্পনা হচ্ছে ১০ তলার এবং যার দোতলা পর্যন্ত নির্মাণের ব্যয় বহন করে ইরাক সরকার। এসব তথ্য বিবরণ মাওলানা রুহুল আমীন খানের একটি রচনা হতে জানা যায়।
মসজিদ কমপ্লেক্সের পরবর্তী কাজগুলো জমিয়তের পক্ষ হতে পরিচালনা করা হলেও ইরাকের আওকাফ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে প্রকৌশলীগণ কিছুদিন পর পর এসে মূল নকশা ও প্লান অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না তা দেখতেন। কাজ সমাপ্ত হবার পর ঠিকাদারের বিল যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ইরাকের আওকাফ মন্ত্রণালয় পাস করে তা ঢাকাস্থ ইরাকি দূতাবাসে পাঠিয়ে দেয় এবং দূতাবাসের নির্ধারিত ব্যাংকে এবং সেখান থেকে ঠিকাদাররা টাকা উঠান। মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের এটি হচ্ছে কাহিনী, যা মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর স্বপ্নের সঠিক বাস্তব রূপ।
অতঃপর মসজিদে গাউসুল আজম ও কমপ্লেক্স পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। এ দু’টি প্রতিষ্ঠান আলাদা অস্তিত্বের অধিকারী হলেও প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক অভিন্ন পরিকল্পনারই অংশ, বর্ণিত বিবরণ তথ্য তারই স্বাক্ষর বহন করে। এ প্রতিষ্ঠাদ্বয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা ও উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আলহাজ মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর অপরিসীম ত্যাগ সাধনা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর থেকে মসজিদে গাউসুল আজমের খতিব হিসেবে তিনি সারা জীবন (অসুস্থ হবার আগ পর্যন্ত) প্রতি জুমা ও ঈদে অসংখ্য খুৎবা প্রদান করেন এবং সেগুলোতে ইসলামের নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন। জুমাবারে প্রদত্ত তার খুৎবাসমূহের একটি সংকলন (১ম খÐ) সিরাতুল মুস্তাকিমের সন্ধানে নামে গ্রন্থাকারে ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত হয়। বার্ড কম্প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন প্রকাশিত রয়েল সাইজের এ গ্রন্থ ৩৬৮ পৃষ্ঠা সংবলিত। গ্রন্থের শুরুতে দেড় পৃষ্ঠাব্যাপী ভূমিকায় প্রসঙ্গ কথা শিরোনামে দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক রুহুল আমীন খান মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে যা লিখেছেন তার অংশবিশেষ এই :
“ঢাকার মহাখালীতে মসজিদে গাউসুল আজম প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে তিনি প্রতি শুক্রবার জুমআর খুৎবার পূর্বে বয়ান রেখে আসছেন প্রায় নিয়মিতভাবে। তার সে প্রজ্ঞাপূর্ণ ও আকর্ষণীয় বয়ান শোনার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মসজিদে এসে ভিড় জমান ইসলামী জ্ঞানপিপাসু শ্রোতামÐলী। সেসব বয়ান ক্যাসেটবদ্ধ করা হয়েছে। সেসব মূল্যবান নিবন্ধ গ্রন্থাকারে পাওয়ার জন্য শ্রোতা এবং পাঠকদের নিকট থেকে দাবি উত্থাপিত হচ্ছিল দীর্ঘদিন থেকে। সে দাবি পূরণের তাকিদ থেকেই এ গ্রন্থের প্রকাশ।’’
জনাব আব্দুর রশীদের ভাষ্যে মসজিদে গাউসুল আজম কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠায় ছারছীনার পীর হযরত মাওলানা শাহ আবু জাফর মুহাম্মদ ছালেহ (রহ.)-এর অবদান এর ওপর আলোকপাত রয়েছে। তার পরিবেশিত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার মহাখালীতে সুরম্য গাউসুল আজম প্রতিষ্ঠায়ও পীর সাহেবের অবদান রয়েছে। মাওলানা এম এ মান্নান সাহেবের প্রচেষ্টা এবং ইরাক সরকারের দানে নির্মিত হলেও শাহ আবু জাফর মুহাম্মদ ছালেহ (রহ.)-এর এতে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। কারণ এ মসজিদ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব ইরাক সরকার দিয়েছেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনকে, যার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন হুজুর কেবলা। সাদ্দাম হোসেনের সাথে হুজুর কেবলা এবং মাওলানা এম এ মান্নান সাহেবের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে তিনি এই বড় ব্যয় নির্বাহ করেছিলেন হুজুরকে তাই এ মসজিদের মোতাওয়াল্লি করা হয়েছিল ইরাকি সরকারের পক্ষ থেকে ইন্তেকালের পর তাকে এ মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত জমিয়তের ভবনেই শেষ গোসল দেয়া হয়েছিল। (পৃ: ৭৯)
পরিশেষে বলে রাখা দরকার যে, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, পীর বংশের কৃতী সন্তান পীর-আওলিয়াভক্ত বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রাণপুরুষ সভাপতি দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং মসজিদে গাউসুল আজম কমপ্লেক্সের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রতিষ্ঠাকারী আলহাজ মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর ইসলামী ঐতিহ্য ধন্য এ অমর কীর্তি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের মাশায়েখ উলামার ঐক্য প্রতিষ্ঠান তথা মিলন কেন্দ্র হিসেবে মসজিদে গাউসুল আজম কমপ্লেক্স ইতোমধ্যেই খ্যাতি অর্জন করেছে এবং বিশ্ব মুসলমানের বিশেষত ইসলামী চিন্তাবিদ মনীষীদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। আমরা এর সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন দীর্ঘস্থায়িত্ব কামনা করি।
লেখক : সাংবাদিক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন