সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

শিশু-কিশোরদের অ্যাড্রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সি

| প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির হরমোনের কোন ঘাটতি হলে তাকে অ্যাড্রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সি বলা হয়। এটি খুব বেশি লোকের দেখা যায় না। মূলত: এডিসন ডিজিজকেই এ দলের প্রধান রোগ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। গøুকোকর্টিকয়েড হরমোন ঘাটতির জন্য যে শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়, তাকে এডিসন ডিজিজ বলা হয়। এডিসন ডিজিজ দু’রকম হয়, যেমন -
ক) প্রাইমারীঃ অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির নিজস্ব সমস্যার কারণে গøুকোকর্টিকয়েড উৎপাদন কমে গেলে এটি হতে পারে।
খ) হাইপোথ্যালামাস অথবা পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যার কারণেও গøুকোকর্টিকয়েড উৎপাদন কমে এডিসন ডিজিজ হতে পারে।
সামগ্রিক কারণগুলোকে আবার জেনেটিক অথবা পরে কোনভাবে শুরু হওয়া এভাবে ভাগ করা যায়। জন্মের পর কোন এক সময় যে কারণগুলো অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, সেগুলোর মধ্যে আছে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির টিবি, হিস্টোপ্লাসমোসিস ও টিউমার।
লক্ষণসমূহ:
লক্ষণেরর সংখ্যা ও তীব্রতা নির্ভর করে কতদ্রæত বা কি হারে গøুকোকর্টিকয়েডের ঘাটতি হয়েছে তার উপরে। সাধারণভাবে যে লক্ষণগুলো বেশি দেখা যায় তা হলো-
১। দীর্ঘদিন কোন লক্ষণ না দেওয়া।
২। অনির্দিষ্ট শারীরিক দূর্বলতা বা খারাপ লাগা।
৩। হঠাৎ করে রক্তচাপ কমে গেছে এমন লক্ষণ দেখা দেওয়া।
৪। রোগীর অ্যাড্রেনাল ক্রাইসিস নামক মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে যাতে অতিদ্রæত হাসপাতালে ভর্তি করে রোগীর চিকিৎসা করা না হলে মৃত্যুও হতে পারে।
৫। যে লক্ষণগুলো সরাসরি গøুকোকর্টিকয়েড ঘাটতির জন্য হয়-
ক) রক্তচাপ অতি কমে যাওয়া।
খ) হঠাৎ করে পেটে ব্যথা হওয়া।
গ) বমি হওয়া।
ঘ) জ¦র বা জ¦র জ¦র ভাব।
ঙ) রক্তের গøুকোজ কমে যাওয়া।
অনেক রোগী দীর্ঘদিন যাবৎ এ সমস্যায় ভুগে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে পারেন। সেক্ষেত্রে দূর্বলতা বা খারাপ লাগা, ক্রমশ: দৈহিক ওজন কমতে থাকা বা শুকিয়ে যাওয়া, ক্ষুধা-মন্দা, বমিবমিভাব বা মাঝে মাঝে বমি হওয়া, পেটে ব্যথা ব্যথা ভাব, মাংশপেশিতে ব্যথা বা কামড়ানো ভাব, অস্থিসন্ধির হালকা ব্যথা, লবণ খাওয়ার অতি আগ্রহ, রক্তের গøুকোজ কমে গিয়ে হাইপোগøাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দেওয়া (খুব কম বয়সিদের বেশি হয়) ইত্যাদি। একটি লক্ষণ অ্যাড্রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো- গায়ের রং ক্রমশ: কালো হয়ে যাওয়া। বিশেষত: শরীরের যে অংশে রোদ পড়ে, যেমন- হাত-পা, হাত-পায়ের তালুর রেখাগুলোতে, দাঁতের মাড়ি, মুখের ভিতরের উপরের তালু, যৌনাঙ্গের স্তনের অ্যারিউলা ইত্যাদি। বালিকাদের ক্ষেত্রে মাসিক শুরু না হওয়া ও মাসিক শুরুর পূর্ববর্তী লক্ষণগুলির অনুপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষনীয়। অটোইমিউনিটি থাকলে সেক্ষেত্রে অন্য অটোইমিউইউন রোগগুলো একই সাথে বিরাজমান থাকতে পারে।
যদি পিটুইটারি বা হাইপোথ্যালামাসের কারণে অ্যাড্রেনাল ডিজিজ হয়ে থাকে, তাহলে এ লক্ষণগুলো অনেক সময় অনুপস্থিত থাকতে পারে।
রোগ শনাক্তকরণ:
শুরুতেই রোগীর পরিপূর্ণ শারীরিক লক্ষণাদির মূল্যায়ন করতে হবে। এটি রোগ নির্ণয়ের ভিত্তি স্থাপন করে দিতে পারে। এরপর দৈহিক ওজন, উচ্চতা, গায়ের রং এর পরিবর্তন ইত্যাদি শনাক্ত করতে হবে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা :
সর্বপ্রথম যে পরীক্ষাটি করা যায়, তা হলো- সকাল বেলার রক্তে কর্টিসলের পরিমাপ নির্ধারণ। এটি যদি নির্দিষ্ট পরিমাণের উপরে থাকে, তা হলে অ্যাড্রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সি থাকার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। আবার কর্টিসলের পরিমাণ খুব কম হলে অ্যাড্রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যদি মাঝামাঝি হয় তাহলে পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ নির্ধারণ করা হয়। সেক্ষেত্রে ঝযড়ৎঃ ঝুহধপঃযবহ টেষ্টটি খুব নির্ভরযোগ্য। অনেক সময়ই পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম অনেক তথ্য দিতে পারে। তবে পেটের সিটি স্ক্যান অনেক ভালো পরীক্ষা। যখন রক্তের কর্টিসল দেখা হয়, একই সাথে এসিটিএইচ দেখাটাও প্রয়োজন। কোন কোন ক্ষেত্রে পিটুইটারি ও থ্যালামাসের হরমোনগুলো পরিমাপ করার প্রয়োজন হয়। মাথার এমআরআই করেও অনেক সময় পিটুইটারি বা থ্যালামাসের অবস্থা জানার চেষ্টা করা হয়।
চিকিৎসা:
অ্যাড্রেনাল ক্রাইসিস একটি জরুরী স্বাস্থ্য অবস্থা। এটিকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করতে হবে। অনেক সময় রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয় (ওঈট ঝঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ)।
যাদের শারীরিক অবস্থা অতটা মারাত্মক নয়, তাদেরকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা করা যেতে পারে। যেহেতু রোগটি হয়েছে গøুকোকর্টিকয়েড এর ঘাটতির কারণে, সেহেতু গøুকোকর্টিকয়েড সরবরাহ করাই চিকিৎসার প্রধান পদ্ধতি। শুরুতে গøুকোকর্টিকয়েড ইনজেকশন হিসেবে দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এটিকে মুখে খাবার ট্যাবলেট হিসেবে আজীবন চালিয়ে যেতে হয়। রোগীদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর পর চিকিৎসকের কাছে ফলো-আপে আসতে হবে। অনেক রোগী শারীরিক অবস্থা ভালো থাকায় ফলো-আপের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, কিন্তু এটি তার জন্য খুব মারাত্মক হতে পারে।
সতর্কতা:
অ্যাড্রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সির রোগীকে সাধারণত একটি কার্ড দেওয়া হয়, যাতে তার রোগ জরুরী স্বাস্থ্য সমস্যায় করণীয় বিশেষ প্রয়োজনে কর্টিসল ইনজেকশন দেওয়া ইত্যাদি তথ্য সন্নিবেশিত থাকে। রোগীর নিজের ও পরবর্তীতে যে চিকিৎসক দেখবেন, তার জন্য এ তথ্যগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দেশে এসব রোগীকে কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত তথ্য বা ডাটায় সংযুক্ত করা থাকে যা যে কোন জায়গায় এ রোগীটি চিকিৎসা নিতে গেলে সহায়ক হয়।

ডাঃ শাহজাদা সেলিম
সহকারী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
কমফোর্ট ডক্টর’স চেম্বার
১৬৫-১৬৬, গ্রীনরোড, ঢাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন